পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস মানে শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর কলঙ্কের কালিমাই শুধু লেপন নয়, শিক্ষা ব্যবস্থাকে গুঁড়িয়ে দেয়া। জেএসসি পরীক্ষার পর প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে, হচ্ছে। একের পর এক প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে, অভিভাবকদের অধিকাংশের কাছে বিষয়টি পরিষ্কার হলেও শিক্ষা বিভাগ তদন্ত কমিটি গঠন করেই যেন খালাস। পত্রিকায় যখন তদন্ত কমিটি গঠনের খবর প্রকাশ পাচ্ছে, তখনও ফাঁস হওয়া প্রশ্ন মোবাইলফোনে, হাতে হাতে ছড়াছে চতুর্দিক। প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার কারণে সচেতনমহল যখন উদ্বিগ্ন তখনও বন্ধ হচ্ছে না দেখে অনেকে সংশ্লিষ্ট বিভাগকেই দোষারোপ করতে শুরু করেছে।
প্রশ্নপত্র ফাঁস হবে আর তা মেনে নিয়ে নীরবে থাকতে হবে, এ আবার কেমনতর কথা? বর্তমান সরকার শিক্ষা সম্প্রসারণে শুধু বিনামূল্যে বই বিতরণই করেনি, নানামুখি কর্মসূচি হাতে নিয়ে তা বাস্তবায়নও করেছে। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার মাধ্যমে শিশু শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতার পরিবেশ গড়ে তোলা হয়েছে। জেএসসি পরীক্ষার মাধ্যমেও। পরীক্ষা শুধু মেধা যাচাই নয়, শিক্ষার্থীদের যোগ্য করে তোলার জন্যই নেয়া হয়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেকোনো কারণেই যদি পরীক্ষার আগে প্রশ্ন হাতে পাওয়া যাবে বলে বিশ্বাস জন্মায়, আর ভালো প্রস্তুতি নিয়েও যদি প্রশ্ন ফাঁসের কারণে অন্যদের তুলনায় খারাপ ফল হয় তা হলে পরীক্ষার গুরুত্ব কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?
অনেক ভালো কাজও দু একটি খারাপ কাজের কারণে আড়াল হয়ে যায়। বর্তমান সরকারের মাধ্যমিক এবং প্রাথমিক গণশিক্ষার ভালো কাজগুলো যে এ প্রশ্নপত্র ফাঁসের আড়ালে ম্লান হয়ে যাচ্ছে তা বলাই বাহুল্য। দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা গ্রহণ যেমন ক্ষতির কারণ, তেমনই প্রশ্নপত্র অব্যাহতভাবে ফাঁস হলেও হোতাদের ধরে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থায় গড়িমশি আরো বেশি ক্ষতিকর। প্রশ্নপত্র যে ফাঁস হয়েছে তা সচেতন অভিভাবকদের অজানা নয়, শুধু চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর বা ঝিনাইদহে নয়, ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র ছড়িয়েছে সারাদেশে। মোবাইলফোনের বদৌলতে দেশ জুড়ে ছড়াতে খুব বেশি সময় লাগেনি।
চলমান প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার গতকাল ছিলো ইংরেজি পরীক্ষা। গত কয়েকদিন ধরে যে প্রশ্ন ছড়িয়েছে, সেই প্রশ্নেই গতকাল পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। যদিও ইংরেজি পরীক্ষার প্রশ্ন অনেকটাই কঠিন হয়েছে বলে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের অনেকেরই অভিমত। শিশু শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন জটিলের চেয়ে সরল হওয়াই শ্রেয়। কঠিন প্রশ্ন প্রণয়ন করে তা ফাঁস করার কোনো মানে হয় না। যদিও বিভাগীয়ভাবে প্রশ্ন ফাঁস করা হয়নি, হয় না বলেই বিশ্বাস। শিক্ষা ব্যবস্থা এভাবে ধ্বংস মেনে নেয়া যায় না। প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের পাশাপাশি ভবিষ্যতে প্রশ্নপত্র ফাঁস হবে না তা নিশ্চিত করা জরুরি।