চুয়াডাঙ্গায় সাবেক রেজি. প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্যানেলভুক্ত শিক্ষকদের যোগদান সংক্রান্ত একটি ভুয়া বিজ্ঞপ্তি নিয়ে চাঞ্চল্য
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় রেজি. প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্যানেলভুক্ত সাবেক শিক্ষকদের যোগদান সংক্রান্ত একটি ভুয়া বিজ্ঞপ্তি নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। একটি প্রতারকচক্র স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সাধারণ শিক্ষকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। এ নিয়ে গত শুক্রবার থেকে শিক্ষকদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা চলছে।
ভুক্তভোগী বেশ কয়েকজন শিক্ষক মাথাভাঙ্গা দফতরে অভিযোগ করে জানান, চলতি মাসের ৬ তারিখে সাবেক রেজি. প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্যানেলভুক্ত শিক্ষকদের আহ্বায়ক কমিটির সাধারণ সম্পাদক দাবি করে আজিজুল হক পত্রিকায় একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। এতে লেখা হয়, ‘চুয়াডাঙ্গা জেলার সকল উপজেলার সাবেক রেজি. প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্যানেলভুক্ত শিক্ষকদের জানানো যাচ্ছে যে, আগামী ১ অক্টোবর আপনাদের বিদ্যালয়ে যোগদান করানো হবে। এ ব্যাপারে আপনাদের সম্মতি জানানোর জন্য আগামী ৭ সেপ্টেম্বর রোজ শনিবার সকাল ন’টায় চুয়াডাঙ্গা প্রধান ডাকঘরের সামনে উপস্থিত হওয়ার জন্য জরুরিভাবে বলা হলো।’ গতকাল শনিবার ওই স্থানে শতাধিক শিক্ষক উপস্থিত হন। সেখানে উপস্থিত শিক্ষকদের সম্মতি জানানোর কথা থাকলেও সংগঠনের সভাপতি সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক উপস্থিত প্রত্যেক শিক্ষকের কাছ থেকে বিদ্যালয়ে যোগদানের জন্য এক হাজার টাকা করে উৎকোচ আদায় করেন। যারা দেননি তাদেরকে আগামীকাল সোমবারের মধ্যে টাকা দেয়ার কথা বলা হয়। আরেকটি বিষয় হলো- আহ্বায়ক কমিটিতে সাধারণ সম্পাদকের কোনো পদ না থাকলেও বিজ্ঞপ্তি প্রদানকারী লিখেছেন তিনি আহ্বায়ক কমিটির সাধারণ সম্পাদক। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের যোগদান সংক্রান্ত যেকোনো বিজ্ঞপ্তি শুধুমাত্র সরকারিভাবে প্রকাশ করা হয়। কোনো সংগঠন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারে না। তাহলে আজিজুল হক কীভাবে যোগদানের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলো।
এক হাজার টাকা উৎকোচের বিষয়ে আজিজুল হক জানান, ‘প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও তার ব্যক্তিগত সহকারীর সাথে বড় অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে সাবেক রেজি. প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্যানেলভুক্ত শিক্ষকদের যোগদান করিয়ে দেয়ার বিষয়ে আমাদের সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের একটি চুক্তি হয়েছে। প্রথমে ৫০ লাখ টাকা দিলে আমাদের যোগদানের কার্যক্রম শুরু করবে বলে জানিয়েছেন। সেই মোতাবেক আগামীকাল সোমবারের মধ্যে প্যানেলভুক্ত প্রত্যেক শিক্ষকের কাছ থেকে এক হাজার টাকা করে নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের হাতে দেয়া হবে। আগামীকাল রাতের গাড়িতে আমরা টাকা নিয়ে ঢাকায় রওনা হবো।’ চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রায় তিন লাখ টাকা নিয়ে যাওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে সদ্য বিদায়প্রাপ্ত চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আতাউর রহমান মাথাভাঙ্গাকে বলেন, ‘সকল প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারদের নিয়ে ময়মনসিংহে একটি সরকারি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কর্মশালা শেষ হওয়ার আগের দিন গত বুধবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব গিয়াস উদ্দিন আমাদের জানান, সাবেক রেজি. প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্যানেলভুক্ত শিক্ষকদের যোগদানের বিষয়ে সরকারের এখন কোনো মাথাব্যথা নেই। আপাতত তাদের যোগদান হচ্ছে না। এ বিষয়টিকে পুঁজি করে যারা উৎকোচ বা বাণিজ্য করার চেষ্টা করছে তারা সম্পূর্ণ প্রতারণা করছে। প্রতারণা করে মন্ত্রী এবং তার ব্যক্তিগত সহকারীর নাম দিয়ে সাবেক রেজি. প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্যানেলভুক্ত শিক্ষকদের কাছ থেকে যে টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে তা শিক্ষক নেতাদের পকেটস্থ হওয়া ছাড়া অন্য কিছু না।’