স্টাফ রিপোর্টার: পুলিশ ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান দম্পতির হত্যাকারী একমাত্র কন্যা ঐশী রহমানকে অন্ধকার পথে নেয় তার বন্ধু আসাদুজ্জামান জনি। গ্রেফতারের পর জনি পুলিশের কাছে এ কথা স্বীকার করেছে। জনিকে বুধবার রাতে রাজধানীর বাড্ডা এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। গতকাল জনিকে আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। গ্রেফতারের পর জনি পুলিশকে জানিয়েছে, নেশার টাকা যোগাড় করতে অনেকের সাথে সখ্যতা হয়েছে ঐশীর। অসংখ্য চেনা-অচেনা মানুষের কাছাকাছি সময় কাটিয়েছে। শুধু তাই নয়, মোটা অঙ্কের টাকার জন্য বাইজি বেশে দুবাই যেতেও রাজী হয়েছিলো ঐশী।
গোয়েন্দা পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জনি জানিয়েছে, তার ড্যান্স গ্রুপের নাম স্টেপ আপ। এ গ্রুপের সদস্য হিসেবে ঐশীকে দুবাই নিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো। সেখানে কয়েকটি পার্টিতে অংশগ্রহণের বিনিময়ে ৫ লাখ টাকার চুক্তি হয়েছিলো। এজন্য ঐশীর নামে পাসপোর্ট ও আনুষঙ্গিক কাগজপত্র প্রস্তুত করা হচ্ছিলো। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের পর নিজেই পুলিশের কাছে ধরা দেয়ায় ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ দম্পতি মাহফুজুর রহমান ও স্বপ্না রহমান হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নিহত দম্পতির মেয়ে ঐশীকে আগেই গ্রেফতার করা হয়। ঐশী গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই এই হত্যাকাণ্ডের সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে জনিকে খুঁজছিলো গোয়েন্দা পুলিশ।
জনি গ্রেফতার হওয়ার পর গতকাল দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের যুগ্মকমিশনার (গোয়েন্দা) মনিরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ দম্পতি হত্যাকাণ্ডের পর ঐশীকে বিদেশে পালিয়ে যেতে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিলো জনি। নিজেকে ড্যান্স মাস্টার পরিচয় দিয়ে আরও অনেক তরুণীকে দেশের বাইরে পাঠানোর কথা বলে প্রতারণা করেছে সে। গত ১৬ আগস্ট সন্ধ্যায় রাজধানীর চামেলীবাগে নিজেদের ফ্ল্যাটে পুলিশের বিশেষ শাখার ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। দু সন্তান ও শিশু গৃহকর্মী খাদিজা খাতুন সুমিকে নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে থাকতেন তারা। যদিও লাশ উদ্ধারের সময় দু সন্তান ঐশী ও অহি এবং কাজের মেয়ে নিখোঁজ ছিলো। পরে ঐশী পুলিশের কাছে ধরা দেয়ার পর পুলিশ দম্পতি হত্যাকাণ্ডের রহস্য খোলাসা হতে থাকে। গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নিজের বাবা-মাকে খুন করার কথা স্বীকার করে ঐশী। একপর্যায়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে নিজের দোষ স্বীকার করে। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
গোয়েন্দা হেফাজতে ঐশী তার অনিয়ন্ত্রিত ও বেসামাল জীবন-যাপনের তথ্য দিয়েছিলো। মাদক সেবন ও অসংখ্য বয়ফ্রেন্ডের সাথে অবাধ মেলামেশার কথা স্বীকার করেছিলো। বলেছিলো, তার অবাধ স্বাধীনতায় বাবা-মা বাধা দেয়ায় তাদের হত্যা করার পরিকল্পনা করে। বিষয়টি ঘনিষ্ঠ বন্ধু জনির সাথে পরামর্শ করেছিলো। গোয়েন্দারা জানান, ডিজে ও ড্যান্স পার্টির আড়ালে অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও মাদক কেনা-বেঁচার রমরমা ব্যবসা চলে। বিত্তশালী ও প্রভাবশালী লোকজনের ছত্রচ্ছায়ায় সক্রিয় একাধিক সিন্ডিকেট ডিজে পার্টির নাম করে উচ্চাকাঙ্খী তরুণীদের টার্গেট করে। নানা ধরনের লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে বিপথে নামিয়ে আনে। এমন একটি সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছিলো ঐশী। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মোখলেছুর রহমান বলেন, পুলিশ দম্পতি হত্যা মামলার প্রধান আসামি ঐশী রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলো জনি। হত্যাকাণ্ডের পর ঐশী রহমান তার আশ্রয়ে গিয়ে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ দেয়। জনি খুনের ঘটনার পরে ঐশীকে দুবাই পাঠানোর উদ্দেশ্যে তার বন্ধু মিজানুর রহমান রনির মাধ্যমে উত্তর মুগদা এলাকার মদিনাবাগের একটি বাড়িতে আশ্রয় দেয়। এছাড়া ঐশী আদালতে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের বর্ণনায় জনির নাম প্রকাশ করে। হত্যাকাণ্ডের পর গত ১৮ আগস্ট ঐশী পুলিশের কাছে ধরা দেয়ার পর তার বন্ধু মিজানুর রহমান রনি ও জনিকে নিয়ে সন্দেহের কথা পুলিশ জানিয়েছিলো। সেই থেকে জনি রাজধানী ছাড়াও মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও গাজীপুরে পালিয়ে থেকেছে। পুলিশ এ ঘটনায় নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে মনে করে রাজধানীতে এসেছিলো। তখনই তাকে গ্রেফতার করা হয়।
এদিকে কোর্ট রিপোর্টার জানান, জনির ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। জনির বাবার নাম মো. জামাল। রাজধানীর মেরুল বাড্ডা ডিআইটি প্রজেক্ট এর ৯ নম্বর রোডের ৪০ নম্বর হোল্ডিং এর বাসিন্দা। গতকাল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আবুয়াল খায়ের মাতুব্বর জনিকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নূর ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
উল্লেখ্য, ১৬ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগে নিজেদের বাসা থেকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (রাজনৈতিক শাখা) পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।