স্টাফ রিপোর্টার: একাত্তরে সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিএনপি নেতা সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গতকাল বুধবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-২ এ রায় ঘোষণা করেন। শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় তাকে সর্বোচ্চ সাজা দেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এটি ট্রাইব্যুনাল-২’র পঞ্চম এবং দু ট্রাইব্যুনালের অষ্টম রায়।
আলীমের বিরুদ্ধে আনিত ১৭টি অভিযোগের মধ্যে নয়টি অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করেন আদালত। ছয়টি অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। এছাড়াও দু অভিযোগে সাক্ষি হাজির করা সম্ভব হয়নি। মুসলিম লীগের নেতা আবদুল আলীমকে ২, ৮, ১০ ও ১৪ নম্বর অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ১ নম্বর অভিযোগে ১০ বছর কারাদণ্ড ও ৬,৭, ৯ ও ১২ নম্বর অভিযোগে ২০ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
রায় ঘোষণা উপলক্ষে বিএনপির সাবেক এ মন্ত্রীকে গতকাল বুধবার সকাল ন’টা ৪৭ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর এ মামলার কার্যক্রম শেষে রায় অপেক্ষমান রাখেন ট্রাইব্যুনাল। একই দিন বিশেষ বিবেচনায় দেয়া আলীমের জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। যদিও শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিত্সাধীন ছিলেন।
জিয়াউর রহমানের সরকারের মন্ত্রী আলীমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৭টি অভিযোগ এনেছিলো রাষ্ট্রপক্ষ। এরমধ্যে বেশিভাগ অভিযোগই গণহত্যা, হত্যা, লুটপাট ও দেশ ত্যাগে বাধ্য করার। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হওয়ার পর থেকে এই রায়ের আগ পর্যন্ত সাতটি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে তিনটি ও ট্রাইব্যুনাল-২ থেকে চারটি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। এসব রায়ে জামায়াতে ইসলামীর বহিস্কৃত রুকন পলাতক আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আর জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের ৯০ বছর ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। তবে গত ১৭ সেপ্টেম্বর সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। বর্তমানে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে শুনানি চলছে। এছাড়া চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণা ট্রাইব্যুনালে অপেক্ষমান রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ২৭ মার্চ জয়পুরহাটের বাড়ি থেকে আলীমকে গ্রেফতার করা হয়। ৩১ মার্চ এক লাখ টাকার মুচলেকা এবং ছেলে ফয়সাল আলীম ও আইনজীবী তাজুল ইসলামের জিম্মায় তাকে জামিন দেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর বেশ কয়েক দফা এ জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। ২০১২ সালের ১১ জুন আবদুল আলীমের বিরুদ্ধে সাত ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৭টি অভিযোগ গঠন করা হয়। এর মধ্যে জয়পুরহাটের কড়ই কাদিপুর গ্রামে, উত্তর হাটশহরে এবং জয়পুরহাট চিনিকলে গণহত্যার তিনটি অভিযোগ রয়েছে তিনটি। অন্যান্য অভিযোগের মধ্যে হত্যার রয়েছে ১০টি এবং দেশত্যাগে বাধ্যকরার একটি অভিযোগ রয়েছে।
মামলায় আলীমের বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) এজেডএম আলতাফুর রহমানসহ রাষ্ট্রপক্ষের মোট ৩৫ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। তবে ১৯তম সাক্ষী আবেদ হোসেনকে বৈরী ঘোষণা করে জেরা করে রাষ্ট্রপক্ষ। তবে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেয়া দুজনের জবানবন্দিকেই সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল। অন্যদিকে আসামিপক্ষে সাক্ষ্য দেন তিনজন। তারা হলেন- মামুনুর রশিদ, মো. মোজাফফর হোসেন ও ছেলে সাজ্জাদ বিন আলীম। উভয়পক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আলীমের সর্বোচ্চ শাস্তির আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ চার দিন ও আলীমের মুক্তি চেয়ে আসামিপক্ষ পাঁচ দিন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে।