ঝিনাইদহের ৪০৪টি গ্রামে এখনও বিদ্যুত পৌঁছায়নি

পল্লবিদ্যু সমিতির গ্রাহকরা নানাভাবে হয়রানির শিকার : ২০০৯ সালে আবেদন করেও মেলেনি সংযোগ

 

ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহ পল্লী বিদ্যুত সমিতির গ্রাহকরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বার বার আবেদন করেও গ্রাহকরা বিদ্যুতসংযোগ পাচ্ছেন না। জেলার ৬টি উপজেলায় ১০ হাজার ৭২০ গ্রাহকের আবেদন ফাইলবন্দি রয়েছে।

সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালের ৯ জানুয়ারি ঝিনাইদহ পল্লী বিদ্যুত সমিতি আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যুতায়ন শুরু করে। জেলার ৬টি উপজেলায় ৬৭টি ইউনিয়নে মোট গ্রামের সংখ্যা ১ হাজার ২৬৫টি। এর মধ্যে ৮৬১টি গ্রামে বিদ্যুতায়ন করা হলেও বাকি ৪০৪টি গ্রামে এখনও বিদ্যুত পৌঁছায়নি। গ্রাহকরা অভিযোগ করেছেন, ২০০৯ সালে মিটারের জন্য আবেদন করে আজও পর্যন্ত বিদ্যুত সংযোগ পাওয়া যায়নি। দিনের পর দিন তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। টাকা ছাড়া পল্লী বিদ্যুত সমিতিতে কোনো কাজ হয় না। যারা টাকা দিতে পারছেন গোপনে তাদের বিদ্যুত সংযোগ দেয়া হচ্ছে। সংযোগ না পাওয়ার কারণে কোনো গ্রাহক কর্মকর্তাদের ওপর চড়াও হলে অফিস থেকে তাদের আবেদন গায়েব করে দেয়া হচ্ছে।

সদর উপজেলার নাথকুণ্ডু গ্রামের আফজাল খান, ওয়াড়িয়া গ্রামের সব্দুল হোসেন, ধোপাবিলার কামাল হোসেন জানান, তারা ২০০৯ সালে মিটারের জন্য আবেদন করে আজও সংযোগ পাননি। অফিসে গেলেই কর্মকর্তারা বলেন, ইলেকট্রিশিয়ানদের সাথে যোগাযোগ করেন লাইন পেয়ে যাবেন। কিন্তু পরে আর লাইন পাওয়া যায় না। ঝিনাইদহ পল্লী বিদ্যুত সমিতির গ্রাহক ও অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অভিযোগ করেছেন, ২০১২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রকৌশলী যুবরাজ চন্দ্রপাল জিএম হিসেবে ঝিনাইদহে যোগদান করার পর থেকে সমিতিতে নানা ধরনের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা চলছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন লাইনম্যান বলেন, গ্রামাঞ্চলে ত্রুটিপূর্ণ লাইন মেরামতের জন্য দুজন লাইনম্যান থাকার কথা। অথচ জিএম সাহেব তার নিজ ক্ষমতাবলে একজন লাইনম্যান ও একজন বিলিংম্যান দিয়ে থাকেন। এতে একজন লাইনম্যানের পক্ষে মেরামতের কাজ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। কারণ বিলিংম্যান তো আর ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ জানেন না। এতে করে দুজন লাইনম্যান যেখানে ১০টি কাজ করতে পারে সেখানে একজন লাইনম্যানের পক্ষে ২/৩টি কাজ করা ছাড়া কিছুই করার থাকে না। এতে করে কাজ পেন্ডিং পড়ে যাচ্ছে। এ কারণে গ্রাহকদের দিনের পর দিন ঘুরতে হচ্ছে নতুন সংযোগের জন্য।

সূত্রটি আরো জানায়, অফিসের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) যুবরাজ চন্দ্রপাল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১১-২০১২ সেশনে ব্যবস্থাপনা বিভাগে সান্ধ্যকালীন এমবিএ কোর্সে পড়াশোনা করছেন। যার রোল নং-১৩০৭০৫০৭০৫। তিনি সব সময় অফিসে পড়ালেখায় ব্যস্ত থাকেন। এ সময় কোনো গ্রাহক তার সাথে দেখা করতে গেলে পিয়ন তাকে বাধা দিয়ে বলেন, এখন স্যারের সাথে দেখা করা যাবে না। তিনি প্রতি সপ্তায় শুক্র ও শনিবার ক্লাস করতে যান। শনিবার পৌনে ২টার দিকে তিনি অফিস থেকে বেরিয়ে পড়েন। গ্রাহকরা প্রয়োজনীয় কাজে তার সাথে দেখা করতে গেলে তিনি তাদের সাথে খারাপ আচরণ করে থাকেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এছাড়া তিনি মাঝে মাঝে সমিতির জিপ নিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করতে যান। এতে পল্লী বিদ্যুত সমিতি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, যশোর জেলখানা রোডে টিচার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে জিএম সাহেবের স্ত্রী এম.এড ভর্তি হয়েছেন। তিনিও পল্লী বিদ্যুত সমিতির জিপ ব্যবহার করে থাকেন।

জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় ১০ এমভিএ  নতুন সাবস্টেশন নির্মাণের জন্য ১ একর ২১ শতাংশ জমি কেনা হয়েছে। জমি কেনার জন্য আরইবি থেকে অনুদান দেয়া হয়েছে ৬১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অভিযোগ উঠেছে জিএম যুবরাজ চন্দ্রপাল অফিসের লাইনম্যান শহিদুল ইসলামের মাধ্যমে জমি কেনার সময় তার সাথে যোগসাজস করে কয়েক লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। জমির মালিকের সাথে কম টাকায় চুক্তি করে দলিলে বেশি টাকা লেখানো হয়েছে।

অফিসের দেয়া লিখিত তথ্যসূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৩ জুন পর্যন্ত মিটারের জন্য জেলার ৬টি উপজেলায় মোট ১০ হাজার ৭২০টি আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে আবাসিক ৯ হাজার ২৪৩টি, বাণিজ্যিক ২১২টি, সেচ ৯৮৯টি, শিল্প ১৭৫টি, ও  সিআই ১০২টি। গ্রাহকদের বিদ্যুত সংযোগ না দেয়ার ব্যাপারে জিএম প্রকৌশলী যুবরাজ চন্দ্রপালের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এজিএম এমএস জবাব দেবেন। এখন এসব কথা উঠছে কেন। দেশের অনেক জায়গায়তো সংযোগ হচ্ছে না। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ ভর্তির ব্যাপারে তিনি জানান, এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।

এজিএম এমএস মোজাম্মেল হক জানান, মালামালের অভাব, ফিডার ও ট্রান্সফর্মারের ওভারলোডের কারণে সংযোগ দেয়া হচ্ছে না। সংযোগ বন্ধ নেই; তবে যে ফিডার ও ট্রান্সফর্মারে ওভারলোড নেই সেক্ষেত্রে কিছু কিছু সংযোগ দেয়া হচ্ছে। নতুন আবেদনের ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, ২০১২-২০১৩ অর্থ বছরে জেলায় ১৫৩.৫৮৬ কিলোমিটার নতুন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ৮ হাজার ৭০ জন গ্রাহক বিদ্যুত সুবিধার আওতায় আসবে। সবমিলিয়ে ঝিনাইদহ পল্লী বিদ্যুত সমিতির অসৎ কর্মকর্তাদের অপসারণ দাবি করে বিদ্যুত গ্রাহকরা দ্রুত মিটারের সংযোগ পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।