স্টাফ রিপোর্টার: নির্দলীয় সরকার পুনর্বহাল করা না হলে কোনো আলোচনা হবে না’ এই ঘোষণা দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত সংসদ চলবে। সংসদে নির্দলীয় সরকারের বিল এনে পাস করুন। তার আগে কোনো আলোচনা হতে পারে না। আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘২০০৭ সালে দলনিরপেক্ষ ব্যক্তি কেএম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান মানেনি আওয়ামী লীগ। তাই নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনাকে মানার প্রশ্নই ওঠে না, মানা হবে না। তবে নির্দলীয় সরকার পুনর্বহাল করলে তার প্রধান কে হবে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
খালেদা জিয়া রোববার রংপুর জিলা স্কুল মাঠে এক বিশাল জনসভায় ভাষণ দিচ্ছেলেন। নির্দলীয় সরকার পুনর্বহালের দাবিতে ১৮ দল জনসভার আয়োজন করে। রংপুরের জনসভার মাধ্যমে খালেদা জিয়ার বিভাগীয় জনসভা শুরু হল। বিগত জাতীয় নির্বাচনের আগে নির্বাচনী জনসভায় রংপুর আসেন তিনি।
জনসভা শেষে খালেদা জিয়া আবার বগুড়ায় যান। সেখানে রাত্রিযাপন শেষে আজ সোমবার বেলা ১১টায় রাজশাহী রওনা হবেন। তিনি বিকাল ৩টায় রাজশাহী মাদ্রাসা মাঠে জনসভায় বক্তৃতা করবেন।
ভোটের কয়েক মাস আগে এ কর্মসূচিকে বিরোধীদলীয় নেতার প্রাক-নির্বাচনী জনসভা বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। জনসভায় জাতীয় পার্টির ‘দুর্গ’ হিসেবে পরিচিত রংপুরে দলটির সাবেক দুই সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী সরকার ও সোলায়মান ফকির খালেদা জিয়ার হাতে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগ দেন।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমার দাবি নয়, আপনার দাবি। এজন্য অনেক জ্বালাও-পোড়াও করেছেন। ১৭৩ দিন হরতাল দিয়েছেন। এখন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বলছেন।
তিনি বলেন, ‘২০০৭ সালে আপনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হিসেবে বিচারপতি কেএম হাসানকে মেনে নেননি। তিনি দলনিরপেক্ষ বিচারপতি ছিলেন। আপনি এক দলের প্রধান। দলীয় ব্যক্তি হিসেবে আপনাকে নির্বাচনের সময় সরকারপ্রধান হিসেবে মেনে নেয়ার প্রশ্নই ওঠে না, মানা হবে না।’ তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ‘পাতানো’ নির্বাচনের ‘ষড়যন্ত্র’ করছে। আমি ভোট চাইতে আসিনি। পাতানো নির্বাচন রুখতে হবে। প্রশাসন ও পুলিশের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘পাতানো নির্বাচনে আপনারা অংশ নেবেন না। নিলে জনগণ আপনাদের চিহ্নিত করে রাখবে।’
সকাল থেকে তীব্র তাপদাহ থাকলেও শেষ বিকালে অঝোরে বৃষ্টি হয়। বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটে খালেদা জিয়া বক্তব্য শুরু করার পরপরই বৃষ্টি শুরু হয়। এর আগে বিকাল পৌনে ৪টায় খালেদা জিয়া জনসভাস্থলে এসে পৌঁছান, তখন জিলা স্কুল মাঠ পার হয়ে আশপাশের এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। আশপাশের জেলাগুলো থেকে বিপুলসংখ্যক লোকের সমাগম হয়। জনসভাস্থলে এসে পৌঁছানোর পর খালেদা জিয়াকে ভাওয়ানা গান গেয়ে স্বাগত জানানো হয়।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় খালেদা জিয়া রংপুরের উদ্দেশে বগুড়া ত্যাগ করেন। পথে পথে নেতাকর্মীরা তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। রাস্তার দু ধারে মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাকর্মীদের ব্যানার-ফেস্টুন ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে।
