দুর্ঘটনা : দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষকের মর্মান্তিক মৃত্যু

চুয়াডাঙ্গা-দর্শনা সড়কের জয়রামপুর বাঁকে বাসের সাথে মোটরসাইকেলের ধাক্কা : দুটি বিদ্যালয়ে আজ ছুটি ঘোষণা

 

স্টাফ রিপোর্টার: মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুজন শিক্ষক নিহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে চুয়াডাঙ্গা-দর্শনা সড়কের জয়রামপুর চা দোকান বাঁকে বাসের ধাক্কায় আছড়ে পড়ে চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলে নিহত হন শিক্ষক সোলায়মান হক রাসেল (৩৫)। আহত শিক্ষক মাহফুজুল্লাহ রহমান মাহফুজকে হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যু হয়। দু শিক্ষকের মৃত্যুতে গোকুলখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও রামনগর কলাবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আজ বুধবার ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

সোলায়মান হক রাসেল চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার রামনগর কলাবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের শ্রীকোল খালপাড়ার মৃত নবীছদ্দিনের ছেলে। মাহফুজুল্লাহ রহমান মাহফুজ গোকুলখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। কিছুদিন ধরে তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি দৌলাতদিয়াড় মাঝেরপাড়ার বাসিন্দা। তার পিতা মৃত গোলাম মণ্ডলও শিক্ষক ছিলেন। তিনি পূর্বে দামুড়হুদার হোগলডাঙ্গার বাসিন্দা ছিলেন। সোলায়মান হক রাসেল ও মাহফুজুল্লাহ রহমান মাহফুজ মোটরসাইকেলযোগে দর্শনার উদ্দেশে রওনা হয়ে দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শোকের ছায়া নেমে আসে।

প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে আমাদের দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, একটি মোটরসাইকেলযোগে দুজন শিক্ষক চুয়াডাঙ্গা থেকে দর্শনার উদ্দেশে রওনা হন। বিকেল ৫টা ৫ মিনিটের দিকে মোটরসাইকেলটি দামুড়হুদার জয়রামপুর চা দোকান নামক স্থান অতিক্রম করে বাঁকে গিয়ে বিপীরতমুখি বাসের সামনে পড়ে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরসাইকেলটি বাসের সাথে ধাক্কা মারে। আছড়ে পড়েন সোলায়ামন হক রাসেল। চাকায় পিষ্ট হয়ে তিনি ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। আর আরোহী মাহফুজুল্লাহ রহমান মাহফুজ বাসের ধাক্কায় বুকে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। মোটরসাইকেলটি গুঁড়িয়ে যায়। স্থানীয়সহ পথচারীরা ঘটনাস্থল থেকে আহত মাহফুজুল্লাহ রহমান মাহফুজকে উদ্ধার করে থ্রিহুইলারে তুলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা মাঝেরপাড়ার বাসিন্দা মাহফুজুল্লাহ রহমান মাহফুজ ও শ্রীকোল খালপাড়ার সোলায়মান হক রাসেল পৃথক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করলেও দীর্ঘদিন ধরেই তাদের মধ্যে ছিলো ঘনিষ্ঠতা। দুজন এক সাথে গতকাল বিকেলে দর্শনার উদ্দেশে রওনা হন। দর্শনায় কেন যাচ্ছিলেন তা অবশ্য নিশ্চিত করে জানা যায়নি। তবে তাদের নিকট একটি ফাইল ছিলো। মোটরসাইকেলটি ছিলো সোলায়ামন হক রাসেলের। দ্রুত গতিতে ছোটার সময় জয়রামপুর গ্রামের বাঁকে বাসের সামনে পড়ায় নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে দুর্ঘটনার শিকার হন। শিক্ষক মাহফুজুল্লাহ রহমান রাসেলের মৃতদেহ সন্ধ্যায় দৌলাতদিয়াড় মাঝেরপাড়াস্থ নিজ বাড়িতে নেয়া হয়। অপরদিকে রাসেলের লাশ নেয়া হয় তার নিজ শ্রীকোল গ্রামে। দু শিক্ষকের মৃত্যুর খবর নিজ নিজ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সহকর্মীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই শেষবারের মতো দেখার জন্য ছুটে আসেন। রামনগর-কলাবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সালাউদ্দীন শোক প্রকাশ করেন এবং একদিনের জন্য বিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, বিদ্যালয়টি একজন দক্ষ শিক্ষককে হারালো। তার মৃত্যুতে আমরা শোকাহাত। গোকুলখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি আমির হোসেন পৃথক শোকবার্তায় শোক প্রকাশ করে বলেছেন, মাহফুজুল্লাহ রহমান মাহফুজ ছিলেন একজন দক্ষ ও মেধাবী শিক্ষক। তার মৃত্যুতে বিদ্যালয়ের অপূরণীয় ক্ষতি হলো। আমরা শোকাহত। তার শোকসন্তুপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। একই সাথে বিদ্যালয় আজ বুধবার একদিনের ছুটি ঘোষণা করা হচ্ছে। এছাড়াও চিৎলা ইউপি চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান, আলুকদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল শোক প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির চুয়াডাঙ্গা জেলা সভাপতি ফজলু হক ও সাধারণ সম্পাদক রাশিদুল ইসলাম পৃথক শোকবার্তায় শোক প্রকাশ করে শোকসন্তুপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।

মাহফুজুল্লাহ রহমান মাহফুজের মৃতদেহ আজ বুধবার সকাল আটটায় গোকুলখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে নেয়া হবে। সেখানে প্রথম নামাজে জানাজা শেষে দৌলাতদিয়াড়ে নেয়ার পর দ্বিতীয় দফা নামাজে জানাজা শেষে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হবে। সংশ্লিষ্টরা এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, মাফজুল্লাহ রহমান মাহফুজ ছিলেন দু সন্তানের জনক। তার শ্বশুর দৌলাতদিয়াড় সরদারপাড়ার অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল মজিদ। স্বামীকে হারিয়ে স্ত্রী নিশাত ফারজানা শর্মি কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। দু সন্তানের মধ্যে বড় আয়মান কেজি টু’র ছাত্র। আর ছোট ছেলে আরিয়নের বয়স দেড় বছর। মাহফুজল্লাহ রহমান মাহফুজ তিন বোনের একমাত্র ভাই ছিলেন। সোলায়মান হক রাসেল ১০ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে ৬ষ্ঠ ছিলেন। তার প্রথম স্ত্রীর সাথে দাম্পত্য বিচ্ছেদ ঘটলে কয়েক মাস আগে বিয়ে করেন। তার মৃতদেহ নিজ গ্রাম শ্রীকোলে নেয়া হয়। বাসের চাকায় মাথা পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলে নিহত হওয়ায় বিকৃত হয়ে পড়ে। ফলে গতরাতেই তার নিজ গ্রামে দাফন প্রক্রিয়া করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুজন শিক্ষকের একজনের মাথায়ও হেলমেট ছিলো না। তাছাড়া জয়রামপুর বাকে মোটরসাইকেলের গতি বেশি থাকার কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। বাসটি যশোর থেকে চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশে ছুটছিলো। বাসেরও গতি ছিলো তুলনামূলকভাবে বেশি। দামুড়হুদা থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সুরতহাল রিপোর্ট প্রণয়ন করে থানায় সাধারণ ডাইরি করা হলেও মামলা রুজুর খবর পাওয়া যায়নি। বাসটিও আটক করা হয়নি।