স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি চেয়ারপারসন জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হঠাত করেই গতকাল বুধবার চিকিত্সার জন্য সিঙ্গাপুর গেছেন। তার এবারের সিঙ্গাপুর সফর এতোটাই আকস্মিক, কোনো সংবাদকর্মী, সংবাদমাধ্যম বা রাজনৈতিক মহল এ সফর সম্পর্কে একদিন আগেও কিছুই জানতো না। খুবই সতর্কতার সাথে এ সফরের খবর গোপন রাখা হয়। তার এ আকস্মিক সিঙ্গাপুর যাত্রা তাই সঙ্গত কারণেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলে উত্সুক সৃষ্টি করেছে।
বেগম খালেদা জিয়া চিকিত্সার জন্য সাধারণত সৌদিআরব যেতেন। কিন্তু এ বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি এবং জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তায় তিনি দু দফায় চিকিত্সার জন্য সিঙ্গাপুর যান। সৌদি সরকারের সাথে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সম্পর্ক উন্নয়নের ফলেই বেগম খালেদা জিয়া সৌদিআরবের পরিবর্তে সিঙ্গাপুরে চিকিত্সা গ্রহণের জন্য যাচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে। সাম্প্রতিককালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রসঙ্গে সৌদি সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো নেতিবাচক বা সমালোচনামূলক বক্তব্য দেয়নি বরং বিষয়টিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবেই বিবেচনা করছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও সৌদি সরকারের কাছে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের প্রেক্ষাপট ও নীতি তুলে ধরে এ বিষয়ে সৌদি সরকারের মনোভাব ইতিবাচক করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো। সৌদি আরবে কর্মরত যেসব বাংলাদেশি শ্রমিকের বৈধ কাগজপত্র ছিলো না, সম্প্রতি সৌদি সরকার তাদের বৈধতা দিয়েছে এবং কয়েক দফায় বিশেষ ক্ষমার সময়সীমা বৃদ্ধি করেছে। এসব ঘটনায় সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সম্পর্ক উন্নয়নের পর থেকেই বেগম খালেদা জিয়া চিকিত্সার জন্য সৌদি আরবের পরিবর্তে সিঙ্গাপুরকে বেছে নিয়েছেন বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।
জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তায় খালেদা জিয়ার সিঙ্গাপুর সফরকালে তিনি এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ দুজনই সেখানকার মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিত্সা গ্রহণ করেন। সে সময়ে দুজনের মধ্যে সাক্ষাত বা টেলিফোনে কথোপকথন হয়েছিলো বলে পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়। কোনো পক্ষ থেকেই খবরটি নিশ্চিত করা না হলেও ঢাকায় ফিরে এরশাদ বলেন, তার সিঙ্গাপুর সফর নিয়েও সমালোচনা হয় যে, তিনি নাকি ষড়যন্ত্র করছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের সাথে সাক্ষাতের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিনি যদি দেখা করেও থাকেন কোনো অন্যায় করেননি। তারা দুজনেই রাজনীতি করেন এবং খালেদা জিয়া তার শত্রু নন। বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছিলো সিঙ্গাপুর যাওয়ার কিছুদিন আগে এরশাদ বিএনপির এক শীর্ষ নেতার সাথে টেলিফোনে কথা বলেছিলেন।
এদিকে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ গত রোববার গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেও খালেদা জিয়া তাকে দেখতে যাননি। বরং তাকে দেখতে যাওয়ার বিষয়টি এড়াতেই দ্রুত তিনি সিঙ্গাপুর চলে গেলেন বলে মনে করা হচ্ছে। খালেদা জিয়া মওদুদ আহমেদকে দেখতে না গেলেও ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী এবং জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিকই এলাহী মওদুদ আহমেদকে দেখতে হাসপাতালে যান। তথ্যমন্ত্রী মওদুদ আহমেদকে দেখতে গিয়ে বলেন, তিনি সরকারের পক্ষ থেকে এসেছেন। খালেদা জিয়ার মওদুদ আহমেদকে দেখতে না যাওয়া এবং আওয়ামী লীগ ও তাদের সমমনা দলের নেতৃবৃন্দের তাকে দেখতে যাওয়া রাজনৈতিক মহলে আরেক দফা উত্সুক সৃষ্টি করেছে। তবে কি খালেদা জিয়া মওদুদ আহমেদকে অবিশ্বাস করতে শুরু করেছেন?
আগামী ২৪ অক্টোবর এ সরকারের মেয়াদ শেষ হবে। দু নেত্রী সভা-সমাবেশে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়ে চলেছেন। এর মধ্যে খালেদা জিয়ার তিন দফা সিঙ্গাপুর সফর তাই সঙ্গত কারণেই রাজনৈতিক মহলে নানা জল্পনা-কল্পনার উদ্রেক করেছে।