বিকাল ৪০টা ৫০ মিনিট থেকে ৪০ মিনিটের বক্তব্যে বিরোধীদলীয় নেতা সরকারের কঠোর সমালোচনার পাশাপাশি আগামীতে ক্ষমতায় গেলে তার সরকার কী করবেন তা তুলে ধরেন। দুর্নীতি, দুঃশাসন, হত্যা, খুন, গুম বন্ধ, প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধ, জবাবদিহিমূলক প্রশাসন প্রতিষ্ঠাসহ নানা অঙ্গীকার করেন। নির্বাচন কমিশনকে অথর্ব ও মেরুদণ্ডহীন আখ্যা দিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ‘এখনও সময় আছে, একটু মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়ান, তাহলে মানুষের সমর্থন পাবেন। না হলে আপনাদেরও বিদায় নিতে হবে।’
খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে কখনও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। এইবার ভোলা, ব্রাক্ষণবাড়িয়ার উপনির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। জোর করে তারা তাদের প্রার্থীকে বিজয়ী করেছেন। তাই এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না। অবিলম্বে নির্দলীয় সরকার পুনর্বহাল করুন। নইলে সরকারকে বিদায় নিতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত অপেক্ষা করব। দেখি সরকার কী করে। তারা যদি বেআইন কিছু করে তাহলে আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হব।’ উপস্থিত জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলনে নামব। আপনারা নামবেন আমার সঙ্গে? এ সময় জনতা ‘হ্যাঁ’ বলে সমর্থন জানায়। খালেদা জিয়া বলেন, রংপুরের জনগণ জেগে উঠেছে। এইবার তারা পারবেন। জনগণকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে বিএনপি প্রধান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের টার্গেট হচ্ছি আমি। তারা বলছে, হরতাল, অবরোধ করলে দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে মামলা করবে। কিন্তু আমি ভয় করি না, বহু অত্যাচার সহ্য করেছি। জেল খেটেছি। তাই এ সব আইন করে লাভ হবে না। অন্যের জন্য গর্ত করলে সেই গর্তে আপনাদের পড়তে হবে।’
সরকারি দলের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের অন্যায়ের বিচার আল্লাহ করবেন। আল্লাহ এই দুনিয়াতেই বিচার দেখাবেন।’ সব রাজবন্দির মুক্তি দাবি করে জামায়াত ও শিবিরের ওপর নির্যাতনের তীব্র প্রতিবাদ জানান বিএনপি চেয়ারপারসন। তিনি বলেন, বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। শিবির সভাপতিকে যে নির্যাতন করা হচ্ছে, তা কোনো মানুষ করতে পারে না। সীমান্তের নিরাপত্তা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, শুধু ফেলানী নয়, তার মতো অনেককে হত্যা করা হয়েছে। সীমান্তে কোনো নিরাপত্তা নেই। সরকার বোবা হয়ে গেছে। তারা প্রতিবাদ করতে পারে না। ক্ষমতায় এলে বিসিএস কোটা প্রথা ১০ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে নিয়ে আসা হবে বলে ঘোষণা করেন তিনি। বলেন, মেধার ভিত্তিতে চাকরি দেয়া হবে। পাশাপাশি ক্ষমতায় গেলে রংপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করার ঘোষণাও দেন তিনি।
সব দলকে বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে আসার আহ্বান জানিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৮ দলের বাইরে যারা আছেন, তারাও দেশ ও গণতন্ত্র বাঁচাতে আমাদের সঙ্গে আসুন। একসঙ্গে আন্দোলন করি। শুধু আন্দোলন নয়, সরকার গঠনও করব সবাইকে নিয়ে। আমরা আওয়ামী লীগের মতো বিভাজন নয়, ঐকমত্যের সরকার গঠন করব। খালেদা জিয়া বলেন, ৫ মে মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের ওপর নির্বিচারে এক লাখ ৫০ হাজার রাউন্ড গুলি চালানো হয়েছে। আবার বলা হচ্ছে ওই সব নাকি গরুর রক্ত। তারা ক্ষমতায় এসে বিডিআরে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। হরতাল ডাকলে গুলি করে মানুষ মারা হচ্ছে। ব্যর্থ সরকার ক্ষমতায় থাকলে আরও অনেককে জীবন দিতে হবে।
