স্যুট-বুট পরা প্রতারক হাতে মোমবাতি ধরিয়ে দিয়ে খুলে নিলো মধ্যবয়সী নারীর কানের দুল
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে অভিনব কৌশলে এক মহিলার কান থেকে সোনার এক জোড়া দুল খুলে নিয়ে সটকেছে স্যুটপরা এক প্রতারক। গতকাল রোববার সকাল ১০টার দিকে চিকিৎসকেরা যখন হাসপাতালে ভর্তি রোগী দেখতে শুরু করেন, তখনই ভর্তি রোগীর এক মহিলা আত্মীয়ের সাথে প্রতারণা করে ভদ্রবেশে থাকা প্রতারক। এছাড়া রোগী সেজে গতকালই এক রোগীর নিকটজনের নগদ ৪ হাজার টাকাসহ মোবাইলফোন চুরি করে সটকেছে তিন যুবক।
হাসপাতালে প্রতারণা ও চুরির খবর পাওয়ার পর আন্দোলনরত ছাত্রসমাজ হাসপাতালে হাজির হয়ে চোর প্রতারকসহ দালালমুক্ত করতে তৎপর হয়ে ওঠে। নেতৃবৃন্দ সিভিল সার্জনের সাথেও সাক্ষাত করে প্রতিকার দাবি করেন। সিভিল সার্জন অবশ্য বলেছেন, আমার কাছে কেউ লিখিতভাবে কোনো অভিযোগ পেশ না করলে আমি প্রতিকারের পদক্ষেপ নেবো কিসের ভিত্তিতে? এ মন্তব্যে ছাত্রসমাজ ব্যানারে আন্দোলনরত ছাত্ররা অবশ্য ক্ষুব্ধ হন।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলাধীন দক্ষিণ গোবিন্দপুর গ্রামের বাদশা মণ্ডলের ছেলে সুজন বিষপান করলে গতপরশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন সুজনকে দেখতে আসেন তার খালা চুয়াডাঙ্গা পদ্মবিলার সার্জিনা খাতুন ওরফে সাজেনা। তিনি আনছার আলীর স্ত্রী। গতকাল রোববার সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালের অভ্যন্তরে চিকিৎসকদের চিকিৎসাপ্রদান শুরু হলে সাজেনা খাতুনও অন্যদের মতো হাসপাতালের বহির্বিভাগে অবস্থান নেন। এ সময় স্যুট-বুট পরা মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি সাজেনা খাতুনের সাথে খাতির জমায়। সাজেনা খাতুন তার ভাগ্নের বিষপানের কথা জানান। রোগী সুস্থ হয়ে যাবে বলে ভদ্রলোকবেশে থাকা প্রতারক পাশে ডেকে নিয়ে হাতে টিসুযুক্ত মোমবাতি ধরিয়ে দিয়ে চোখ বুজে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতে বলে। সাজেনা খাতুন মোমবাতি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে প্রতারক দুটি কানের দুল খুলে নেয়। দুল খুলে নিয়ে সটকে পড়লে সাজেনা খাতুন চোখ খুলে যখন দেখে লোকটা আর নেই, তখনই তিনি সংজ্ঞাহীন হয়ে ঢলে পড়েন। পাশে থাকা লোকজন উদ্ধার করে। ঝোঁক সামলে সাজেনা খাতুন প্রতারিত হওয়ার কাহিনী খুলে বলেন। কেউ কেউ স্যুটেবুটে লোকটাকে খুঁজতে শুরু করলেও আর হাদিস মেলেনি।
সুজন বিষপান করেছে পছন্দ হওয়া পাত্রীর সাথে বিয়ে না হওয়ার কারণে। পরিবারেরই এক সদস্য বলেছেন, গত শুক্রবার বিয়ের আসরে দেনমোহর নিয়ে ঝামেলা হয়। বিয়ে ভেঙে গেলে বাড়ি ফিরে সুজন তার সাথে থাকা লোকজনকে দোষারোপ করে। দেনমোহর নিয়ে বিরোধে পছন্দের পাত্রীর সাথে বিয়ে না হওয়ার অভিমানে সে বিষপান করলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। আর তাকে দেখতে হাসপাতালে এসে প্রতারকের খপ্পরে পড়ে সোনার দুল হারালেন খালা সাজেনা।
