ঝিনাইদহে দোড়া গ্রামে সেতুর নির্মাণকাজ দু বছরেও শেষ হয়নি

 

ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহ কোটচাঁদপুর উপজেলার দোড়া গ্রামের মাঝে দোড়া সেতুর পূনঃনির্মাণকাজ গত ২ বছরেও শেষ করতে পারেনি সড়ক ও জনপথ বিভাগ। খালিশপুর-ডাকবাংলা ভায়া গোপালপুর সড়কের ওই স্থানের পুরাতন সেতুটি ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন তারা। ঠিকাদার নিয়োগ করে কার্যাদেশ দেন। ঠিকাদার কিছুটা কাজ করে বলে জানা গেছে। তারপর থেকে আর কোনো দিনও কাজে হাত দেয়নি ঠিকাদার।

এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন, পুনঃনির্মাণ কাজ করতে গিয়ে পুরাতন সেতুর অর্ধেক অংশ ভেঙে গিয়েছে। আর এই ভেঙে ফেলে রাখায় মানুষের দূর্ভোগ আরো বেড়েছে। রাতের অন্ধকারে অচেনা কোন মানুষ ওই সেতু পার হতে গেলেই নিচে পড়ে আহত হচ্ছেন। মাঝে মধ্যেই ঘটছে এই দূর্ঘটনা। কিন্তু সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ করার বিষয়ে সড়ক বিভাগের কোন পদক্ষেপ নেই।

দোড়া গ্রামের শাহার আলী জানান, প্রায় দেড় বছর পূর্বে প্রথম সেতুটির পুননির্মাণ কাজ শুরু করেন ঠিকাদার। সে সময় পুরাতন সেতুর নিচে ভীত ঢালায় ও দুই পাশের এবং মাঝের তিনটি পিলার তিন ফুট উচু করে ঢালায় দেন। এই অবস্থায় ফেলে রেখে যান ঠিকাদারের লোকজন। শাহার আলী জানান, এ সময় পুরাতন সেতুর নিচে কাজ করায় জনগনের চলাচলে তেমন সমস্যা হয়নি। কিন্তু ৭/৮ মাস পর ঠিকাদার আব্দুল জলিল আবারো লোকজন নিয়ে এসে কাজ শুরু করেন। এবার তিনি পুরাতন সেতুর উপরের ছাদের অর্ধেক অংশ ভেঙ্গে ফেলেন। ছাদ ভাঙ্গার পাশাপাশি পূর্বে ঢালায় দেওয়া পিলারগুলোর উপরে আরো তিন ফুট ঢালায় দেন। বাকি থেকে যায় উপরের ছাদ ঢালায়। ভেঙ্গে ফেলা স্থান ঢালায় দিয়ে পুরন না করেই তিনি আবারো কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। গত দুই মাস এভাবে বন্ধ হয়ে পড়ে আছে সেতুটির নির্মান কাজ।

ওই গ্রামের গোলাম মোস্তফা জানান, খালিশপুর-ডাকবাংলা সড়কটি তাদের এলাকার একটি ব্যস্ত সড়ক। প্রতিনিয়ত ট্রাক-ট্রাক্টর এর পাশাপাশি সব ধরনের যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু সেতুটি ভাঙ্গা থাকায় কোন যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। কৃষকদের কৃষি পন্য আনা-নেওয়ায় মারাত্বক সমস্য দেখা দিয়েছে। পাশ্ববর্তী লক্ষিপুর বাজারে পন্য নিতে হলে কৃষককে ৪/৫ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হচ্ছে। তাছাড়া প্রতিনিয়ত ওই স্থানে দূর্ঘটনা ঘটছে। তিনি জানান, হরিনাকুন্ডু থেকে আসা নজরুল ইসলাম নামের একজন বাইসাইকেল চালক ভাঙ্গা স্থান দেখতে না পেয়ে নিচে পড়ে মারাত্বক আহত হয়েছেন। রাতের বেলায় এভাবে অনেকে পড়েছেন ভাঙ্গা ওই গর্তে। ঝুঁকি নিয়ে যারা ভ্যান-রিক্সা তুলে দেন সেতুর উপর, তাদের অনেকেই পড়ে গেছেন নিচে। তিনি জানান, বিষয়টির তারা একটা সমাধান চান। তারা দাবি করেন দ্রুত কাজটি শেষ করার।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জানান, ২০১১ সালের ১৬ মে কাজটির কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। মোট ৬ টি সেতুর কাজ একটি কার্যাদেশে। সবগুলো কাজের জন্য মোট ১১ মাস সময় দেওয়া আছে। কিন্তু ঠিকাদার ঠিক সময়ে সেতুর কাজটি শেষ করতে পারেনি। তিনি জানান, কাজের মূল ঠিকাদার শাহীনুর রহমান। পড়ে থাকা সেতুটির কাজ করছেন তার আত্মীয় আরেক ঠিকাদার আব্দুল জলিল। যিনি ঠিক সময়ে কাজ করতে না পেরে সময় বৃদ্ধি চেয়ে আবেদন করেছেন। তিনি আরো জানান, যে সেতুটির কাজ পড়ে আছে এর ব্যয় ৩৫ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে আব্দুল জলিল জানান, এলাকায় কাজ করতে যাবার পর তার কাছে চাঁদা চাওয়া হয়েছে। যে কারণে তিনি কাজ ফেলে চলে আসতে বাধ্য হয়েছেন। এ ব্যাপারে গত ৫ সেপ্টেম্বর তিনি ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করেছেন। অবশ্য এলাকাবাসী জানিয়েছেন চাঁদার বিষয়টি তিনি মিথ্যা বলছেন। কারণ কাজটি তিনি দুই দফায় বেশ দিন বন্ধ রেখেছেন। এবারও দুই মাস পূর্বে কাজ বন্ধ রেখে কয়েকদিন পূর্বে থানায় জিডি করেছেন।