পারিবারিক গণ্ডগোলের জেরে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়ায় গ্রামবাসী ছত্রভঙ্গ
গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলা বিএনপি কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সোমবার রাত আটটার দিকে হামলা চালিয়ে আসবাবপত্র ভাঙচুর ও তাতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পৌর বিএনপির সভাপতি ইন্সুরুল হক ইন্সুর সাথে পারিবারিক একটি বিষয় নিয়ে পূর্বমালসাদহ গ্রামের কিছু মানুষ বিএনপি কার্যালয়ে গেলে অপ্রীতিকর ঘটনার মধ্যদিয়ে নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া করে। এর জের ধরেই বিএনপি কার্যালয়ে হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ।
স্থানীয় ও পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, পৌর বিএনপির সভাপতি গাংনী পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইন্সারুল হক ইন্সুর সাথে পারিবারিক একটি বিষয় নিয়ে পূর্বমালসাদহ গ্রামের কিছু লোক সন্ধ্যায় বিএনপি কার্যালয়ে যায়। এক পর্যায়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে তাদের বাগবিতণ্ডা বাধে। বিএনপি নেতাকর্মীরা মালসাদহ গ্রামের মানুষের ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এর প্রায় আধা ঘণ্টা পরে ঘটনার প্রতিবাদে গাংনী পৌর মেয়র আহম্মেদ আলীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা প্রধান সড়কে প্রতিবাদ মিছিল বের করে। এক পর্যায়ে বিএনপি কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে আসবাপত্র ভাঙচুর করে কিছু লোক। ভাঙচুর করা আসবাবপত্র কাগজপত্র কার্যালয়ের সামনে এনে তাতে অগ্নিসংযোগ করে তারা। কার্যালয়ের ভেতরে ভাঙচুর করা আসবাবপত্রেও আগুন দেয়া হয়। তাৎক্ষণিকভাবে র্যাব-৬ গাংনী ক্যাম্পের একটি দল ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিভিয়ে দেয়। হামলাকারীরা স্থান ত্যাগ করে। খবর পেয়ে মেহেরপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন ও সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) আব্দুল জলিলসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে আসেন। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে এবং শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাছুদুল আলম।
গাংনী পৌর মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা আহম্মেদ আলী জানিয়েছেন, বিএনপি অফিস থেকে সাধারণ মানুষের ওপর রামদা, লাঠিসোটা ও অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হয়েছে বিধায় প্রতিরোধ করা হয়েছে। যে দলেরই অফিস হোক না কেন তা পরিষ্কার থাকতে হবে। অস্ত্র নিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর হামলা করা কোনো মতেই সহ্য করা হবে না। অফিসের মধ্যে এ ধরনের ধারালো অস্ত্র রাখলে অফিস খুলতে দেয়া হবে না বলেও ঘোষণা দেন তিনি। হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি করেন পৌর মেয়র।
এদিকে ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এটিকে নিএনপি নির্মুলের চক্রান্ত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন মেহেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি মেহেরপুর-২ (গাংনী) সংসদ সদস্য আমজাদ হোসেন। পুলিশের নিষ্ক্রীয় ভূমিকার সমালোচনা করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ। ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হলে হরতালসহ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণার কথাও জানিয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাহারবাটি ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবলু।
স্থানীয়দের সাথে আরও কথা বলে জানা গেছে, পারিবারিক দ্বন্দ্ব এখন দলীয় বিরোধে মোড় নিয়েছে। মাসখানেক আগে ইন্সারুল হক ইন্সুর ভাই বশির আহম্মেদ বাবু ও পূর্বমালসাদহ গ্রামের আব্দুল লতিফের মেয়ে সোনিয়া খাতুন প্রেমসম্পর্কের জের ধরে গোপনে বিয়ে করেন। জানাজানি হলে বিষয়টি অস্বীকার করেন বাবু। পরে সোনিয়ার পরিবারের লোকজন চুয়াডাঙ্গা নোটারি পাবলিক থেকে বিয়ের কাগজপত্র তুলে এনে বিয়ে মেনে নেয়ার দাবি করেন। গত বৃহস্পতিবার পূর্বমালসাদহ গ্রামের কয়েকজন ইন্সুর বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি সমাধানের প্রস্তাব দেন। এক পর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডা বাধে। তবে ইন্সারুল হক ইন্সু জানিয়েছেন, তাদের কাছে বিয়ের বৈধ কাগজপত্র থাকলে আইনগত ব্যবস্থাসহ অন্য ব্যবস্থা নিতে পারতো। ওভাবে আমাদের বাড়িতে এসে কৈফিয়ত চাওয়া ঠিক হয়নি।
বিয়ে মেনে নেয়ার বিষয়টি নিয়ে পূর্বমালসাদহ গ্রামের মানুষের মাঝে গত কয়েকদিন ধরে উত্তেজনা ও ক্ষোভ বিরাজ করছিলো। বিষয়টি সমাধানের পথ খুঁজছিলেন তারা। সেইসাথে বাবু ও তার পরিবারের লোকজনের ওপর বিরুপ মন্তব্য করে তাদের খোঁজাখুজি করছিলেন পূর্বমালসাদহ গ্রামের কিছু মানুষ। এরই জের ধরে গতকাল সন্ধ্যায় পূর্বমালসাদহ গ্রামের ২০/৩০ জন বিএনপি কার্যালয়ে ইন্সারুল হক ইন্সুর সাথে কথা বলতে যায়। অফিসের সামনে তাদের সাথে বিএনপির কয়েকজনের ঝগড়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে উভয়পক্ষের উত্তেজনা গণ্ডগোলের পর্যায়ে গড়ায়। বিএনপি নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া করে। পালিয়ে আসে পূর্বমালসাদহ গ্রামের লোকজন। ইন্সুরুল হক ইন্সু জানিয়েছেন, অফিসের সামনে থেকে থানাপাড়ার বাবু মিয়াকে চড় থাপ্পড় মারে পূর্বমালসাদহ গ্রামের কয়েকজন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া দেয়। এমপি আমজাদ হোসেন নেতাকর্মীদের শান্ত করে অফিস বন্ধ করে সকলকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। এর কিছুক্ষণ পরেই ঘটে ভাঙচুরের ঘটনা। তবে এ ঘটনার পর পূর্বমালসাদহ গ্রামের মানুষের মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাদের দাবি যেকোনো মূল্যে সোনিয়াকে মেনে নিতে বাধ্য করা হবে। বাবু ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের কথা জানিয়েছেন পূর্বমালসাদহ গ্রামের কয়েকজন।