ছোটদের বিরোধে বড়রা জড়ালে ভুল শুধরাবে কারা?

 

ছোটদের বিরোধে বড়রা জড়িয়ে পড়লে বড়দের কী বড় বলা যায়? ছোটরা ভুল করতেই পারে। সেই ভুল শুধরে তাদের সুপথে রাখতে পারাটাই বড়দের দায়িত্ব। কিন্তু বাস্তবে সর্বক্ষেত্রে সবসময় তা হয় না। বিদ্যালয়েও উঁচু শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নিচু শ্রেণির তথা ছোটদের ওপর নানাভাবে নির্যাতন করে বড়দের কেউ কেউ বাহাদুরী ভাব দেখায়। আড়ালে বাড়তি সুবিধা আদায়ের বিষয়টিও কখনো কখনো সুক্ষ্মভাবে জড়িয়ে থাকে। বিদ্যালয়ে বড়দের চোখরাঙানিসহ শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারকে ৱ্যাগিং বলা হয়। অবাক হলেও সত্য যে, এ ৱ্যাগিঙের কারণে দেশের বহু স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে মেধাবী অনেক শিক্ষার্থী মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে না পৌঁছুনোর কষ্টে তাদের কেউ কেউ মানসিক রোগীও হয়ে গেছে। ফলে ৱ্যাগিংকে যেমন কোনোভাবেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই, তেমনই বিদ্যালয়ে একই শ্রেণির দু শিক্ষার্থীর বসার আসন নিয়ে বা অন্য কোনো বিরোধের জের বড়দের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার কারণে অনেক শিক্ষার্থী লেখাপড়ার স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়েছে। কেউ কেউ ঝরে পড়েছে, পড়ছে।

 

চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার ওসমানপুর-প্রাগপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যা ঘটেছে তাকে যেমন ৱ্যাগিং বলা যাবে না, তেমনই খাটো করে দেখাও উচিত হবে না। একই শ্রেণির দু ছাত্র বসার স্থান নিয়ে বিরোধে জড়িয়েছে। এর আগে তাদের মধ্যে ঠাণ্ডা লড়াই চলছিলো। সেই বিরোধেরই মূলত বহির্প্রকাশ ঘটেছে শ্রেণিকক্ষের আসনে বসা নিয়ে। সেই বিরোধ বড়দের মধ্যে ছড়িয়ে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হলো কেন? নাকি অতি উৎসাহিত হয়ে নিজ গ্রামের বাহুবল প্রদর্শনের অপচেষ্টা? বিদ্যালয় তো বাহুবল তথা পেশিশক্তি প্রদর্শনের স্থান নয়। লেখাপড়ার স্থান। উদীয়মান শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ টিভি নাটকের উগ্রতায় প্রভাবিত হতে পারে, নিজেকে অনেক কিছু ভেবে আধিপত্য বিস্তারের অপচেষ্টাও ওই বয়সে হয়ে থাকতে পারে। কেননা, আমরা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চায় চরম ব্যর্থ হয়ে এখন বিদেশি সংস্কৃতির দিকেই ঝুঁকে পড়েছি। যার বাড়তি ধকল উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা সামলাতে পারছে না। চরম এ বাস্তবতাকে অস্বীকার করে নয়, স্বীকার করেই বড়দের বাস্তবমুখি পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে প্রজন্মের হোঁচট জাতির অস্তিত্বকেই হুমকির মধ্যে ফেলতে পারে। এ আশঙ্কা অমূলক নয়। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ৱ্যাগিং বন্ধ করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ শিক্ষকমণ্ডলীকে সজাগ দৃষ্টি রেখে ৱ্যাগিং বন্ধের কাজে আন্তরিক হওয়া দায়িত্বেরই অংশ।

 

নিচু শ্রেণির কোনো শিক্ষার্থীকে উঁচু শ্রেণির কেউ চোখ রাঙালেই তার উচিত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তা না পারলে টিফিন কেড়ে খাওয়া থেকে শুরু করে অনেক কিছুই পেয়ে বসতে পারে। তা ছাড়া উঠতি বয়সে ছেলেমেয়েরা যেসব টিভি নাটকের প্রভাবে বিপথগামী হতে পারে তা সম্প্রচারে সময় নির্ধারণ করা সরকারেরই দায়িত্ব। ইন্টারনেট? ওটা যেভাবে নীলছবি ছড়াচ্ছে তা অনুমান করাও কষ্ট। ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে নিলেও ওইসব বাজে ওয়েবসাইটগুলো আমাদের দেশে ভিজিটের সুযোগ বন্ধ করা জরুরি। অথচ সেদিকে দায়িত্বশীল কর্তাদের তেমন নজরই নেই। আর মাদক? তাও সহজলভ্য হওয়ার কারণে অভিভাবকদের অধিকাংশের মধ্যেই চরম হতাশা বিরাজ করছে। এসব থেকে উঠতি বয়সী শিক্ষার্থীদের মুক্ত করতে অভিভাবকদেরও অধিক দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন। আর বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে আসনে বসা নিয়ে কিশোর শিক্ষার্থীদের বিরোধকে যখন বড়রা লাই দিয়ে মাথায় তোলে, তখন সমাজের দায়িত্বশীলদের মাথা নিচু হয়ে যায়। সমাজের সচেতন মানুষগুলোকেই সচেতনতার আলো ছড়াতে হবে।