মাজেদুল হক মানিক: কার্যাদেশ প্রদানের প্রায় সাত বছর পার হতে চলেছে তবুও শেষ হয়নি মেহেরপুর গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৫০ শয্যায় উন্নীত ভবন নির্মাণকাজ। পুরোনো ভবনের বেশিরভাগ অংশ অকেজো হয়ে পড়েছে। জরাজীর্ণ এ ভবনেই চলছে হাসপাতালের যাবতীয় কাজ। ফলে চিকিৎসাসেবা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।
১৯৬৩ সালে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স তথা গাংনী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা লাভ করে। রোগীদের চাহিদা অনুযায়ী ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের প্রকল্প ২০০৬ সালের শুরুতে অনুমোদন করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। হাসপাতাল ভবন সম্প্রসারণ (১৯ শয্যার ভবন) ও ডক্টরস কোয়ার্টার নির্মাণের জন্য ব্যয় নির্ধারণ করা হয় প্রায় ৭ কোটি টাকা। একই বছরের মাঝামাঝি সময়ে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (এইচইডি) যশোর কার্যালয় থেকে টেন্ডার প্রদান করা হয়। একই বছরের ২৬ ডিসেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢাকার মহাম্মদপুর ডি-২৯ জাকির হোসেন সড়কের মেসার্স ওয়াহেদ ট্রেডার্স কার্যাদেশ পায়। ২০০৭ সালের ৭ জুলাই প্রাক্কলন শুরু থেকে ১৮ মাসের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি হয় স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের। কিন্তু চুক্তি ভঙ্গ করে ২০১০ সালের শুরুর দিকে কাজ বন্ধ করে মালামাল নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন রাতের আঁধারে পালিয়ে যায়। দুটি ভবনের ভিত্তি ও কিছু পিলার নির্মাণ ছাড়া নির্মাণকাজের বেশিরভাগই সম্পন্ন হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৪৩ ভাগ কাজ সম্পন্ন করেছে মর্মে কাগজপত্র দাখিল করে ২০১০ সালেই বিল উত্তোলন করে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়দের অভিযোগ, দৃশ্যমান ক্ষেত্রে ২০/২৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে কিন্তু কীভাবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ৪৩ ভাগ কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে বিল উত্তোলন করেছে তার জবাব মেলেনি এইচইডি থেকে। এইচইডি চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলের সহকারী প্রকৌশলী মাহমুদ হোসেন বলেছেন, ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে বিল উত্তোলন করে। এইচইডি’র কয়েকজন কর্মকর্তা দুদকের মামলায় পড়েন। পরে অবশ্য মামলা থেকে তারা রেহাই পেয়েছেন। তবে সময়মতো কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ চুক্তি বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে ভবননির্মাণ হওয়ার আগেই ৫০ শয্যা হাসপাতালের প্রয়োজনীয় চিকিৎসক পদ সৃষ্টি করেছে কর্তৃপক্ষ। ৩১ শয্যার হাসপাতালে একজন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, কনসালটেন্ট ৪ জন, আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ১ জন, মেডিকেল অফিসার ২ জন এবং সহকারী ডেন্টাল সার্জনের ১টি পদ ছিলো। এ পদগুলো ছাড়াও ৫০ শয্যার জন্য এখন চিকিৎসক পদ বেড়েছে কনসালটেন্ট ৫টি, সহকারী সার্জন ৬টি ও ডেন্টাল সার্জন ১টি। এর মধ্যে সহকারী কনসালটেন্ট (অর্থপেডিক) ও সহকারী সার্জন পদে একজন যোগদান করেছেন। ভবন সুবিধা না থাকায় শুন্য পদে কোনো চিকিৎসক যোগ দিচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বিধান চন্দ্র ঘোষ। তিনি আরো জানিয়েছেন, প্রতিদিনই ৩শ থেকে ৪শ রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেয়। আর ভর্তি থাকে ৭০-৯০ জন রোগী। ভবন সুবিধা না থাকায় রোগীরা যেমনি কষ্ট শিকার করছেন তেমনি চিকিৎসক সেবিকারা খুপরি ঘরের মধ্যে বসে কাজ করছেন। ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম। পুরোনো ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরায় ভবন ধস হয়ে মৃত্যুঝুঁকির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভবন নির্মাণকাজের বর্তমান কী অবস্থা তা জানতে চাইলে এইচইডি চুয়াডাঙ্গা কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মাহমুদ হোসেন আশার কথা শুনিয়ে বললেন, অনেক জটিলতা কাটিয়ে ভবনের বাকি কাজ সম্পন্ন করার জন্য নতুন করে নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা। দু-এক সপ্তার মধ্যে নতুন বাজেট স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে জমা দেয়া হবে। পুনঃটেন্ডারের মাধ্যমে চলতি বছরের মধ্যেই কাজ শুরুর চিন্তা করছে কর্তৃপক্ষ। একই সাথে পুরোনো ভবন সংস্কারের কথা ভাবছে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।