শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের খেসারত জাতিকেই দিতে হয়

             প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় বেশ কয়েক বছর ধরে অনিয়ম হচ্ছে। গতবছর দুজনকে ধরে দণ্ডাদেশ দেয়া হয়। এবারও একাধিক চক্র চুয়াডাঙ্গাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় সক্রিয়। এরই মাঝে নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণের প্রস্তুতিসভায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক বলেছেন, কোনো প্রকার অনিয়ম মেনে নেয়া হবে না। কঠোর হাতে অনিয়ম দূর করা হবে। বোরকার আড়ালে কানে মাইক্রোফোন নিয়ে কারচুপি রোধে শুধু সতর্ক দৃষ্টিই রাখা হবে না, কোনো পরীক্ষার্থীই এবার কিছু দিয়ে কান আড়াল করে রাখতে পারবে না। ঘোষণা ইতিবাচক। এ পদক্ষেপে প্রকৃত মেধার অধিকারীরা স্বস্তি পেলেও অপতৎপরকারী সঙ্ঘবদ্ধ চক্রের মাঝে হতাশা তো ভর করবেই।

 

জাতির সার্বিক উন্নয়নে প্রাথমিক শিক্ষা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। শিশুশিক্ষা সম্প্রসারণে সরকার আন্তরিক, মানসম্পন্ন শিক্ষাদানে শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছ্বতার বিকল্প নেই। দেশ জুড়ে একই দিনে, একই সাথে নিয়োগ লিখিত পরীক্ষা নেয়া হয়। প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে দুশ্চিন্তা তো থাকেই, এ ছাড়া পরীক্ষা শুরুর সাথে সাথে কোনো এক কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্র কৌশলে বের করে দ্রুত ফটোকপি করিয়ে মূলকপিটি যথাস্থানে ফেরত দেয়া হয়। ছায়াকপি তথা ফটোকপি প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে সঙ্ঘবদ্ধচক্র কয়েকজনকে দিয়ে উত্তরপত্র তৈরি করে। এরপর মোবাইলফোনে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কেন্দ্রে থাকা পরীক্ষার্থীকে উত্তরগুলো জানিয়ে দেয়া হয়। ব্যাস। চাকরি পাক্কা। কারণ, লিখিত পরীক্ষায় এগিয়ে থাকে তারাই। মৌখিক পরীক্ষা তাদের জন্য হয়ে যায় অনেকটা অংশগ্রহণের মতো। মৌখিক পরীক্ষাতেও অবশ্য তদবির চলে।

 

লিখিত পরীক্ষায় মোবাইলফোনে উত্তর জেনে নিয়ে লেখার সময় গতবছর চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজ কেন্দ্রের দুজনকে হাতেনাতে ধরা হয়। তাদেরকে সপ্তাখানেকের জেলও দেয়া হয়। তাদের সহযোগীচক্রের কারো কারো মুখোশ কিছুটা উন্মোচন হলেও শেষ পর্যন্ত তারা বহাল তবিয়তেই আছে। ফলে এবারও সেই একই চক্রসহ একাধিক চক্র অভিন্ন কৌশলে লিখিত পরীক্ষায় শতভাগ প্রশ্নের জবাব সরবরাহের প্রতিশ্রুতিতে অর্থ হস্তগত করতে তোড়জোড় শুরু করেছে। কয়েকটি কোচিং সেন্টারের কিছু ব্যক্তি সন্দেহের শীর্ষে। তা ছাড়া কেন্দ্রের কিছু কর্তব্যরত শিক্ষকও ওই চক্রের সহযোগী সদস্য। তা না হলে অনিয়ম হয় কীভাবে? কয়েকদিন আগে দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় চক্রের কয়েকজনের নামধাম দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বিষয়টি বহুল আলোচিত। শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম মানে, জাতির সাথে বেঈমানী করা। শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য মেধাবী শিক্ষক প্রয়োজন। অনিয়মের ঘূর্ণিবাতাসে মেধাবীরা আছড়ে পড়ে, আর অযোগ্যরা সেই স্থান দখল করে। যার কুফল জাতিকেই ভোগ করতে হয়। ফলে বিষয়টিকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখা উচিত নয়।

 

নিয়োগ পরীক্ষা আসন্ন। এরই মাঝে জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতিসভায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক যথার্থই পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন। পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে পারলে সৃষ্টি হবে উদাহরণ। স্বচ্ছ পরীক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি অসাধুচক্রের অপতৎপরতা রোধেও কার্যকরী পদক্ষেপ প্রয়োজন। এরা তো আর দূর থেকে উড়ে আসে না, এরা সমাজেই রয়েছে। একটু অনুসন্ধান করলেই চক্রের হোতাদের ধরে আইনে সোপর্দ করা সম্ভব। তা ছাড়া নিয়োগ চূড়ান্ত করার বানোয়াট প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতিবারই নিয়োগ প্রত্যাশী কিছু পরীক্ষার্থীকে বিভ্রান্ত করে কাড়ি কাড়ি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। নিয়োগ হলে টাকা হজম, আর না হলে কিস্তি করে তা ফেরত দেয়া হয়। এ ধরনের অর্থলিপ্সুদেরও মুখোশ উন্মোচন প্রয়োজন।