সমঝোতার উদ্যোগ নেবে না ইসি

স্টাফ রিপোর্টার: জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক সমঝোতার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন কোনো উদ্যোগ নেবে না বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ। গতকাল বুধবার কমিশন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের কাছে সিইসি এ মন্তব্য করেন। এর আগে সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের সাথে প্রাক-নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে নিজ কক্ষে এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বৈঠক করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এ সময় ইসি সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক ও অতিরিক্ত সচিব সিরাজুল ইসলাম বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তবে অন্য নির্বাচন কমিশনাররা কমিশন সচিবালয়ে উপস্থিত থাকলেও তারা বৈঠকে যোগ দেননি। বৈঠকে অংশ না নেয়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তারা।

বৈঠক শেষে ইইউ রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম হানা জাতীয় নির্বাচনে কমিশনে ইসির প্রস্তুতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তবে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিষয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের উত্তর তিনি এড়িয়ে যান। আগামী নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর বিষয়ে প্রতিনিধি দলের রিপোর্ট পাঠানোর পর সদর দফতর থেকে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে বলেও মন্তব্য করেন হানা। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এ প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করছে। ইতোমধ্যে প্রতিনিধি দলটি ক্ষমতাসীন আওয়ামী, প্রধান বিরোধীদল বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন দলের সাথে নির্বাচনী পরিবেশ-পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বুধবার নির্বাচন কমিশনের সাথে তার বৈঠক হয়।

বৈঠক সূত্র জানায়, প্রাক-নির্বাচনী পরিবেশ পর্যবেক্ষণে প্রতিনিধি দল পাঠানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছে ইইউ প্রতিনিধি দল। বৈঠকে নির্বাচনের প্রাক-প্রস্তুতি ও কমিশনের চ্যালেঞ্জিং বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া ১০ মিলিয়ন ইউরোর জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকা হালনাগাদ প্রকল্প নিয়েও আলোচনা হয়। ইইউর রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম হানা সাত সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।

ইইউর সন্তোষ প্রকাশ: সিইসির সাথে বৈঠক শেষে ইইউ রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম হানা সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কমিশনের প্রস্তুতি ও ১০ মিলিয়ন ইউরোর প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য কমিশন প্রস্তুত। স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে কমিশনের প্রস্তুতিতে আমরা সন্তুষ্ট। উইলিয়াম হানা বলেন, নির্বাচনে ইইউ অনেক পর্যবেক্ষক পাঠায়। নির্বাচন কমিশনের সার্বিক বিষয় নিয়ে আমরা একটি রিপোর্ট আমাদের হেডকোয়ার্টারে পাঠাব। এরপর আগামী নির্বাচনে ইইউর পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে হেডকোয়ার্টার সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১০ মিলিয়ন ইউরোর চুক্তি রয়েছে। আমরা এ ব্যাপারেও আলোচনা করেছি। সব দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বিষয়ে কমিশনের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাব দিতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।

রেফারির ভূমিকায় ইসি: দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল নির্বাচন না করার ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কমিশন কোনো উদ্যোগ নেবে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা (ইসি) রেফারির ভূমিকা পালন করছি। রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে আমরা উদ্যোগ নেবো না। ইইউ প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠক শেষে সিইসি আরও বলেন, সমঝোতার ব্যাপারে রাজনৈতিকভাবে রাজনৈতিক দলের নেতারাই সিদ্ধান্ত নেবেন। তাদের মধ্যে চৌকস রাজনীতিবিদ রয়েছেন। তারা জনগণের পালস বোঝেন। তারা নিজেরাই সমঝোতার ব্যবস্থা করতে পারেন। তিনি বলেন, সব দলের অংশগ্রহণেই স্বচ্ছ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আমরা আশাবাদী।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ইসিকে কোনো পরামর্শ দিয়েছে কি-না জানতে চাইলে সিইসি বলেন, তাদের সাথে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিলো টেকনিকেল। তারা এ বিষয়ে কোনো ধরনের পরামর্শ দেয়নি, দেয়ার প্রশ্নও ওঠে না। সিইসি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সাহায্যকারী একটি সংস্থা। তারা আমাদের নির্বাচনগুলোতে সাহায্য করে থাকে। পর্যবেক্ষক পাঠায়, এবারও তারা বড় একটি পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে। নির্বাচনের সময় নির্দিষ্ট হওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, নির্বাচনের একটি স্বাভাবিক সময় আছে। আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে কোনো নির্দিষ্ট সময় জানাইনি। নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণার পর আমরা দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোকে পর্যবেক্ষণের জন্য আমন্ত্রণ জানাই। এবারও তফসিল ঘোষণার পর দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানাবো। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সিইসি বলেন, জনগণের ভোট আমাদের কাছে একটি আমানত। কে জিতলো, কে হারলো তা আমাদের জন্য বড় বিষয় নয়। ভোট বাক্সে ভোট পড়লে তা গুনে দেয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। সুষ্ঠু নির্বাচন করা আমাদের দায়িত্ব। আর যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন বড় বিষয়।