অপরদিকে গতকালই দুপুরে হাসপাতালে তিন যুবক রোগী সেজে অপর এক রোগীর মেয়ের মোবাইলফোনসহ ব্যাগে থাকা ৪ হাজার টাকা চুরি করে সটকে পড়েছে। চুরির বিস্তারিত বর্ণনা দিতে গিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের শ্রীকোল গ্রামের মৃত ইছাহক বিশ্বাসের ছেলে মনির হোসেন (৭০) বুকে ব্যথা নিয়ে গতকাল হাসপাতালে ভর্তি হন। খবর পেয়ে মেয়ে রেকসোনা পিতাকে দেখতে হাসপাতালে আসেন। কাছে ছিলো ৪০ হাজার টাকা ও একটি মোবাইলফোন। দুপুরে তিন যুবক রোগী সেজে হাসপাতালের ওয়ার্ডে প্রবেশ করে। রেকসোনা খাতুন বাথরুমে গেলে বাইরে টাকার ব্যাগ ও মোবাইলফোনটি রেখে যান। রোগী সাজা ওই যুবকদেরই ওগুলো দেখে রাখার অনুরোধ জানান। বাথরুম থেকে ফিরে দেখেন তিন যুবক নেই, টাকার ব্যাগ ও মোবাইলফোনও নেই। খোঁজাখুঁজি করেও তিন প্রতারক চোরের আর হদিস মেলেনি।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল চোর ও দালালমুক্ত করাসহ বিভিন্ন দাবিতে ছাত্রসমাজের ব্যানারে আন্দোলন শুরু হলে পরিবেশ সুন্দর হতে শুরু করে। দালালদের উৎপাত যেমন হ্রাস পায়, তেমনই ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদেরও অসময়ে চিকিৎসকদের সাথে সাক্ষাত করতে দেখা যায় না। এরই মাঝে আবার চুরি, আবার প্রতারণা। এ খবর পাওয়ার পর ছাত্রসমাজ ব্যানারে আন্দোলনকারীরা হাসপাতালে হাজির হন। তারা চোর পাকড়াওয়ের জোর দাবি জানিয়ে দালাল মুক্তসহ হাসপাতালের অনিয়ম দূর করার দাবি জোরদার করে তোলে। আন্দোলনকারীরা হাসপাতাল পরিদর্শনের পর সিভিল সার্জন ডা. খন্দাকার মিজানুর রহমানের সাথেও সাক্ষাত করেন। তারা বলেন, একের পর এক চুরি হলেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না কেন? কেনই বা মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের উৎপাত বন্ধে স্থায়ী সমাধানের মতো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না? এসব প্রশ্নের জবাবে সিভিল সার্জন সাফ জানিয়ে দেন, আমার কাছে কেউ লিখিতভাবে কোনো অভিযোগ পেশ করেনি, কেউ প্রতিকার প্রার্থনা করেনি। অভিযোগ না পেলে পদক্ষেপ নেবো কিসের ভিত্তিতে?
ছাত্রসমাজ কয়েকদিনের চলমান আন্দোলনের প্রসঙ্গ তুলে ধরলেও সিভিল সার্জনের তরফে তেমন সদুত্তর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন ছাত্রসমাজ নেতৃবৃন্দ। আজ সোমবার সকাল ১০টায় শোভাযাত্রাসহকারে ছাত্রসমাজের ব্যানারে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জনের নিকট স্মারকলিপি পেশ কর্মসূচি পালন করা হবে। গতপরশু এ কর্মসূচি ঘোষণা দেয়া হয়।