হরতাল আহবানকারীদের বাসায় ঢুকে গুলি করা উচিত, সরকারের মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, অবিলম্বে এ মন্ত্রীকে গ্রেফতার করুন। তিনি গুলি করে হত্যা করতে উস্কে দিয়েছেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সীমান্তবর্তী এই এলাকার কিশোরী ফেলানীকে হত্যা করেছে বিএসএফ। কিন্তু সরকার তার বিচার আদায় করতে পারেনি। সরকার মিথ্যাচার করছে এমন অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলছেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশে আবার জঙ্গিদের তৎপরতা শুরু হবে। কিন্তু দেশের মানুষ জেনে গেছে দেশকে দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদমুক্ত রাখতে হলে খালেদা জিয়ার কোনো বিকল্প নেই।
দলীয় সরকারের অধীনে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে জয় দেশের মানুষকে চমক দেখানোর কথা বলেছিলেন। কিন্তু রংপুরের জনসমুদ্র চমক দেখিয়ে দিয়েছে। এতে প্রমাণ হয়েছে রংপুর কোনো বিশেষ দলের নয়, এটা বিএনপির ঘাঁটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে গণতন্ত্র নষ্ট হয়ে যায়। শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল কায়েম করেছিলেন, আর জিয়াউর রহমান গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনেন। তাই আগামী দিনে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সার্বভৌত্ব রক্ষার জন্য সংবিধান সংশোধন করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে।
জামায়াত নেতা শামসুল ইসলাম এমপি বলেন, বেআইনি সভা-সমাবেশ শুরু করেছেন। নৌকায় ভোট দিলে জনগণ গণতন্ত্রের জানাজা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, হানাহানি বাড়ে। তথাকথিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে বিচার করা হচ্ছে। জনগণ এর জবাব দেবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশের মানুষ নির্বাচন হতে দেবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
খেলাফত মজলিশের আমির মাওলানা মো. ইসহাক বলেন, নির্দলীয় সরকার পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচির অপেক্ষায় রয়েছে জনগণ। খালেদা জিয়া নির্দেশ দিলে রেলপথ, রাজপথ ও নৌপথসহ সব যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়া হবে। সমাবেশে এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, এতদিন মানুষ জানত এটা একটি দলের ঘাঁটি, কিন্তু জনসমুদ্র প্রমাণ করে এটা খালেদা জিয়ার ঘাঁটি। বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, আওয়ামী লীগের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড হেফাজতে ইসলামের সৃষ্টি করেছে। তাই যতদিন ইসলামের ওপর আঘাত আসবে ততদিন মানুষের মনে হেফাজত থাকবে। আগামী দিনে ১৮ দল ক্ষমতায় এলে ইসলামবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড বরদাশত করা হবে না বলেও জানান তিনি।
ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, আগামী দিনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশে ইসলামী শিক্ষা থাকবে না। তারা ইতিমধ্যে বলতে শুরু করেছে মাদ্রাসা শিক্ষার হার কমিয়ে আনছে। নির্দলীয় সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না বলেও হুশিয়ারি দেন তিনি।
জেলা বিএনপি আহ্বায়ক মোজাফফ্র আহমেদের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, ১৮ দলের শরিক দলগুলোর নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি, এনডিপির গোলাম মোর্তজা, এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিমসহ স্থানীয় বিএনপি ও ১৮ দলের নেতৃবৃন্দ। রংপুর সার্কিট হাউসে কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর বেগম জিয়া বগুড়া রওনা হন। পথে তিনি হজরত কেরামত আলীর মাজার জিয়ারত করেন।
