ঝিনাইদহে জাতীয় পার্টির জনসভায় সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

দেশে আদৌ নির্বাচন হবে কি-না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে

 

 

ঝিনাইদহ অফিস: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসাইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, সংসদ নির্বাচন নিয়ে আগে কখনও এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়নি। নির্বাচন নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে। নির্বাচনের কোনো আলামত আমরা দেখতে পারছি না। আদৌ নির্বাচন হবে কি-না হলে কখন কার অধীনে হবে তাও জনগণ জানেন না। গতকাল শনিবার বিকেল ৫টায় ঝিনাইদহ শহরের ওয়াজির আলী হাইস্কুল মাঠে জেলা জাতীয় পার্টির এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

এরশাদ বলেন, গত ২৩ বছরে দেশে যারা ক্ষমতায় ছিলো তারা মানুষের শান্তি দিতে পারেনি। অস্ত্র ও টাকার কারণে ভালো মানুষ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারেন না। এর জন্য নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তন করতে হবে। ব্যক্তি নয় দলকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে হবে। প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে দল সংসদে আসন পাবে। আমরা ক্ষমতায় গেলে দেশে আগের মতো উন্নয়ন হবে। দেশে শান্তি ফিরে আসবে। তিনি আগামী নির্বাচনে সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগই আন্দোলন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করে এবং ক্ষমতায় আসে এখন তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করেছে। এটা আওয়ামী লীগের দ্বিমুখি পলিসি।

ঝিনাইদহ জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ড. এম হারুন অর রশিদের সভাপতিত্বে জনসভায় দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কেন্দ্রীয় নেতা আহসান হাবিব লিংকন, সুনিল শুভ রায়, মেজর খালেদ আক্তার, শরিফুল ইসলাম সরু, শফিকুল ইসলাম মধু, মনিকা আলমসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। জনসভায় বৃষ্টি উপেক্ষা করে জেলার ৬ উপজেলা থেকে দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মী জনসভায় উপস্থিত হয়। প্রায় আধাঘণ্টার বক্তৃতায় এরশাদ বলেন, দীর্ঘ এক যুগ পর ঝিনাইদহে আসলাম। এতদিন ঝিনাইদহে জাতীয় পার্টিতে নেতৃত্ব সঙ্কট চলছিলো। তবে ড.এম হারুন অর রশিদ জাতীয় পার্টির হাল ধরায় সেই শূন্যতা পূর্ণ হয়েছে। তিনি তার দলের প্রার্থী ঝিনাইদহ-২ আসন থেকে ড. এম হারুন অর রশীদের নাম ঘোষণা করে লাঙল মার্কায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানান। এছাড়া হারুনকে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা দেন। তিনি আরও বলেন, তার দল ক্ষমতায় গেলে প্রথমে পদ্মা সেতু তৈরি করা হবে। আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিশ্বজিত হত্যাকাণ্ড হয়েছে। সারাদেশে টেণ্ডারবাজি, চাঁদাবাজি চরমে পৌঁছেছে। মানুষের কোনো নিরাপত্তা নেই। জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় গেলে সব হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হবে।

তিনি বলেন, আমরা মহাজোটে আছি নাম মাত্র। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দলীয়করণ করেছে। ঘুষ ছাড়া কেউ চাকরি পায়নি। পুলিশে ৩ লাখ ও শিক্ষক নিয়োগে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে বলে এরশাদ অভিযোগ করেন। মহাজোট সরকারের টেণ্ডারবাজি, দলীয়করণ ও চাঁদাবাজির কারণে মানুষ অতিষ্ঠ। সর্বত্র আজ লুটপাট চলছে। এ অবস্থায় দেশ চলতে পারে না। দেশে পরিবর্তন আনতে পারে একমাত্র জাতীয় পার্টির সরকার। এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টির শাসন ছিলো উন্নয়নের। যমুনা সেতু আমি করেছিলাম। সে সময় তো দুর্নীতির কোনো অভিযোগ ওঠেনি। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি ক্ষমতা ছাড়ার পর বাংলাদেশ পাঁচ পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।

শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারী নিয়ে তিনি বলেন, ৩০ লাখ লোককে পথে বসিয়ে যারা শেয়ার বাজারের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিলো, তারা এখন প্রধানমন্ত্রীর সাথে ঘুরে বেড়ান। তিনি বিশ্বজিত হত্যার বিচার নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, একটি লজ্জার কথা যে রেলের কালো বিড়াল এখনো জনগণের বেতনে নিস্কর্মা মন্ত্রী, যা বিশ্বের কোথাও নেই। তিনি বলেন, শাহবাগে একজন বললো ঘরে ঘরে পতাকা তুলতে, আর অমনি আমরা তার কথা নির্দেশ মানলাম। তিনি বলেন, এক ব্লগার নিহত হলে প্রধানমন্ত্রী তার বাড়ি যান। তাকে শহীদ উপাধি দেয়া হয়। কিন্তু শহীদ হওয়া সহজ নয়। তিনি বলেন, শাহবাগের ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডের আমিই প্রথম প্রতিবাদ করেছিলাম। ইসলামের বিরুদ্ধে যারাই কথা বলবে আমি তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষনা করবো। দেশের নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তন দরকার। এখন যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হচ্ছে তাতে একবার আওয়ামী লীগ ও আরেকবার বিএনপি ঘুরে ফিরে সরকারে আসে। এরশাদ বলেন, যাদের কোটি কোটি টাকা ও অস্ত্র আছে তারাই এ পদ্ধতির নির্বাচনে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন। ফলে যোগ্য ও সৎ প্রার্থীরা নির্বাচিত হতে পারেন না। যোগ্য ও সৎ প্রার্থী নির্বাচিত করতে হলে নির্বাচন পদ্ধতির আমূল পরিবর্তন করে দলের প্রতীকে ভোটের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি চলমান সঙ্কট নিরসনে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ লজ্জাকর বলেও উল্লেখ করেন।

জনসভায় মঞ্চে উঠে ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের হাতে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক লাঞ্ছিত হন।