গাংনী প্রতিনিধি: কয়েক দফা ডাকাতি ও চোরচক্রের আক্রমণের পর গত মঙ্গলবার রাতে হত্যাকাণ্ডের মধ্যদিয়ে চরম আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন মেহেরপুর গাংনী উপজেলার গরিবপুর ও আশেপাশের গ্রামের মানুষ। তারা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। বাড়ি বাড়ি চলছে সতর্ক পাহারা। গতকাল বুধবার বিকেলে নিহত বাচ্চু মিয়ার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দরিদ্র পরিবারের সদস্যরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। তাদের সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না গ্রামবাসী।
স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, সীমান্তবর্তী এ গ্রামটি আয়তনে একেবারেই ছোট। গত মাসে দুটি ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এছাড়াও গরু চুরি, রাতে জোরপূর্বক মালামাল লুটসহ দুর্বৃত্তদের বিভিন্ন প্রকার অত্যাচারে গ্রামবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলো। ডাকাতদলের সদস্যদের প্রতিরোধে সাহসী হয়ে ওঠেন গ্রামবাসী। এ সাহস শেষ পর্যন্ত প্রাণঘাতির ঘটনার জন্ম দিলো। গত মঙ্গলবার রাতে ডাকাতরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে বাচ্চু মিয়াকে হত্যা করে। এ ঘটনা শুধু নিহতের পরিবারই নয় গোটা এলাকার মানুষ শোকে মুহ্যমান। গ্রামের মানুষের রক্ষায় যে দরিদ্র মানুষটি সবার আগে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রাণ দিলেন তার পরিবার এখন বড় অসহায়। তিন বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে ফাতেমা হয়তো বুঝতে পারছে না পিতার শূন্যতা। কিন্তু পরিবারের অন্য সদস্যরা যে এখন অভিভাবকহীন সে বিষয়টি কি করে ভুলবেন নিহতের স্ত্রী লতা খাতুন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি ছিলেন তিনি। ভ্যান চালানোর পাশাপাশি কখনও বড়া বিক্রি আবার কখনও মাছ বিক্রি করে সংসার চালাতেন বাচ্চু মিয়া। সহজ সরল এবং সততার জুড়ি ছিলো না। সব সময় হাসিখুশি থাকতেন এ মানুষটি। তাই পরিবার কিংবা গ্রামবাসী তার মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না।
এদিকে গতকাল বুধবার দুপুরে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে বাচ্চুর লাশ বাড়িতে নেয়া হলে এলাকার হাজারো মানুষের ভিড় জমে। পরিবারের আহাজারিতে উপস্থিত কেউ-ই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। অনেককেই হাউ-মাউ করে কাঁদতে দেখা গেছে। বিকেল চারটার দিকে জানাজা শেষে গ্রাম্য কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। গতকালই নিহতের পিতা জয়েন উদ্দীন বাদী হয়ে গাংনী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আসামি করা হয়েছে ডাকাতদলের অজ্ঞাত ১০/১২ সদস্যকে। তবে এলাকার অনেকেই সন্দেহ করছেন সীমান্ত এলাকার একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যদের। হত্যাকাণ্ডের ধরন, ডাকাতদের জনবল ও আনুষাঙ্গিক বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় এনে তারা এমনটি সন্দেহ পোষণ করছেন। গ্রামবাসীর সন্দেহের বিষয়টি আমলে নিচ্ছে পুলিশ। তাদের গ্রেফতারে ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ।
গতরাত এগারটার দিকে এ সংবাদ লেখার সময়ে গরিবপুর গ্রামের কয়েকজনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, গোটা এলাকায় এখন শুনশান নীরবতা বিরাজ করছে। ডাকাতদলের সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কায় গোটা গ্রামের মানুষে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। টিপটিপ বৃষ্টি হলেও অনেকেই ঘরের ছাদে উঠে পাহারা করছেন। আবার কেউ ঘরের মধ্যে জেগে আছেন। পালাক্রমে কেউ ঘুমাচ্ছেন আবার কেউ জেগে আছেন।
এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে গ্রামের মানুষকে অভয় দিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার ঘটনার পর মেহেরপুর পুলিশ সুপার একেএম নাহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন, সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল জলিল ও গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদুল আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পুলিশ সুপার গ্রামবাসীর উদ্দেশে বলেছেন, যেকোনো মূল্যে ডাকাতদলের সদস্যদের গ্রেফতার ও এলাকার মানুষের নিরাপত্তা প্রদানে সবরকম চেষ্টা করছে পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই এলাকায় পুলিশি টহল বৃদ্ধির পাশাপাশি ডাকাতদলের সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে জানালেন গাংনী থানার ওসি। তিনি আরো জানান, ঘটনার সাথে জড়িত সন্দিগ্ধ কয়েকজনের গ্রেফতারে গতকাল কয়েকটি অভিযান ব্যর্থ হয়েছে। তবে খুব শিগগিরই তাদের গ্রেফতার করতে পারবে পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার মধ্যরাতের পরে গরিবপুর গ্রামে একদল ডাকাত হানা দেয়। গ্রামবাসী তাদের প্রতিরোধকালে বাচ্চু মিয়াকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলাকাটে খুন করে ডাকাতরা। কয়েকটি বোমা নিক্ষেপ করে তারা স্থান ত্যাগ করে। বোমাঘাতে গ্রামের আরো তিনজন আহত হয়। দুজনকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।