অনুমোদন পেলো আরও সাত আওয়ামী বিশ্ববিদ্যালয়

 

স্টাফ রিপোর্টার: নতুন সাতটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দিয়েছে সরকার। আর অনুমোদন পেয়েছেন সরকার ঘনিষ্ঠরাই। গত সোমবার নতুন ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সংক্রান্ত ফাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষর করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বর্তমান সরকারের আমলে কয়েক দফায় এ নিয়ে ২৬টি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পেলো। দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়ালো ৭৮টিতে। ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশে সর্বমোট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়ালো ১১৩টি। এর আগে সর্বাধিক ৩৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিয়েছিলো গত বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার। আওয়ামী লীগের আগের আমলে (১৯৯৬-২০০১) অনুমোদন পেয়েছিলো ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ নতুন সাত বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য মন্ত্রণালয়ে অনেক প্রস্তাব জমা পড়েছে। ওইগুলোর মধ্য থেকে সেবার মনোভাব নিয়ে এসেছেন এবং ভালোভাবে প্রতিষ্ঠান চালাতে পারবেন- এমন ব্যক্তিবর্গকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে যেসব জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় নেই সেসব জেলার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।

অনুমোদন পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকায় ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উদ্যোক্তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরসম্পর্কের চাচা বীমা ব্যবসায়ী শেখ কবির হোসেন। রাজশাহীতে নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উদ্যোক্তা আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আবদুল খালেকের স্ত্রী অধ্যাপক রাশেদা খালেক। রাজশাহীতে প্রস্তাব করা হলেও ঝালকাঠিতে স্থাপনের শর্তে অনুমোদন পেয়েছে গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি। এর পেছনে রয়েছেন একজন প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রী। টাঙ্গাইলের কুমুদিনী ট্রাস্ট পেয়েছে রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন। জামালপুরে শেখ ফজিলাতুননেছা ইউনিভার্সিটির অনুমোদন পেয়েছেন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাতীয় সংসদের হুইপ মির্জা আজম। কক্সবাজারে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অনুমোদন পেয়েছেন স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজশাহীর জন্য আবেদন করলেও নাটোরে স্থাপনের শর্তে অনুমোদন পেয়েছে রাজশাহী সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি। প্রধানমন্ত্রীর এক উপদেষ্টার বন্ধু এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান উদ্যোক্তা বলে জানা গেছে।

বেসরকরি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলেও একের পর এক নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দিয়ে যাচ্ছে সরকার। প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছরের মধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার শর্ত থাকলেও পাঁচ বছর আগে অনুমোদন পাওয়া মাত্র ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয় এ শর্ত পুরোপুরি অনুসরণ করতে পেরেছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে সনদ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। ১০টির মতো বিশ্ববিদ্যালয় অননুমোদিত ক্যাম্পাস ও অবৈধ আউটার ক্যাম্পাস খুলে শিক্ষা-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে, যেগুলো পুলিশ দিয়ে বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়।

প্রসঙ্গত নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ১২৪টি প্রকল্প প্রস্তাব (পিপি) জমা পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে কয়েকটি প্রস্তাবনার ব্যাপারে ইতিবাচক প্রতিবেদন দিলে তার মধ্য থেকে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়। তার মধ্য থেকে সাতটির অনুমোদন দিলেন প্রধানমন্ত্রী।