সমঝোতার আশায় হাত গুটিয়ে বসে আছে ইসি

 

স্টাফ রিপোর্টার: এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন কিভাবে হতে যাচ্ছে, নির্বাচনী প্রচারে সবার জন্য সমান সুযোগ থাকবে কি-না, সবদলের অংশগ্রহণে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেয়া বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষে সম্ভব হবে কি-না এসব প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব মিলছে না নির্বাচন কমিশনারদের কাছ থেকে। কেউ বলছেন, দেখি কী হয়! এখনো তো সময় আছে। আবার কেউ বলছেন, সংবিধান ও আইনের বাইরে তো আমরা যেতে পারব না। তবে আমরা চাই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্রুত সমঝোতা হোক।

নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হাফিজ গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, নির্বাচন নিয়ে এখন কিছুই বলা যাচ্ছে না। যখন সময় হবে তখন বলবো। আমরা সবার অংশগ্রহণে সব মহলে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন উপহার দিতেই আগ্রহী। নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ বলেন, আমরা খুশি হব যদি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্প্রীতির পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন হোক এবং নির্বাচনে জনমতের সঠিক প্রতিফলন ঘটুক এটাই আমরা চাই। কমিশনারদের এ ধরনের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের ধারণা, আসন্ন নির্বাচন নিয়ে খোদ নির্বাচন কমিশনই অন্ধকারে। কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা চায়, কিন্তু সে সমঝোতার আগে তাদের সঙ্গে নিষ্ফল সংলাপের ঝুঁকিও নিতে চায় না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, স্বাভাবিকভাবেই আমাদের প্রত্যাশা, সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। এ ধরনের নির্বাচনই আমাদের প্রশংসিত করতে পারে। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে যে সন্দেহ, অনাস্থা ও অনিশ্চয়তা বহাল, তাতে আমরা নিন্দিত হব না নন্দিত হব, তা বলা যাচ্ছে না।

গত ২৭ আগস্ট জাতিসংঘের প্রতিনিধি, দাতাদেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিদের সাথে ইসির বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডাবি্লউ মজিনা কমিশনের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ কী? জবাবে সেদিন সিইসি বলেছিলেন, সব দলের অংশগ্রহণ। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে যেভাবে নির্বাচন হবে বলে জানানো হয়েছে তাতে এ বিষয়ে অনিশ্চয়তা বেড়েছে বলেই নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের ধারণা। প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভা এবং সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তাতে সব দলের জন্য সমান সুযোগ থাকবে কি-না সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে গত বুধবার সিইসি বলেন, আমাদের হাতে এখনো সময় আছে। বিষয়গুলো আমরা খতিয়ে দেখবো। নির্বাচনে সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ তৈরির আইনগত দিক খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের ধারণা, মন্ত্রিসভা এবং সংসদ বহাল রেখে যে আইনই করা হোক না কেন, তা সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে সহায়ক হবে না। এ দেশের মন্ত্রী, সংসদ সদস্যরা যতটা প্রভাব-প্রতিপত্তির অধিকারী, তা অনেক উন্নত দেশে অকল্পনীয়।

নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হাফিজও গতকাল এ বাস্তবতা স্বীকার করে বলেন, সংবিধান ও আইনের বাইরে যাওয়ার সুযোগ কমিশনের নেই। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সমস্যাগুলোর সমাধান রাজনৈতিক দলগুলোকেই করতে হবে। কমিশনের এ ক্ষেত্রে কিছু করার আছে বলে মনে হয় না। মোহাম্মদ আবু হাফিজ গত বুধবার বলেন, সংসদ বহাল রেখে নির্বাচনের বিষয়টি চূড়ান্ত কি-না বা এটা প্রধানমন্ত্রীর শেষ কথা কি-না তা আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। আমরা জানি না সংসদ বহাল রেখে, নাকি ভেঙে দিয়ে নির্বাচন হবে।

সচিব সভায় বৈঠকে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সংসদ বহাল রেখে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হবে। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার আবু হাফিজ বলেন, রাজনীতিতে অনেক কথা হচ্ছে। সামনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ হতে পারে, সমঝোতা হতে পারে। কমিশন এখন সেদিকে তাকিয়ে আছে। সে জন্য ইসিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে।
এদিকে মন্ত্রিসভা এবং সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হলে সব প্রার্থীর জন্য কিভাবে সমান সুযোগ দেয়া সম্ভব হবে বা আদৌ সম্ভব হবে কি-না, সে বিষয়টি সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনারদের এখনো কোনো ধারণা নেই। সম্ভব হলে এর জন্য শুধু নির্বাচনী আচরণবিধি সংশোধন করলেই হবে নাকি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করতে হবে, সে বিষয়েও তাদের স্পষ্ট কোনো জবাব নেই। গতকাল ইসি সচিবালয়ের নিজ দপ্তরে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জাবেদ আলী বলেন, সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি কিভাবে করা যায় সে বিষয়ে আমরা আইনজ্ঞদের পরামর্শ নেবো। এ বিষয়ে নির্বাচনী আচরণবিধির প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে আরপিওতেও সংশোধনীর প্রয়োজন আছে কি-না, আমরা সেটা পর্যালোচনা করে দেখবো। তিনি বলেন, বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যরা স্বপদে বহাল থেকে প্রার্থী হলে অন্যান্য দেশে তাদের জন্য নির্বাচনী আচরণের যে বিধান আছে, তা অনুসরণ করা হতে পারে।

জাবেদ আলী আরো জানান, কমিশন এখন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছে না। তিনি বলেন, আমরা আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তাই প্রয়োজনে আইন বিশেষজ্ঞদের কাছে পরামর্শ বা সহযোগিতা নেবো। এখন ডানে-বাঁয়ে কারো সাথে কথা বলবো না।