অপ্রাপ্ত বয়সে ছেলেমেয়েকে বিয়ের আসনে বসানো মানেই নিশ্চিত যন্ত্রণার দিকে ঠেলে দেয়া। শুধু যন্ত্রণাই নয়, অনেক ক্ষেত্রেই অপমৃত্যুর কারণ ওই বাল্যবিয়ে। দীর্ঘদিন ধরেই বাল্যবিয়ে রোধে প্রশাসন সক্রিয় হয়েছে। যৌতুক বা পণপ্রথা ও বাল্যবিয়ে সামাজিক ব্যধি। এ ব্যধিমুক্ত সমাজ গঠনে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। যে জাগরণ ইতোমধ্যেই সামাজিক আন্দোলনে রূপ পেতে শুরু করেছে। যদিও নানা সমস্যার পাশাপাশি অসচেতনতার কারণে বাল্যবিয়ে শূন্যের কোঠায় নেয়া এখনও সম্ভব হয়নি। সমাজের সচেতনমহলের তাগিদ থাকলে তা শূন্যের কোঠায় নেয়া যে অসম্ভব নয় তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না।
মন্দ পরিহার করে ভালোরই কদর বাড়ে, সমাজ ভালোটাই গ্রহণ করে। কোনটি ভালো, কোনটি মন্দ তা জানা বোঝার মাঝে ক্ষতির খতিয়ান বাড়ে বটে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার চেয়ে সমাধানের পথে হাঁটাই শ্রেয়। এক সময় বাল্যবিয়েরই প্রথা ছিলো। সেই প্রথার বলি হয়েছে অসংখ্য মেয়ে। কালের বিবর্তনে মানুষ বুঝতে শিখেছে অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে মানেই কুড়িতে বুড়ি। অসহনীয় যন্ত্রণা, দাম্পত্য বিচ্ছেদসহ অপমৃত্যুর ঝুঁকি। অবশ্যই কোনো অভিভাবকই চান না যে, তার সন্তান অসহনীয় যন্ত্রণার অথই সাগরে হাবু-ডুবু খাক, অকালে ঝরে পড়ুক। এরপরও কেন তা হলে অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ের আসনে বসানো হচ্ছে? শুধুই কি অসচেনতা? না। আড়ালে আরও কিছু ঘটনা আছে। বিদ্যালয়ে আসা যাওয়ার পথে বখাটেদের উৎপাতে কন্যার পিতার অসহায়ত্ব এবং নাবালিকাকে ফুঁসলিয়ে তার উজ্জ্বল ভবিষ্যত নষ্ট করার ঝুঁকি বাল্যবিয়ের আসনে হাতছানি দেয়। সমাজের সচেতন ব্যক্তি এর প্রতিবাদ করতে গেলে বখাটের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পাওয়ার বদলে দিন দিন বাড়ছে। যদিও বখাটে উৎপাতরোধে প্রশাসনের বিশেষ ও বাড়তি নজরদারির তাগিদ দেয়া হয়, হচ্ছে। প্রশ্ন উঠতেই পারে, জন্মনিবন্ধন সনদ ছাড়া কাজি বিয়ে পড়াতে পারেন না। জন্মসনদ অনুযায়ী বিয়ের বয়স না হলে বিয়ে পড়ালে কাজির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রয়েছে। জন্মসনদ এবং বাস্তব বয়সের ফারাক মিলছে বলেই তো বাল্যবিয়ে হচ্ছে। এ উক্তি কাজিদের অধিকাংশের। তবে কি জন্মসনদ নিয়ে দুর্নীতি হচ্ছে? প্রশাসনকেই এ প্রশ্নের জবাব খতিয়ে দেখতে হবে। বাল্যবিয়ে রোধে অভিভাবক, কাজি ও ভুয়া জন্মসনদ প্রদানকারীর বিরুদ্ধে যথাযথভাবে আইন প্রয়োগে গড়িমসির অপর নাম দায়িত্ব অবহেলা। যা সভ্য সমাজ কামনা করে না।
১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মেয়েকে বিয়ের আসনে বসানো আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। ছেলের বয়স হতে হবে ২১ বছর। এ বয়সের পর বিয়ের আসনে বসলে বা বসালে তাদের দাম্পত্য সুখের হয়। বিষয়টি সকল অভিভাবকই যে জানেন বা বোঝেন তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কারণ সমাজের সর্বস্তরে সচেতনতার আলো এখনও ছড়ায়নি। বন্ধ করা যায়নি বখাটেদের উৎপাত। বখাটেরাও যে কারো না কারো সন্তান তা ভুললে চলবে না। তাদেরকে সুপথে রাখতে অভিভাবকদেরই দায়িত্বশীল হতে হবে। অসহনীয় যন্ত্রণাসহ অপমৃত্যুর ঝুঁকির মধ্যে সন্তানকে ঠেলে দেয়ার আগে পিতা-মাতাকে নতুন করে ভাবতে হবে। ভাবাতে হবে।