তারা সুষম উন্নয়নে বিশ্বাসী নয়: আওয়ামী লীগ সরকার বগুড়ার কোনো উন্নয়ন করেনি। সব কিছুতেই তারা দলীয়করণ ও দুর্নীতি করেছে। রংপুরে যাওয়ার আগে বগুড়া সার্কিট হাউসে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তৃতাকালে খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। এ সময় জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম তাকে ক্রেস্ট উপহার দেন। উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁন, সাংগঠনিক সম্পাদক মীর শাহে আলম, এমপি মোস্তফা আলী মুকুল, আবদুর রহমান, খাজা ইফতেখার আহমেদ, মাহবুবর রহমান বকুল, তাহাউদ্দিন নাইন, লাভলী রহমান, পরিমল দাস, শাহাবুল আলম পিপুল প্রমুখ।
খালেদা জিয়া আরও বলেন, দেশের ৯০ ভাগ মানুষ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। তাই আমরা দেশের মানুষের কাছে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, এ সরকার বগুড়া, ফেনীসহ বিএনপি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে কোনো কাজ করেনি। তারা সুষম উন্নয়নে বিশ্বাসী নয়। আওয়ামী লীগের হাতে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা ও সুষম উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই স্বৈরাচারী সরকারের হাত থেকে দেশ ও জনগণকে রক্ষা করতে হবে। বেলা পৌনে ১২টার দিকে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর রংপুরের উদ্দেশে রওনা দেয়। বগুড়া সার্কিট হাউস থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মীরা ফুল ছিটিয়ে নেতাকে বিদায় জানান। বগুড়ার উত্তর সীমান্ত শিবগঞ্জের রহবল পর্যন্ত উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের দু’পাশে শত শত নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ দাঁড়িয়ে নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। তিনিও গাড়ির জানালা দিয়ে হাত নেড়ে শুভেচ্ছার জবাব দেন।
খালেদা জিয়ার সফরকে কেন্দ্র করে পুরো উত্তরাঞ্চলে ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের মধ্যে সাজ সাজ রব পড়েছে। বগুড়ার দক্ষিণে চান্দাইকোনা থেকে উত্তরে শিবগঞ্জের রহবল পর্যন্ত এবং বগুড়া থেকে সিংড়া পর্যন্ত বগুড়া-নাটোর মহাসড়কে শত শত তোরণ শোভা পাচ্ছে। অন্য জেলাগুলোতেও একই অবস্থা।
জনসভায় যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় ২ জনের মৃত্যু : বদরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি জানান, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার জনসভায় যাওয়ার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রংপুরের বদরগঞ্জের বুলবুল আহম্মেদ (৩০) মারা গেছেন। তিনি বিকাল ৫টায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার বাড়ি উপজেলার আমরুলবাড়ি হাটখোলাপাড়া গ্রামে। তিনি মংলু মিয়ার ছেলে। এর আগে দুপুর ১২টায় একই গ্রামের এছলামুল হকের ছেলে মুদি ব্যবসায়ী আবদার আলী মণ্ডল (৩৫) মারা যান।
জানা গেছে, রোববার রংপুর জেলা স্কুল মাঠে আয়োজিত বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার জনসভায় যাওয়ার জন্য আফতাবগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে একটি ট্রাক্টরে ওঠেন প্রায় ৪০ জন যাত্রী। দ্রুতগতিতে ট্রাক্টর চলায় দুপুর ১২টার দিকে বদরগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজের কাছে সড়কের বাঁক ঘুরতে ২০-২৫ জন যাত্রী ট্রাক্টর থেকে ছিটকে পাকা সড়কে পড়েন । এ সময় আবদার আলী মণ্ডলের মাথার উপর দিয়ে ওই ট্রাক্টরের চাকা চলে গেলে তিনি ঘটনাস্থলে মারা যান। আহত হন ১২ জন যাত্রী। আহতদের মধ্যে হাটখোলাপাড়া গ্রামের মংলু মিয়ার ছেলে বুলবুল আহম্মেদ (৩০), শেখেরহাট গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে ফারুক হোসেন (৩৫), একই গ্রামের আবদুর রশিদের ছেলে শাহাদৎ হোসেন (৩৫) ও মৃত বোরহান উদ্দিনের ছেলে আলতাফ হোসেনকে (৩৫) আংশকাজনক অবস্থায় রংপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিকাল ৫টায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুলবুল আহম্মেদ মারা যান।