বয়সটা ওরকমই, নিজেকে বড় ভাবতে শুরু করে। অথচ পিতা-মাতা ছোট ভেবেই সবসময় আগলে রাখে। সে বাহুডোর থেকে কখনো কখনো মুক্ত হওয়ার স্বপ্ন দেখে। কোনো কোনো কিশোর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে হাঁটে, হুচোট খায়। মিথ্যার আবরণে সে তা আড়াল করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপহরণের মনগড়া গল্প বলে। সেই গল্পে কান দিয়ে একেবারেই আতঙ্ক যে ছড়ায় না তাও নয়। তাছাড়া নানাকে গুলি করে লাশের ওপর দিয়ে নাতিকে যখন অপহরণ করা হয়, অপহৃতকে উদ্ধার করতে লেগে যায় পক্ষকাল। উদ্ধারের আড়ালে মুক্তিপণ নাকি পুলিশি দক্ষতা তা নিয়ে যখন প্রশ্ন থাকেই, তখন নিরুদ্দেশকেও অপহরণ বলে দাবি করলে অবিশ্বাসের কি কিছু থাকে?
যে সমাজে অপহরণের আশঙ্কা পদে পদে, অভিভাবকদের সময় কাটে অনেকটা অনিশ্চয়তার প্রহর গুণে, সেই সমাজে নিরুদ্দেশও অপহরণ হিসেবে প্রচার পেলে আতঙ্ক তো ছড়াবেই। চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় ওই ছাঁয়া আতঙ্ক ভর করেছে। ছেলে ধরা ওই ছাঁয়া আতঙ্ক পুরোনো হলেও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গোপন ডেরায় রেখে মুক্তিপণ আদায় সমাজেরই হালচিত্র। বাড়িঘর-বারান্দা বা পথ থেকে নিরুদ্দেশই হোক, আর অপহরণই হোক কোনো ঘটনাকেই খাটো করে দেখার সুযোগ আছে কি? গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় পাশাপাশি দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। মেহেরপুরের শুভরাজপুরের অপহৃত স্কুলছাত্র আতাউর রহমানকে উদ্ধারের খবরটি অবশ্যই স্বস্তিকর। তাকে অপহরণের সময় বাধা দেয়ায় নানাকে গুলি করে অস্ত্রধারী অপহরকচক্র। গুলিতে নানা প্রাণ হারান। সেই ঘটনার পক্ষকাল পর ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে অপ্রহৃত শিশুকে উদ্ধারে সক্ষম হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। অবশ্য এলাকায় অপহৃতের মুক্তি নিয়ে নানামুখি গুঞ্জন রয়েছে। অপর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অপহরণ নাকি বিরুদ্দেশের পর বাড়ি ফিরে বলা হলো মনগড়া গল্প? অপহরণ হোক আর নিরুদ্দেশই হোক। এ খবর ছড়ানোর পর আলমডাঙ্গা এলাকায় অপহরণ আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ঘটনার প্রকৃত নেপথ্য উন্মোচনে পুলিশি তদন্তের দাবি রাখে। নিরুদ্দেশ ঠেকাতে হবে, অপহরণ রোধ করতে হবে। দূর করতে হবে আতঙ্ক। শঙ্কিত মন মানেই অসুস্থতা। যার কুপ্রভাব ঘরে বাইরে পড়তে বাধ্য।
শিশু-কিশোরদের নিরাপত্তার পাশাপাশি তাদের সচেতন করতে অভিভাবকদের উপযোগী পদক্ষেপের পাশাপাশি শিক্ষকমণ্ডলীকেও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন। সন্তান বড় হচ্ছে, নিজেকে বড় ভাবছে। অথচ তা না ভেবে কৈশরেও তাকে শিশুভেবে অতিমাত্রায় আগলাতে গেলে তার মুক্ত হওয়ার স্বপ্ন তীব্রতর হতে পারে। বিষয়টি ভেবেই তার সন্তানের সাথে পিতা-মাতার আচরণও বদলানো দরকার। অবশ্যই সন্তান কোথায় কখন কার সাথে মিশছে, কি করছে তা নখদর্পণে রাখতে হবে। সমাজের যে হাল তাতে অভিভাবকের সামান্য উদাসীনতা সন্তানকে টেনে নিয়ে যেতে পারে অনিশ্চয়তার অথৈ সাগরে। যেখানে পতন অনিবার্য। সর্বনাশ হওয়ার আগেই সামলাতে হবে।