স্টাফ রিপোর্টার: সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক বিবেচনায় আদালত অবমাননা আইন ২০১৩ অবৈধ ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট। রায়ের পর আদালত বলে, গণমাধ্যম একটি শক্তিশালী মাধ্যম। আমরা চাই না, সংবাদ মাধ্যমের হাত বাঁধা থাকুক। তবে আমরা এটাও চাই না, কেউ সীমানার বাইরে যাক। এছাড়া ওই আইনে সরকারি কর্মকর্তাদের যে সুরক্ষা দেয়া হয়েছে, তাও সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক বলে রায় দিয়েছে হাই কোর্ট।
গত ৩ এপ্রিল এ বিষয়ে রুল দিয়েছিলো হাইকোর্ট। রুলে ওই আইনের ৪, ৫, ৬, ৭, ৯, ১০, ১১ ও ১৩ (২) ধারা কেন বাতিল ও সংবিধান বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে আদালত অবমাননা আইন সংশোধন করে সরকার। এর চুতর্থ ধারায় বলা হয়, নির্দোষ প্রকাশনা বা বিতরণ অবমাননা নয়। পঞ্চম ধারায় বলা হয়, আদালতের বিচারিক কার্যধারা বা তার অংশ বিশেষ নিয়ে অথবা শুনানি শেষে আদালত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে এমন কোনো মামলার গুণাগুণ সম্পর্কে পক্ষপাতহীন ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করলে তা আদালত অবমাননা হিসেবে গণ্য হবে না।
কোনো ব্যক্তি অধস্তন আদালতের বিচারক সম্পর্কে সরল বিশ্বাসে কোনো বিবৃতি বা মন্তব্য করলে অথবা আদালতের খাস কামরায় বা রুদ্ধদ্বার কক্ষে অনুষ্ঠিত বিচারিক কার্যধারা সম্পর্কে পক্ষপাতহীন ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য প্রকাশ করলে তাও আদালত অবমাননা হিসেবে গণ্য হবে না বলে ষষ্ঠ ও সপ্তম ধারায় উল্লেখ করা হয়। নবম ধারায় বলা হয়, এ আইনের অধীন শাস্তিযোগ্য নয় এমন প্রকাশনা বা কাজ এ আইনের আওতায় শাস্তিযোগ্য হবে না। ১০, ১১ ও ১৩ (২) ধারায় সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমানানা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়, কোনো কর্মকর্তা রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন, বিধিমালা, সরকারি নীতিমালা অনুসরণ করে কোনো পরিপত্র, প্রজ্ঞাপন বা স্মারক জারি করলে বা আদালতের কোনো রায়, আদেশ বা নির্দেশ যথাযথ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বাস্তবায়ন বা প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ তোলা যাবে না। কোনো সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা হলে তিনি সরকারি খরচে আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবেন, তবে দোষী সাব্যস্ত হলে ওই টাকা তাকে ফেরত দিতে হবে।
আদালত অবমাননার মামলায় জড়িত কোনো সরকারি কর্মকর্তা অপসারিত হলে বা অবসরে গেলে আদালত তাকে অবমাননার দায় থেকে অব্যাহতি দিতে পারবে। এছাড়া আদালত অবমাননার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত কেউ আপিলে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলে আদালত তার দণ্ড মওকুফ বা হ্রাস করতে পারবে। এ ধারাগুলো সংবিধানের ১০৮ অনুচ্ছেদের সাথে সাংঘর্ষিক দাবি করে গত ২৫ মার্চ অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান সিদ্দিকী ও অ্যাডভোকেট আয়শা খাতুন একটি রিট আবেদনটি করেন। ওই রিটোর প্রেক্ষিতেই হাই কোর্ট রুল জারি করে। শুনানিতে বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, নতুন আইনে এমন কিছু ধারা সংযোজন করা হয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে সংবিধানের ১০৮ অনুচ্ছেদ অকার্যকর হয়ে যায়।