ঘাটে ঘাটে টাকা বিলি করতে গিয়ে শিক্ষক ও তাদের অভিভাবকরা অতিষ্ঠ
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের চূড়ান্ত নিয়োগপ্রাপ্তদেরকে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগামী ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে নিয়োগ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এজন্য বেশ কিছু শর্তারোপ করা হয়েছে। এবার জেলায় ১১৯ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদরে ৩৪, আলমডাঙ্গায় ৪৪, দামুড়হুদায় ৩২ ও জীবননগরে ৯ জন।
এদিকে চাকরিতে যোগদানের আগে নিয়মানুযায়ী গতকাল বৃহস্পতিবার চাকরিপ্রাপ্তরা জেলার সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে স্বাস্থ্যসনদ সংগ্রহ করেছেন। এজন্য প্রত্যেককে ৩০০ টাকা করে গুনতে হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নতুন শিক্ষক জানান, চাকরি পাওয়ার আগে থেকেই যে হারে টাকা বের হচ্ছে যোগদানের আগ পর্যন্ত আর কতো জায়গায় যে টাকা দিতে হবে তার কোনো হিসেব নেই। শিক্ষকরা জানান, নিজেদের মেধার গুনে চাকরি পেলেও নানান কারণে রাজনৈতিক টাউট ও সিন্ডিকেটের সদস্যদেরকে কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। চাকরি নিয়োগ চূড়ান্ত হওয়ার পর স্বাস্থ্যসনদ নিতে টাকা গুনতে হচ্ছে। অথচ, এ সনদের জন্য কোনো টাকা নেয়ার বিধান নেই। এছাড়া, স্বাস্থ্যসনদ নেয়া শেষে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে যোগদানের অনুপতিপত্র নিতে গিয়ে আরো টাকা গুনতে হবে। তাছাড়া, যে বিদ্যালয়ে যোগদান করতে হবে, সেখানকার প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদেরকেউ মিষ্টি খাওয়ার নামে টাকা দিয়ে সন্তুষ্ট করতে হবে। এরপর যোগদানের পর পিটিআইতে ট্রেনিং করতে গিয়ে সেখানে শিক্ষক ও কর্মচারীদেরকে একইভাবে মিষ্টি খাওয়ানোর নামে টাকার শ্রাদ্ধ করতে হবে। এভাবে দফায় দফায় টাকা গুনতে গুনতে কারো কারো গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি এমনকি শেষ সম্বল ভিটে-মাটি পর্যন্ত বিক্রি হয়ে গেলেও সেদিকে কারো নজর নেই। অনেকে শেষ সম্বল বিক্রি করে চাকরির টাকা দিলেও নতুন নতুন দাবির কারণে এনজিও বা বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে চাহিদা মেটাচ্ছেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোকতার হোসেন সরকার গত ১৮ নভেম্বর এ নিয়োগ আদেশে স্বাক্ষর করেন। ২০ নভেম্বর নিয়োগপত্রগুলো চুয়াডাঙ্গার প্রধান ডাকঘর সংলগ্ন আরএমএসে বুক করা হয়। পরীক্ষার্থীরা বিষয়টি টের পেয়ে ওই ডাকঘর থেকেই তা সংগ্রহ করে নেন। ২১ নভেম্বর সকাল থেকেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর জন্য ভীড় জমায় সিভিল সার্জন কার্যালয়ে। নিয়োগের আদেশের শর্তানুযায়ী নিয়োগপ্রাপ্তদের দু বছর পর্যন্ত শিক্ষানবীশ সময় চলবে। তিন বছরের মধ্যে সিইনএড পরিপূর্ণ করতে হবে। পুলিশি তদন্তে কোনো চাকরিপ্রাপ্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য প্রদানের প্রমাণ মিললে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। চার হাজার ৯০০ টাকার স্কেলে শিক্ষকদের বেতনভাতা দেয়া হবে নয় হাজার ৭৪৫ টাকা। সিইনএড কোর্স সমাপ্তের পর বেতন হবে ১০ হাজার ৪৫০ টাকা।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১২ এপ্রিল শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় নয় হাজারেরও বেশি অংশগ্রহণ করেন। মৌখিক পরীক্ষায় অর্ধেকেরও বেশি বাদ পড়ে যায়। যার মধ্যে নিয়োগ পেয়েছেন এই ১১৯ জন।