মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২ ডিসেম্বর : প্রতীক বরাদ্দ ১৪ ডিসেম্বর
স্টাফ রিপোর্টার: রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য গত রোববারই কিছু সময় অপেক্ষা করার কথা বলেছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই গতকাল সন্ধ্যার পর নির্বাচনী তফশিল ঘোষনা করলেন তিনি।
সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের মাধ্যমে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় সিইসি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৫ জানুয়ারি রোববার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। যদিও এ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির অংশগ্রহণ অনিশ্চিত, তবু ‘আনন্দঘন পরিবেশে’ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে সিইসি আশা প্রকাশ করেছেন। তবে তিনি এ-ও বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী ২৪ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
মূলত প্রতীক বরাদ্দের দিন থেকে নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। সে হিসেবে প্রার্থীরা প্রচারণার সময় পাবেন মাত্র ২১ দিন। আর তফশিল ঘোষণার দিন থেকে ভোট গ্রহণের দিন পর্যন্ত নির্বাচন সময় হচ্ছে মাত্র ৪২ দিন। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪৭ দিন সময় দিয়ে তফশিল ঘোষণা করেছিলো কমিশন। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ভিডিপি, আনসার, পুলিশ, ৱ্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ড বাহিনীর সাথে সশস্ত্র বাহিনীকেও মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
এদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি (এ), জাতীয় পার্টি (জেপি)সহ মহাজোটের শরীক দলগুলো তফশিলকে স্বাগত জানিয়েছে। অন্যদিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট ও সমমনা দল তফশিল প্রত্যাখ্যান করেছে। অন্য দলগুলো মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে নানা জল্পনা চলছিলো। নির্বাচন কমিশন থেকেও এ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন ভাষ্য পাওয়া গিয়েছিলো। গত রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতার অপেক্ষায় আছে। কিন্তু একদিনের মাথায় দৃশ্যপট পাল্টে যায়। এমনকি কমিশনের খসড়া তফশিলে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৬ ডিসেম্বর রাখা হলেও পরে তা ২ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এর আগে দিনভর বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন। ওই বৈঠকে সিইসির ভাষণ অনুমোদন করা হয়। বৈঠকের পরই সরকার নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালককে ডেকে পাঠানো হয়। তাদের সাথে সচিবের বৈঠকের পর বিকেল সোয়া ৩টায় সিইসির কক্ষেই তফশিল ঘোষণা সংক্রান্ত ভাষণ রেকর্ড করা হয়। এ সময়ে বেসরকারি গণমাধ্যমকে ভাষণ প্রচারের জন্য ডাকা হয়নি। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার অফিস কক্ষের বাইরে এসে সাংবাদিকদের জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তিনি নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করবেন। শেরেবাংলা নগরে ৩০ মিনিটের ওই ভাষণ রেকর্ড করার পর সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে কার্যালয় থেকে বের হন কাজী রকিব। এ সময় তিনি আবারো সাংবাদিকদের বলেন, সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন ভাষণে। দু দলের মধ্যে সমঝোতা হলে মোস্ট ওয়েলকাম!
নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় জামায়াতে ইসলামী বাদে ৪০টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে। এবারের নির্বাচনে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আর সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসাবে থাকছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বা সহকারী কমিশনার (ভূমি)-কেও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের দায়িত্ব বণ্টন করে দেবেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। ৩০০ সংসদীয় আসনের জন্য এবার ৬৬ জনকে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ৫৭৭ জনকে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ জন রয়েছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি)। এর আগে কখনো কোনো সহকারী কমিশনার (ভূমি)-কে এ ধরনের দায়িত্ব দেয়া হয়নি।
নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে সব পরীক্ষা সম্পন্নের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি অবহিত করার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়কে গতকালই চিঠি দিয়েছে কমিশন। তফশিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে নির্বাচন কমিশন কার্যালয় এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়। যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে ওই এলাকায় তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয় বলে ৱ্যাব ও পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ৯ কোটি ১৯ লাখ ৬৬ হাজার ২৯০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪ কোটি ৬১ লাখ ২৩ হাজার ৩১৮ জন। নারী ভোটার ৪ কোটি ৫৮ লাখ ৪২ হাজার ৯৭২ জন। ভোট কেন্দ্র ৩৭ হাজার ৭১১টি। ভোটকক্ষ ১ লাখ ৮৯ হাজার ৫৩টি। ৬ লাখ ৬৫ হাজার ৩৫৯ জনকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী আগামী বছরের ২৪ জানুয়ারির মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা ছিলো।