কেরুজ চিনিকলে ২০১৩-১৪ আখ মাড়াই মরসুম শুরু হচ্ছে ৬ ডিসেম্বর

জোরেসোরে চলছে ধোয়া-মুছা ও রং-চুনের কাজ : বয়লারে স্লোফায়ারিং

 

হারুন রাজু: কেরুজ চিনিকলের ২০১৩-১৪ আখ মাড়াই মরসুমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে আগামী ৬ ডিসেম্বর। চিনিকল কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত দিন পরিবর্তন করে করপোরেশন কর্তৃপক্ষ এদিন বেধে দিয়েছে। মিল চালুর সকল প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। জোরেসোরে চলছে ধোয়া-মুছা ও রং-চুনের কাজ। বয়লারের স্লো-ফায়ারিং সম্পন্ন করা হয়েছে। ২০১৩-১৪ আখ মাড়াই মরসুমে চিনিকল কর্তৃপক্ষ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সর্বাত্মক চেষ্টা নিয়ে শুরু করেছে কার্যক্রম। তবে শেষ পর্যন্ত তাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পৌঁছুতে পারবে কি-না তা নিয়ে রয়েছে আশঙ্কা।

সূত্র বলেছে, ২০১৩-১৪ আখ মাড়াই মরসুমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে আগামী ৬ ডিসেম্বর। ২৯ নভেম্বর মিল চালু করার লক্ষ্যে গত ২৩ অক্টোবর কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের কাছে চিঠি দেয়। করপোরেশন কর্তৃপক্ষ তা সংশোধন করে মিল চালুর নির্ধারিত দিন ঠিক করে দিয়েছে আগামী ৬ ডিসেম্বর। এ মরসুমে ১ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বেধে দেয় চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। সে হিসেব অনুযায়ী এ মরসুমে ৯২ মাড়াই দিবসে কেরুজ চিনিকলে ৮ হাজার ২শ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন করতে হবে। চিনি আহরণের গড় হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫০। তবে কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষের হিসেবমতে কৃষক ও চিনিকলের নিজস্ব ৯ হাজার ৫১০ একর জমিতে আখ রয়েছে। এর মধ্যে চিনিকলের নিজস্ব জমির পরিমাণ ১ হাজার ১৮২ একর। এতে বীজ আখ বাদে মিলে আখ মাড়াই করা হতে পারে ৯৭ হাজার মেট্রিক টন। যা ৯০ দিবসে মাড়াই করে চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ হাজার ২৭৫ মেট্রিক টন। চিনি আহরণের গড় হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫০।

মিল উদ্বোধনের প্রস্তুতি নিয়েই চিনি কারখানায় জোরেসোরে চলছে, যন্ত্রাংশ মেরামত, ঝালাই, ধুয়া-মুছা ও রং-চুনের কাজ। এরই মধ্যে গত পরশু শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে মিলের বয়লারে স্লো-ফায়ারিং কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। এ সময় মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুদর্শন মল্লিক, মহাব্যবস্থাপক (কারখানা) ইউসুফ আলী শিকদারসহ বিভিন্ন বিভাগের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। মিলের উদ্বোধন সামনে হওয়ায় কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দিন কাটছে মহাব্যস্ততায়।

এদিকে এ মরসুমের উৎপাদিত চিনি রাখা নিয়ে মহাচিন্তায় রয়েছে মিল কর্তৃপক্ষ। গত পরপর তিন মাড়াই মরসুমের উৎপাদিত চিনি অবিক্রিত ছিলো। অল্পকিছু চিনি বিক্রি হলেও এখনো প্রচুর পরিমাণ চিনি রয়েছে অবিক্রিত। মিলের ৫টি গোডাউনে এখনো অবিক্রিত চিনির পরিমাণ ৬ হাজার ৯১৫ দশমিক ০৫ মেট্রিক টন। যা বর্তমান বাজার মূল্য ৩৪ কোটি ৫৭ লাখ ৫২ হাজার ৫শ টাকা। মিলের ৫টি গোডউন চিনিতে কানায় কানায় ভর্তি থাকায় বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে শুরু করেছে মিল কর্তৃপক্ষ। বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হবে। ২০১৩-১৪ আখ মাড়াই মরসুম শুরু হওয়ার আগে যদি গত তিন মরসুমের উৎপাদিত চিনি বিক্রি না করা যায় সেক্ষেত্রেই বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে চিনি রাখার স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে বেশ কয়েকটি স্থান।

চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুদর্শন মল্লিক বলেছেন, আগামী ২০১৪-১৫ আখ মাড়াই মরসুমের আগাম প্রস্তুতির লক্ষ্যে গ্রহণ করা হচ্ছে নানামুখি কার্যক্রম। বেশি বেশি আখ রোপণের জন্য কৃষকদের করা হচ্ছে আগ্রহী। নিশ্চিত করা হচ্ছে আখচাষিদের সুযোগ সুবিধা। সেক্ষেত্রে মিলের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সকলকে নিষ্ঠা ও কর্মদক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। নিজ নিজ কাজে হতে হবে আন্তরিক। তাহলেই একদিকে যেমন আখচাষ বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে সরকারের মূল্যবান সম্পদ চিনি শিল্পকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।