চলন্ত ট্রেনে একের পর এক পাথর নিক্ষেপ ঘটনাকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। ট্রেনভ্রমণকারী এক নারী প্রকৌশলীর প্রাণ ঝরেছে। বহু যাত্রী রক্তাক্ত জখম হয়েছেন। একাধিক ট্রেন চালকের আহত হওয়ারও খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। সর্বশেষ গত পরশু রাতে খুলনা থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়া সুন্দরবন এক্সপ্রেসের চালক অজ্ঞাত ব্যক্তির নিক্ষিপ্ত পাথরে আহত হন। ভাগ্যিস প্রাণ ঝরেনি। চালক আহত হওয়ায় ট্রেনটি চলেছে ঘণ্টাখানেক বিলম্বে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে কোনো ব্যক্তির নয়, দেশবাসীর। শুধু আয়ের জন্যই রেলওয়ে নয়, দেশবাসীর যোগাযোগসহ এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সহজেই পণ্য আমদানি-রপ্তানির অন্যতম মাধ্যম। রেলযোগাযোগ ভেঙে পড়লে দেশে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে। যার কুপ্রভাব থেকে দেশের কোনো ব্যক্তিই মুক্ত হতে পারবে না। অথচ রাষ্ট্রীয় ও জনগুরুত্বপূর্ণ এ যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর একের পর এক আঘাত আসছে। দীর্ঘদিন ধরে রেলওয়ে বিভাগে অনিয়ম দুর্নীতি ব্যাপকভাবে সংক্রমিত হয়েছে। রেলওয়ের জমি নানাভাবেই বেদখলে। রেলওয়ের যন্ত্রপাতি চুরি ও চোরচক্রের সাথে আঁতাত করার বিষয়টিও নতুন নয়। মাদকসাক্তদের উৎপাত তো নতুন নয়। মাশুল আদায়েও অনিয়মের যেন অন্ত নেই। মাঝে মাঝে একটি রাজনৈতিক দল ও তার ছাত্র সংগঠনের কেউ কেউ রেলওয়ের ওপর কুনজর দিয়ে নাশকতামূলক ঘটনা ঘটিয়ে ভয়াবহ সর্বনাশ ডেকে আনছে। কোথাও কোথাও ট্রেন বিলম্বের কারণে উত্তেজিত হয়ে হামলার ঘটনা ঘটছে। এর মাঝে কিশোর বয়সে বুঝে না বুঝে চলন্ত ট্রেনে ইটপাথর নিক্ষেপ করে নিরাপদ ভ্রমণকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে।
অবশ্যই বাংলাদেশ রেলওয়েকে রক্ষা করতে হবে। রেলযোগাযোগ যতো উন্নত করা যাবে তার সুফল দেশের প্রতিটি মানুষই ভোগ করবে। আর তা যদি ভেঙে পড়ে? খেসারত দেশবাসীকেই দিতে হবে। শুধু রেলওয়ে নয়, নিজেদের কল্যাণেই রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব প্রত্যেককে নিতে হবে। দেশপ্রেম তো আর দেশের মাটি ছুঁয়ে মাঝে মাঝে সালাম বা প্রণাম করা নয়, নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করাটাই মূলত দেশপ্রেম। সবার মাঝে জেগে উঠুক দেশের প্রতি ভালোবাসা।