মেহেরপুর অফিস: দুদিন পেরিয়ে গেলেও কোনো সন্ধান মেলেনি মেহেরপুরের শুভরাজপুর গ্রাম থেকে অপহৃত ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র আতাউর রহমানের। পরিবারে এখন শুধুই শোকের মাতম। পরিবারের সদস্যদের দাবি বেশ কিছুদিন থেকে চাঁদা চেয়ে আসছিলো একটি সন্ত্রাসী চক্র। তাই মুক্তিপণ আদায়ে তাকে অপহরণ করা হয়েছে। তবে তাকে দ্রুততম সময়ে উদ্ধারের ব্যাপারে আশাবাদী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে কয়েক বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাড়ি জমান অপহৃত আতাউরের পিতা আলিফ হোসেন। তার বাড়ি শুভরাজপুর গ্রামের পার্শ্ববর্তী কুতুবপুর গ্রামে। প্রবাসে থাকায় আতাউরকে নিয়ে তার মা শুভরাজপুর গ্রামে পিতা আব্দুস সালামের বাড়িতে বসবাস করছিলেন। বেশ ভালোই চলছিলো ছেলের পড়ালেখা আর সংসার। গেলো কয়েক মাস আগে সন্ত্রাসীরা আতাউরের মায়ের কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। আর এর জন্যই তার সুখের সংসারটি তছনছ করে দিলো একদল সন্ত্রাসী। এমইন বলছিলেন, ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যা। শুধু অপহরণই নয় আতাউরকে বাঁচাতে দিয়ে সন্ত্রাসীদের গুলি ও বোমা হামলায় নিহত হয়েছেন আব্দুস সালামের ভাই স্কুলশিক্ষক আব্দুল হালিম। আতাউরের ভাগ্যে কী জুটেছে তা ভেবেই ব্যাকুল হয়ে পড়েছেন স্বজনরা। একদিকে আতাউরের সন্ধান অন্যদিকে আব্দুল হালিমকে হারিয়ে গোটা পরিবার ও স্বজনসহ এলাকার বিরাজ করছে শোকের ছায়া। অপহরণ আতঙ্কও বিরাজ করছে অনেকের মাঝে। তবে পুলিশ বলছে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আতাউরকে উদ্ধারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলছে।
এলাকা ঘুরে আরও জানা গেছে, শুভরাজপুর গ্রাম থেকে ভারতীয় সীমান্ত বেশি দূরে নয়। তাকে অপহরণ করে ভারতে নেয়া হয়েছে বলে ধারণা করছেন তার পরিবারের সদস্যরা ও এলাকার অনেকেই। এলকাবাসীর অভিযোগ, সীমান্তের যে অবস্থা তাতে ভারত থেকে এসে অপরাধ ঘটিয়ে নিবিঘ্নে চলে যাওয়া সম্ভব। আবার এলাকা থেকেও একইভাবে ভারতে চলে যাওয়া অসম্ভব কিছু নয়। তাই বিজিবি সদস্যদের আরও সতর্ক হওয়ার অনুরোধ করেছেন এলাকার মানুষ। মেহেরপুর সদর উপজেলার কিছু অংশ এবং গাংনী উপজেলার সীমান্তবর্তী কিছু এলাকায় এর আগে এরকম ঘটনার সংখ্যাও কম ছিলো না। ভারত থেকে সন্ত্রাসীবাহিনী প্রবেশ করে হত্যাকাণ্ড, ডাকাতি কিংবা অপহরণের মতো দুঃসাহিক অপরাধ ঘটিয়ে ভারতে ফিরে গেছে। মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন কেউ কেউ। তাই শুভরাজপুর গ্রামের ওই ঘটনায় এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করা স্বাভাবিক। এলাকার মানুষ এমনটি জানিয়ে দ্রুততম সময়ে আতাউরকে উদ্ধারের পাশাপাশি সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে নিহতের বড় ভাই আব্দুল মান্নান বাদী হয়ে সদর থানায় অপহরণ, হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের নামে তিনটি মামলা দায়ের করেছেন। সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজুল ইসলাম জানিয়েছেন, সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে অপহরণ হওয়ায় ছেলেটিকে নিয়ে অপহরণকারীরা ভারতে নাকি বাংলাদেশে অবস্থান করছে তা জানা সম্ভব হয়নি। তাকে ওপারে নেয়া হতে পারে বলেও ধারণা করছেন তিনি।
তবে পুলিশ সুপার একেএম নাহিদুজ্জামান গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে জানিয়েছেন, দ্রুততম সময়ে শিশুটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকটি দলের অভিযান চলছে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার মধ্যরাতে শুরাজপুর গ্রামের আব্দুস সালামের বাড়িতে একদল সন্ত্রাসী হানা দিয়ে তার নাতি চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র আতাউর রহমানকে অপহরণ করার চেষ্টা করে। আব্দুস সালামের ভাই আব্দুল হালিমসহ বাড়ির লোকজন তাকে বাঁচাতে গেলে সন্ত্রাসীরা কয়েক রাউন্ড গুলি ও ৩টি বোমা নিক্ষেপ করে আতাউরকে নিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় আব্দুল হালিমের।