আলমডাঙ্গার জোড়গাছায় বিয়ের দাবিতে বাগদত্তা স্বামীর বাড়িতে স্ত্রীর চারদিন ধরে অনশন অব্যাহত

 

সদরুল নিপুল/জাহাঙ্গীর আলম: আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদাহ ইউনিয়নের জোড়গাছা গ্রামে দিন তারিখ ঠিক করে বিয়ে না করায় বিয়ের দাবিতে বাগদত্তা স্ত্রী বাগদত্তা স্বামীর বাড়িতে ৪দিন ধরে অনশন অব্যাহত রেখেছে। আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার গতকাল সোমবার সকালে জোড়গাছা গ্রামে গিয়ে বাগদত্তা স্বামীর পিতাকে দু ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে ছেলেকে হাজির করার নির্দেশ দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের বিষয়টি সুষ্ঠুভাবে সমাধান করার নির্দেশ প্রদান করেন। দফায় দফায় সালিস বসলেও বাগদত্তা স্বামী ঘটনার পর থেকে গা ঢাকা দেয়ায় সমাধান মিলছে না। অনশনকারী বাগদত্তা স্ত্রী ক্রমেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

সরেজমিনে জানা গেছে, আলমডাঙ্গা জোড়গাছা গ্রামের উত্তরপাড়ার নুর ইসলামের ছোট ছেলে সিঙ্গাপুর প্রবাসী বাশারুল ইসলাম ওরফে বাশার (২৭) ১৭ দিন আগে দেশে আসে। দেশে আসার পর পারিবারিকভাবে একই উপজেলার গাংনী ইউনিয়নের সাহেবপুর গ্রামের লাল মোহাম্মদের মেয়ে রোকসানা খাতুনের (২২) সাথে বিয়ে ঠিক হয়। গত ২০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিয়ের দিন ছিলো। গত ১৬ সেপ্টেম্বর ঘটা করে ক্ষির খাওয়া, গায়ে হলুদ ও রোকসানার গলায় ছেলেপক্ষ সোনার চেন পরিয়ে দেয়। কিন্তু বিয়ের আগের দিন ছেলে পক্ষের লোকজন মোবাইলফোনে মেয়ে পক্ষকে জানায়, মেয়ে তাদের পছন্দ নয়। তাই বিয়ে হবে না। এ সংবাদে ক্ষিপ্ত হয়ে গত ২০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বাগদত্তা স্ত্রী রোকসানা স্বামী বাশারের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে বিয়ের দাবি তোলে। এ সময় বাশার কৌশলে পালিয়ে যায়। বাশারের বাড়ির লোকজন রোকসানাকে অপমান করে বাড়ি থেকে বের করেও দিতে চায়। এ সময় বাশারের বাড়ি সংলগ্ন বাশারের চাচাতো ভাই ইকার উদ্দীন মণ্ডল ও তার স্ত্রী তাদের বাড়িতে রোকসানাকে আশ্রয় দেন। সেই থেকে অনশনকারী রোকসানা জোড়গাছা গ্রামেই রয়েছে। গায়ে হলুদের শাড়ি পরে রোকসানা জোড়গাছা গ্রামে আসে। আর কোনো কাপড়-চোপড় নিয়ে আসেনি। গতকাল সোমবার দুপুরে সরেজমিনে জোড়গাছা গ্রামে দেখা যায়, অসংখ্য উৎসুক নারী-পুরুষের ভিড়।

রোকসানা অভিযোগ করে জানায়, পারিবারিকভাবে বাশারের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়। গলায় চেন পরানো, ক্ষির খাওয়া, গায়ে হলুদ ও সামাজিক অনুষ্ঠান হয়। বিয়ে ঠিক হওয়ার পর বাশার প্রতিদিন আমার সাথে মোবাইলফোনে কথা বলতো। আমরা একে অপরকে সরাসরি না দেখে ছবি দেখে একে অপরকে পছন্দ করি। বাশার মোবাইলফোনে শপথ করে তুমি ছাড়া অন্য কারও সাথে বিয়ে করবো না। এখন সে কেন আমার সাথে বিয়ে করবে না। রোকসানা সাফ সাফ সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে বাশারের সাথে বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত এখান থেকে এক পা’ও যাবো না। রোকসানার পিতাপক্ষের লোকজনেরও একই দাবি।

এদিকে গতকাল সকাল পোনে ৮টার দিকে আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনজুমান আরা জোড়গাছা গ্রামে গিয়ে অনশনকারী রোকসানার দুঃখের কথা ধৈর্য সহকারে শোনেন এবং বাশারের পিতা নূর ইসলামকে দু ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে ছেলেকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য নাগদাহ ইউপি চেয়ারম্যান দারুস সালাম ও গাংনী ইউপি চেয়ারম্যান রেজুকে নির্দেশ দেন। এ ব্যাপারে গতকাল সকালে জনপ্রতিনিধিসহ উভয় পরিবারের লোকজন ও গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে জোড়গাছা গ্রামে সালিস বৈঠক বসে। বাশার অনুপস্থিত থাকায় সালিসে কোনো সমাধান হয়নি।

জোড়গাছা গ্রামের অধিকাংশ মানুষ রোকসানার পক্ষে। একটি দালাল চক্র বিষয়টি সমাধান করার আশ্বাস দিয়ে ছেলেপক্ষ এবং মেয়েপক্ষের কাছ থেকে দফায় দফায় মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে গুঞ্জন উঠেছে।