স্টাফ রিপোর্টার: সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে গতকাল সোমবার সারাদেশে আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০০। এ সময় বিভিন্ন স্থানে সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হয়। ঢাকা সিলেট মহাসড়কের দেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলো থেকে প্রকৌশল বিষয়ে ডিপ্লোমাপ্রাপ্তদের উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে বিবেচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর ফলে এখন থেকে এসব ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা চাকরিতে যোগ দেয়ার সময় সুপারভাইজার নয়, উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ পাবেন। এ জন্য ২০০৮ সালের এ সংক্রান্ত গেজেটটি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
গতকাল সোমবার সচিবালয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা প্রকৌশলী নেতৃবৃন্দের যৌথ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠক শেষে শিক্ষা সচিব কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী সাংবাদিকদের এ কথা জানান। এ সময় পূর্ত সচিব ড. খন্দকার শওকত হোসেন উপস্থিত ছিলেন। গত কয়েক দিন ধরে সারাদেশে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সহিংস আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিলো। এদিকে সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে ১৫ দিনের জন্য চলমান আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের চাকরিতে যোগদানের সময় প্রকৌশলী পদমর্যাদা প্রদানসহ দু দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে দ্বিতীয় দিনের মতো সারাদেশের ন্যায় পরীক্ষা বর্জন, বিক্ষোভ সমাবেশ ও সড়ক অবরোধ করেছে মেহেরপুরের শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মেহেরপুর কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি এবং মেহেরপুর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে সরকারি কলেজ মোড়ে গিয়ে শেষ করে। ওই সময় সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা। এতে কিছুক্ষণের জন্য মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে তারা অবরোধ তুলে নেয়। তবে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন ছাত্রছাত্রীরা।
এদিকে মেহেরপুর টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও কেন্দ্র সচিব প্রকৌশলী সিদ্দিকুর রহমান জানান, দ্বিতীয় ও চতুর্থ সেমিস্টারের ১৭০ জন পরীক্ষার্থীর পর্ব সমাপনী পরীক্ষার সমস্ত প্রস্তুতি রয়েছে তবে কোনো পরীক্ষার্থী কেন্দ্রে উপস্থিত হয়নি। মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক মাহমুদ হোসেন জানান, বোর্ডের নির্দেশ অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিলো তিন ঘণ্টা। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের সুপারভাইজার হিসেবে সংজ্ঞায়িত না করে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে সংজ্ঞায়িত করাসহ তিন দাবিতে গত কয়েকদিন ধরেই দেশব্যাপি আন্দোলন চালিয়ে আসছে পলিটেকনিকের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পলিটেকনিক ছাত্রদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে সাত পুলিশ সদস্যসহ কমপক্ষে অর্ধশত ছাত্র আহত হয়েছেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১১৪ রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ইসলামপুরে ছাত্ররা মিছিল বের করে। এক পর্যায়ে তারা সড়ক অবরোধ ও যানবাহন ভাঙচুর শুরু করলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষ চলাকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তার দু পাশে ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি হয়।
তৃতীয় দিনের মতো রাজশাহী পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষে পুলিশ ও সাংবাদিকসহ অন্তত অর্ধশত আহত হয়েছেন। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিত্সা দেয়া হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা সোমবার বেলা ১১টায় বিক্ষোভ মিছিল বের করে। ইনস্টিটিউটের প্রধান ফটকে পুলিশ মিছিলের গতিরোধ করলে শিক্ষার্থীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। শুরু হয় পুলিশের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কে অবস্থান নেয়। শিক্ষার্থীদের ব্যাপক ইটপাটকেলের জবাবে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শতাধিক রাউন্ড টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। ফলে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা পলিটেকনিক ক্যাম্পাস এবং রেলভবনের সামনে স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা ১০/১৫টি মিশুক, সিএনজি, অটোরিকশা ভাঙচুর করে। পরে তারা ক্যাম্পাসে গিয়ে চেয়ার-টেবিল বাইরে এনে আগুন ধরিয়ে দেয়। দমকল বাহিনীর একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভায়। ঘন্টাব্যাপি সংঘর্ষ চলাকালে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের যানচলাচল বন্ধ ছিলো। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৩০ জনকে আটক করে।
বগুড়ায় পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের ছাত্ররা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা তিনটি যানবাহন ভাঙচুর করে। পুলিশ বাধা দিলে আন্দোলনরত ছাত্ররা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। তখন পুলিশ লাঠি চার্জ ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ চারজনককে গ্রেফতার করেছে। এদিকে রোববার পলিটেকনিক এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হলেও সোমবার সকালে তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয় বলে জানিয়েছেন বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ সহিদ আলম।
গতকাল সোমবার খুলনায় পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষে পুলিশ, সাংবাদিকসহ অর্ধশত ছাত্র আহত হয়েছে। সংঘর্ষকালে নগরীর খালিশপুর গাবতলা ও বৈকালী এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় পুলিশ দু শতাধিক রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১০ ছাত্রকে আটক করেছে। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিত্সা দেয়া হয়। ছাত্ররা একটি বাস ও একটি প্রাইভেটকার ভাঙচুর করে। অন্যদিকে কলেজের শিক্ষকরা দাবি করেছেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতার নেতৃত্বে তাদের কলেজেও ভাঙচুর করা হয়েছে।
পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীরা গাছের গুঁড়ি ফেলে ভোলা-চরফ্যাশন মহাসড়ক অবরোধ করে। এ সময় একটি বিআরটিসি বাস, কলেজ ও অধ্যক্ষের বাসভনেও ভাঙচুর করা হয়। রোববার কুমিল্লা পলিটেকনিকে সংঘর্ষের ঘটনায় সদর দক্ষিণ মডেল থানায় পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দায়ের করা এসব মামলায় চার সহস্রাধিক লোককে আসামি করা হয়েছে। কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া জানান, ফৌজদারী আইনে মামলা দায়ের হওয়ায় এ ঘটনায় আর কোনো তদন্ত কমিটি গঠনের প্রয়োজন নেই। জেলার পুলিশ সুপার টুটুল চক্রবর্তী জানান, ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে এ ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। ফেনীতে সোমবার সকালে কারিগরি শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশ ও ৱ্যাবের সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা শতাধিক যানবাহন ও দোকানপাট ভাঙচুর করে। পাঁচটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় ফেনী-পরশুরাম ও ফেনী-ছাগলনাইয়া আঞ্চলিক মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিলো।