মাথাভাঙ্গা অনলাইন ঃ কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল-শিবিরের মাঝে ত্রিমুখি সংঘর্ষ হয়েছে। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে শুরু হওয়া এ সংঘর্ষ চলে প্রায় পৌনে এক ঘন্টা। এতে কয়েকজন গুলিবিদ্ধসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শর্টগানের প্রায় অর্ধ শত রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় পার্শ্ববর্তী শেখপাড়া বাজারে ছাত্রদল কর্মী সোহাগ ও রনির সঙ্গে ছাত্রলীগ কর্মী রাসেলের কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে বেলা ১২টার দিকে ক্যাম্পাস্থ ছাত্রদলের দলীয় টেন্টের সামনে সোহাগ ও রনিকে মারপিট করে ছাত্রলীগের রাসেলসহ কয়েক নেতাকর্মী।
এ ঘটনায় ছাত্রদল ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনার এক পর্যায়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে উভয় দল। এসময় টেন্টে অবস্থানরত শিবির নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করে আবাসিক হল এলাকায় চলে যায়।
এদিকে ছাত্রদল ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। এসময় উভয় দলের নেতাকর্মীরা প্রায় ১৫ রাউন্ড গুলি ছোড়ে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। এতে উভয় দলের ৩০ নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
আহতরা হলেন- সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী জিয়া , যুগ্ম আহ্বায়ক গাফ্ফার, সজিব, সাহিন, জনি, রতন, জহুরুল, মিজু, রাসেল, ইলিয়াচ, হালিম, সাজ্জাদসহ আরো অনেকে। এদের মধ্যে জিয়া ও সাহিনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে। তারা বর্তমানে কুষ্টিয়া সদর হাসপালে চিকিৎসাধীন।
ছাত্রদলের আহতদের মধ্যে সহ সভাপতি সোহাগ, সাংগঠনিক সম্পাদক খায়ের, দপ্তর সম্পাদক সাহেদ গুলিবিদ্ধ। এছাড়া ছাত্রদলের অন্য আহতরা হলেন- সাধারণ সম্পাদক রাসেদ, রনি, সোহাগ, কামরুল, আনিস, সিরাজ, জাহাঙ্গীর, সৌরভ প্রমুখ।
সংঘর্ষের এক পর্যায়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৪৬ রাউন্ড শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এসময় ছাত্রদল নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে সাদ্দাম হোসেন হলের সামনে গেলে হল লক্ষ্য করে পুলিশ আবারো গুলি চালায়। এসময় শিবির ছাত্রদল সংগঠিত হয়ে ছাত্রলীগকে আবারো ধাওয়া করে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়। পরে শিবির সাদ্দাম হোসেন হলের সামনে অবস্থান নিয়ে থাকে এবং ছাত্রদল বঙ্গবন্ধু হলের পেছনের গেট দিয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করে।
পরে বেলা দেড়টার দিকে ছাত্রলীগ আবারো সংগঠিত হয়ে দলীয় টেন্টে অবস্থান নেয় এবং সেখান থেকে একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি ডায়না চত্বর, প্রধান ফটক হয়ে প্রশাসসিক ভবনের সামনে সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশে নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলাকারীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেয়। এসময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তাল লাগিয়ে দেয় ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেলা ২টার গাড়ি ক্যাম্পাস ছাড়তে পারেনি।
পরে প্রশাসনের আশ্বাসে বেলা আড়াইটার দিকে তালা খুলে দিলে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, আজকের ঘটনা একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ঠিক রাখতে প্রশাসন বদ্ধ পরিকর। বর্তমানে ক্যাম্পাসের পরিবেশ শান্ত রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব ও ডিবি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন জানান, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি ছুড়েছে। বর্তমানে ক্যাম্পাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আহ্বায়ক শামীম হোসেন খান বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে ছাত্রদল আমাদের ওপর হামলা করেছে। এসময় আমরা প্রতিরোধ করলে তারা পিছু হটে। এবং পরে শিবিরকে সঙ্গে নিয়ে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে তারা আবারো আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমরা এ হামলাকারীদের বিচার দাবি করছি।’
এদিকে ছাত্রদল সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে টেন্টে অবস্থান কালে তারা আমাদের একজন কর্মীকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দিয়েছে। তাই আমরা তার প্রতিবাদ করেছি।-(মাথাভাঙ্গা এম.এম)