লাশ ময়নাতদন্ত শেষে দাফন : স্বামী শরিফুল লাপাত্তা
কাথুলী থেকে ফিরে সদরুল নিপুল: নববধূ মিতার হাতের মেহেদীর রঙ মোছার আগেই যৌতুকলোভী পাষণ্ড স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়ে অকালে না ফেরার দেশে চলে যেতে হলো। গত তিন মাসে আগে বিয়ের সময় যৌতুকের কথা না থাকলেও বিয়ের একমাস পর স্বামী শরিফুল মোটরসাইকেল কেনার জন্য দেড় লাখ টাকা দাবি করে। টাকার জন্য মাঝে-মধ্যে শরিফুল তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতো। এরই মধ্যে গত ৭ সেপ্টেম্বর শনিবার রাত ৮টার দিকে মিতাকে মুমূর্ষু অবস্থায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার পর মিতার পিতার বাড়িতে কোনো খবরও দেয়া হয়নি। একটানা ৫ দিন মৃত্যুর সাথে লড়ে গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে মিতা মারা যায়। লাশ নিয়ে স্বামী পক্ষ ও পিতা পক্ষের লোকজন টানাহেঁচড়া করলেও মিতার লাশ তার পিতার বাড়িতে নিয়ে ময়নাতদন্ত শেষে দাফন করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত স্বামী শরিফুল মিতাকে হাসপাতালে দেখতেও যায়নি। এমনকি লাশ দাফনের সময়ও আসেনি। মিতার পিতা-মাতার অভিযোগ, আমার মেয়েকে মারধর করে ঘরের আড়ার সাথে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যার অপপ্রচার চালায় জামাই পক্ষের লোকজন।
সরেজমিনে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের মোমিনপুর ইউনিয়নের কাথুলী গ্রামের কামাল হোসেনের একমাত্র মেয়ে মিতা খাতুনের সাথে গত ৩ মাস আগে আলমডাঙ্গা উপজেলার খাসকররা ইউনিয়নের পারলক্ষ্মীপুর গ্রামের শওকত মণ্ডলের ছেলে শরিফুলের (২৫) বিয়ে হয়। মিতা কাথুলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ছিলো। কামাল হোসেনের এক ছেলে ও মেয়ের মধ্যে মিতা ছিলো ছোট। মিতার পিতা মুদিব্যবসায়ী কামাল হোসেন গতকাল শুক্রবার সকালে অভিযোগ করে জানান, গত ৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার আমার বাড়ি থেকে জামাই শরিফুল মিতাকে নিয়ে যায়। পরের দিন সন্ধ্যায় খবর পাই মিতাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শরিফুলের লোকজনের ইচ্ছে ছিলো রাতেই পারলক্ষ্মীপুর গ্রামে লাশ দাফন করবে। লাশ নিয়ে টানাহেঁচড়া করার একপর্যায়ে মিতার আত্মীয়স্বজন চুয়াডাঙ্গার সদর থানার পুলিশ এবং খাসকররা ইউপি চেয়ারম্যান রুন্নুর সহযোগিতায় রাত ৩টার দিকে কাথুলী গ্রামে মিতার লাশ নেয়া হয়। অভিযোগকারী মিতার পিতা বলেন, শরীরে আঘাতের অসংখ্য চিহ্ন থাকায় ময়নাতদন্তের সিদ্ধান্ত নিই। তিনি বলেন, মিতাকে পিটিয়ে জখম করা হয়। বিয়ের পর জানতে পারি জামাই শরিফুল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। লাশ দাফনের সময় শরিফুল ও তার আত্মীয়স্বজন কাথুলী গ্রামে কেউ আসেনি।
এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহিম গতকাল শুক্রবার বিকেলে জানান, মিতার শরীরে মারধরের চিহ্ন পাওয়া গেছে। যেহেতু আসামির বাড়ি আলমডাঙ্গা থানার ভেতরে সেহেতু আমি বাদী পক্ষের লোকজনকে বলেছি আলমডাঙ্গা থানার মামলা দায়ের করার জন্য। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মিতার পিতা কামাল হোসেন বাদী হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।