স্টাফ রিপোর্টার: আজ থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টা দেশের রাজনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ সময়ের মধ্যেই নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। আর তফশিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। পর্যবেক্ষকদের মতে, পরিস্থিতি উত্তপ্ত হবে যা বিস্ফোরণোম্মুখ হওয়াও অস্বাভাবিক নয়। আর এর সূত্র ধরে দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে সংঘাত ও সংঘর্ষ। কারণ বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সমঝোতার কোনো উদ্যোগই এ পর্যন্ত কাজে লাগেনি। বরং দু’দল ও জোটের কৌশলের লড়াই এখন প্রায় শেষ প্রান্তে। তাই চূড়ান্ত অবস্থান স্পষ্ট করার সময় এসেছে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দল জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে নিয়ে এক ধরনের মেরুকরণ স্পষ্ট করেছে সরকার। কিন্তু বিএনপিকে নির্বাচনে নেয়ার কৌশল তারা এ পর্যন্ত কার্যকর করতে পারেনি। সব মিলিয়ে সংলাপ, নির্বাচনের দিনক্ষণ ও রাজনৈতিক মেরুকরণ নিয়ে এতদিন নানা নাটক ও জল্পনা-কল্পনা চললেও তফসিল কাছাকাছি চলে আসায় চূড়ান্ত নিষ্পত্তির সময় হয়েছে। আর এ কারণেই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠতে শুরু করেছে। বিরোধী দলগুলো ঘোষণা দিয়েছে, তারা কেবল নির্বাচন বর্জন নয়, প্রতিহতও করবে। অপরদিকে, প্রশাসনিকভাবে বিরোধী জোটকে মোকাবেলার পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবেও আওয়ামী লীগ সব কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে। যেকোনো প্রকারে হোক- তারা একটি নির্বাচন করতে চায়। এজন্য সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিতেও তারা পিছপা হচ্ছে না। তবে শনিবার পর্যন্ত সরকারি দলের অবস্থান হল নির্বাচনের জন্য তারা দু ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। একতরফা হলে প্রার্থী তালিকা একরকম, আর বিএনপির অংশগ্রহণে প্রতিযোগিতামূলক হলে আরেক ধরনের প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ফলে তফশিল ঘোষণার সঙ্গে সরকারি ও বিরোধী উভয় দলের চূড়ান্ত অবস্থান স্পষ্ট হবে। স্পষ্ট হবে দেশ কোনদিকে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, সরকার ও বিরোধী উভয় শিবিরে নেতাদের বেশ বড় একটি অংশের শেষ পর্যন্ত আশাবাদ ছিল হয় তো একটি পথ বেরিয়ে আসবে। এজন্য দুই দলের প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন নেতা শীর্ষ পর্যায়ে রাজি করানোরও চেষ্টা করেন। এতে কিছু সময়ের জন্য সংলাপের এক ধরনের ‘আবহ’ তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত ফলোদয় হয়নি। এমনকি দুই নেত্রী দূরে থাক, দুই মহাসচিবকেও সংলাপে বসানো যায়নি। তা সত্ত্বেও দুই জোটের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন, দেশের সুশীল সমাজ, বাংলাদেশস্থ কূটনীতিক, এমনকি জাতিসংঘ ও প্রভাবশালী দেশগুলোর মন্ত্রী-কূটনীতিকরাও সংলাপের জন্য চেষ্টা করেছেন। নানা শংকার কথা বলেছেন তারা। এতে সচেতন মহলের ধারণা হয়েছে, নানামুখী চাপে হয় তো শেষ পর্যন্ত দুই নেত্রী রাজি হবেন। কিন্তু এসব নিয়ে সব জল্পনা-কল্পনা ব্যর্থ হতে চলেছে বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহলসহ সচেতন জনগোষ্ঠীর মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ছে।
একতরফা নির্বাচন হলে দেশের পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা বলা যায় না। তাদের মতে, ভয়াবহ সংঘাত তো হবেই, পাশাপাশি গণতন্ত্র বিপন্ন হবে, এমনকি রাজনৈতিক দলগুলোর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে তারা আশংকা ব্যক্ত করেছেন। এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলীয় নেতারা দেশের সব পেশার মানুষকে আন্দোলনে শরিক হতে রাজপথে নামার আহ্বান জানিয়েছেন।
সূত্রমতে, তফসিল ঘোষণার পরই বিরোধী দলগুলোর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করার চূড়ান্ত অবস্থান স্পষ্ট হবে। পাশাপাশি তিরোহিত হবে সংলাপের সব সম্ভাবনা। সব দলের রাজনৈতিক মেরুকরণ ও অবস্থানও স্পষ্ট হবে। স্পষ্ট হবে সরকারের অবস্থানও। বিশেষ করে সরকার কতটুকু হার্ডলাইনে যাবে, বিরোধীদলীয় নেতাদের ব্যাপক ধরপাকড় বা গ্রেফতার-নির্যাতনের মাধ্যমে নির্বাচন কিনা এসব প্রশ্নের মীমাংসাও তফসিল ঘোষণার পরপরই অনুষ্ঠিত হবে। যদিও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতিমধ্যে ব্যাপক রণপ্রস্তুতি নিয়েছে। এদিকে বিরোধী দলও আন্দোলনের কৌশল বিস্তৃত করছে। ঢাকার পাশাপাশি আন্দোলনকে তারা প্রতিটি সংসদীয় আসনে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হরতাল ও অবরোধসহ টানা কর্মসূচি দেবে বিরোধী দল। সব মিলিয়ে তফসিলের দিকে এখন সবার নজর।