জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবের আশঙ্কা : সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার

 

স্টাফ রিপোর্টার: মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার আপিল মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবের আশঙ্কায় ঢাকাসহ আজ মঙ্গলবার ভোর থেকেই সারাদেশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে র‌্যাব, সোয়াত, গোয়েন্দা, দাঙ্গা পুলিশ, বোম ডিসপোজাল ইউনিটসহ পুলিশ বাহিনীর নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়।

এদিকে মঙ্গলবার যুদ্ধাপরাধের মামলায় আপিলের রায়ে কাদের মোল্লা হেরে গেলে বুধবার ও বৃহস্পতিবার হরতাল দেবে জামায়াত। এবার রায়ের দিন হরতাল দিচ্ছে না তারা। রায় দেখে তারা কর্মসূচি দেবে। দলটির সূত্র একথা জানিয়েছে।

জলকামান, রায়টকার, ডগস্কোয়াড ও বিশেষায়িত আর্মসফোর্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখামাত্র নির্বিচারে লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল, রাবার বুলেট, এমনকি প্রয়োজনে গুলি চালানোরও নির্দেশ রয়েছে। সোমবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠকে বলা হয়েছে, পালা বদলের শেষ সময়ে কাদের মোল্লার আপিল মামলার রায়কে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবির বড় ধরনের নাশকতার ঘটনা ঘটাতে পারে। হামলা চালাতে পারে সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর ওপর। এমনকি তারা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও ভিভিআইপি ব্যক্তিবর্গও তাদের টার্গেট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে ডিপ্লোমেটিক জোনসহ স্পর্শকাতর প্রতিটি পয়েন্টের নিরাপত্তা জোরদার করা জরুরি। একই সাথে দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরের পাশাপাশি জেলা উপজেলা পর্যায়ের নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ বার্তা পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, রাজধানীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার হওয়ায় সেখানে তাণ্ডব চালাতে ব্যর্থ হয়ে জামায়াত-শিবির তাদের দুর্গ এলাকাসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় ঘোষণার পর ধর্মীয় অনুভূতি কাজে লাগিয়ে যেভাবে তাণ্ডব চালানো হয়েছিলো এবারো তাদের সে ধরনের পরিকল্পনা থাকতে পারে। তাই তারা যাতে ওই ধরনের কোনো সুযোগ না পায় সে ব্যাপারে পুলিশ বাহিনীকে আগাম সতর্ক করা হয়েছে।

ডিএমপিসূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে ঘিরে সোয়াত, র‌্যাব, গোয়েন্দা ও দাঙ্গা পুলিশের দেড় সহস্রাধিক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।  ট্রাইব্যুনালের মাজার সংলগ্ন পশ্চিম দিকের গেট সকাল ৯টার আগেই বন্ধ করে দেয়া হবে। শিশু একাডেমীসংলগ্ন পূর্বদিকের গেটটিও বন্ধ থাকবে। দু দিকেই বিপুলসংখ্যক দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মোতায়েন থাকছে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট। কেবলমাত্র অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাই আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রবেশ করতে পারবেন। অনুমোদন ছাড়া প্রবেশাধিকারের ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।      এদিকে গতকাল সোমবার থেকেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সব প্রবেশপথ ও আশপাশের পুরো এলাকায় তিনস্তরের নিরাপত্তা গ্রহণ করা হয়েছে। সোয়াত বাহিনীর সদস্যরা ট্রাইব্যুনালের মূল প্রবেশপথ সুপ্রিমকোর্টের গেটে অবস্থান করার প্রস্তুতি নিয়েছে। শিশু একাডেমীর সামনে দিয়ে ট্রাইব্যুনালের দ্বিতীয় গেটসহ সংলগ্নএলাকা, শিক্ষা ভবন, কদম ফোয়ারা, পুরনো হাইকোর্ট ও দোয়েল চত্বরসহ পুরো এলাকায় র‌্যাব-পুলিশ রণসজ্জায় সজ্জিত হয়ে ঘিরে রাখা হচ্ছে।

এ ছাড়াও রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ ৫৯টি পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাড়ে ৫ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে অন্তত অর্ধশতাধিক চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহন আরোহীদের পাশাপাশি পথচারীদের তল্লাশি করার প্রস্তুতি রয়েছে। পল্টন, বিজয়নগর, কাকরাইল, মগবাজার, মহাখালী, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, সাতরাস্তা, শাহবাগ, আরামবাগ, মালিবাগ, শাহাজানপুর, প্রেসক্লাব, দৈনিক বাংলা মোড় ও কমলাপুর, বায়তুল মোকাররম উত্তর ও দক্ষিণ গেট, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আর্মস ফোর্স মোতায়েন থাকছে। আজ মঙ্গলবার ভোর থেকেই পিপার স্প্রে, এপিসি, জলকামান ও রায়টকারসহ পুলিশ ও র‌্যাবের বিশেষ টিম টহল দেবে।

এদিকে মঙ্গলবার সকাল থেকেই ডিপ্লোমেটিক জোনে যানবাহন চলাচলে বিশেষ নজরদারির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার (কেপিআই) নিরাপত্তা আরো এক ধাপ বাড়ানো হয়েছে। আজ মঙ্গলবার ভোর থেকে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও তা কতোটা দীর্ঘ মেয়াদি হবে সে ব্যাপারে এখনো জানানো হয়নি। ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানায়, জামায়াত-শিবিরের গতিবিধির ওপর নির্ভর করে নিরাপত্তা শিথিল করা হবে।

গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানায়, সারাদেশের নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র ক্যাডার, ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্যদের গতিবিধি কঠোর নজরদারিতে থাকছে। এমনকি তারা যাতে কোনো নাশকতার পরিকল্পনা করতে জড়ো হতে না পারে বা গোপন বৈঠক করতে না পারে এজন্য গোয়েন্দাদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সোমবার বিকালের পর থেকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে শাদা পোশাকে গোয়েন্দা টহল বাড়িয়েছে ডিএমপি।