ফেলানি হত্যায় অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য খালাস

স্টাফ রিপোর্টার: কুড়িগ্রাম সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানি খাতুন হত্যা মামলায় অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে নির্দোষ বলে রায় দিয়েছেন বাহিনীর বিশেষ আদালত। বিএসএফ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর হওয়ায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এই রায় বাহিনীর মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার ওই রায়ে বলা হয়, বিএসএফ ১৮১ নাম্বার ব্যাটালিয়নের হাবিলদার অমিয় ঘোষের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ আদালত পাননি। বিএসএফের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মহাপরিচালকের সিদ্ধান্তের পর তারা রায়ের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে পারবেন। অবশ্য ওই রায়ের পর হাবিলদার অমিয় ঘোষকে মুক্তি দেয়া হয়েছে বলে বিএসএফ সূত্রের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, তারা বিষয়টি শুনেছেন। তবে অফিসিয়ালি তাদের কিছু জানানো হয়নি। তাদের সাথে কথা বলে জানার চেষ্টা করছেন। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্তে পঞ্চদশী ফেলানিকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ ১৮১ ব্যাটালিয়নের চৌধুরীহাট ক্যাম্পের এক জওয়ান। ফেলানির বাবা নাগেশ্বরী উপজেলার দক্ষিণ রামখানা ইউনিয়নের বানার ভিটা গ্রামের নুরুল ইসলাম নুরু ১০ বছর ধরে দিল্লিতে কাজ করতেন। তার সাথে সেখানেই থাকত ফেলানি। দেশে বিয়ে ঠিক হওয়ায় বাবার সঙ্গে ফেরার পথে সীমান্ত পার হওয়ার সময় কাঁটাতারের বেড়ায় কাপড় আটকে যায় ফেলানির। এতে সে ভয়ে চিৎকার দিলে বিএসএফ তাকে গুলি করে হত্যা করে এবং পরে লাশ নিয়ে যায়। কাঁটাতারের বেড়ায় ফেলানির ঝুলন্ত লাশের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ সরকার এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়। বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির পক্ষ থেকেও বিএসএফের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠকে ফেলানি হত্যার বিচারের জন্য চাপ দেয়া হয়। এরপর গত ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহার জেলায় সোনারি বিএসএফ ছাউনিতে কনস্টেবল অমিয় ঘোষের বিচার শুরু হয়। ৫ জন বিচারক এই বিচার প্রক্রিয়া পরিচালনা করেন। আর আদালত পরিচালনা করেন বিএসএফের গুয়াহাটি ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি কমিউনিকেশন্স সি পি ত্রিবেদী। অমিয় ঘোষের বিরুদ্ধে ভারতীয় দ-বিধির ৩০৪ ধারায় অনিচ্ছাকৃত খুন এবং বিএসএফ আইনের ১৪৬ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। ফেলানির বাবা নুরুল ইসলাম নুরু এবং মামা আবদুল হানিফ ভারতে গিয়ে এ মামলায় সাক্ষ্য দেন। মেয়ের হত্যাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন ফেলানির বাবা। কুড়িগ্রাম জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর এসএম আব্রাহাম লিংকন এ মামলায় ফেলানির পরিবারকে আইনি সহায়তা দেন। তাদের সঙ্গে বিজিবি-৪৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াউল হক খালেদও ভারতে যান মামলার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে প্রায়ই বিএসএফের গুলিতে নিরস্ত্র বাংলাদেশি নিহতের ঘটনা ঘটলেও কোনো সীমান্তরক্ষীর বিচারের মুখোমুখি হওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম।