স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি আন্দোলনের কর্মসূচি আরো কঠোর করার পথে অগ্রসর হলেও সরকার বিএনপির আন্দোলনকে আমলেই নিচ্ছে না। সরকার মনে করছে, বিএনপি আন্দোলন করে সরকারের কিছুই করতে পারবে না।
আলোচনার পথ রুদ্ধ করে দেয়ার জন্য সরকার ও বিরোধীদল পরস্পরকে দায়ী করছে। এমনি পরিস্থিতিতে গতকাল শুক্রবার বিএনপির সাংবাদিক সম্মেলনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ঘোষণা করেন, আগামীকাল রোববার নরসিংদীর জনসভায় দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সরকার পতনের ঘোষণা দেবেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার নোয়াখালীর কবিরহাটে এক সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ এবং ঢাকায় যুবদলের সমাবেশে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রায় অভিন্ন ভাষায় বলেন, প্রয়োজনে রাজপথ-রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি দেয়া হবে। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ৮টি জনসভার প্রথমটি অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল রোববার নরসিংদীতে। ঈদের পর চট্টগ্রাম ও ঢাকায় জনসভার মধ্যদিয়ে তার এ সিরিজ জনসভার সমাপ্তি ঘটবে। শেষ জনসভাটি হবে ঢাকায় এবং এ সভা থেকেই বেগম খালেদা জিয়া সর্বাত্মক আন্দোলনের ঘোষণা দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী কথা রাখেননি: এমকে আনোয়ার: বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার সরকার পতনের আন্দোলন প্রসঙ্গে গতকাল বলেন, বিএনপি কোনো সংঘাতে যেতে চায় না। এজন্যই বার বার কঠোর কর্মসূচি দেয়ার কথা বললেও শেষ পর্যন্ত আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তার কথা রাখেননি। তিনি বলেন, ১৭৩ দিন হরতাল করে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করেছিলো। ২০১১ সালে সংবিধান সংশোধন কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল থাকবে। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ৯০ দিন নির্দিষ্ট করে দেয়া হবে। কমিটির অন্য সদস্যদেরও মতো ছিলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করে বলা হয়েছিলো আগামী দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে। তবে এতে বিচার বিভাগের কাউকে সম্পৃক্ত রাখা সমীচীন হবে না। তিনি বলেন, সরকার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কেবল প্রথম অংশটি ধরে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। পৃথিবীর কোনো দেশে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা স্বপদে বহাল থেকে নির্বাচন করতে পারেন না। গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী সংসদে ঘোষণা করেছিলেন ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর সংসদ ভেঙে দেয়া হবে। কিন্তু তিনি সচিবদের সাথে বৈঠকে ঘোষণা করলেন, সংসদ বহাল রেখেই আগামী ২৪ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হবে। এতো বড় একটি সিদ্ধান্ত তিনি সংসদে বা দলীয় কোনো সভায় ঘোষণা না করে সচিবদের সাথে বৈঠকে ঘোষণা করলেন। এমকে আনোয়ার বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিলো। তাই আমরা নির্দলীয় সরকারের দাবি জানিয়েছি। নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা মেনে নেয়া হলে নির্দলীয় সরকারের প্রধান মনোনয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিএনপি আলোচনায় প্রস্তুত। দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর এক চুলও না নড়ার ঘোষণা থেকে সরে আসতে হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না, এ ধরনের কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না।
বিএনপি আন্দোলনের ভয় দেখাচ্ছে: হানিফ: বিএনপির সরকার পতনের আন্দোলনের ঘোষণা এবং আন্দোলন মোকাবেলায় সরকারের পদক্ষেপ কী হবে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, বিএনপি গত তিন বছর ধরেই সরকার পতনের আন্দোলন করছে কিন্তু কোনো ফল হয়নি। তাই তাদের আন্দোলন নিয়ে আমাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। তিনি বলেন, বিএনপি কেন আন্দোলন করবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার বদ্ধপরিকর। কোনো রাজনৈতিক সমস্যা থাকলে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব। আগামী ১২ অক্টোবর সংসদ অধিবেশন শুরু হচ্ছে। বিএনপি সংসদের এই অধিবেশনে এসে আলোচনা করতে পারে। কিন্তু তারা আলোচনার পথ রুদ্ধ করে আন্দোলনের ভয় দেখাচ্ছে। এতে কোনো ফল হবে না। তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনার পথ খোলা আছে। তারা সংসদে এসে আলোচনায় অংশ নিতে পারেন।