মেহেরপুরে মুক্তিপণের দাবিতে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র অপহরণ : সন্ত্রাসীদের বোমা নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ : অপহৃতের নানা নিহত

মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুর সদর উপজেলার শুভরাজপুর গ্রামে চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রকে অপহরণ করেছে সন্ত্রাসীরা। ওই সময় প্রতিরোধ করতে গিয়ে স্কুলছাত্রের নানা স্কুলশিক্ষক সন্ত্রাসীদের বোমা ও গুলিতে নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও এক বৃদ্ধ। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত দুটোর দিকে ওই ঘটনা ঘটে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অপহৃত স্কুলছাত্রের সন্ধান পাওয়া যায়নি কিংবা মুক্তিপণ দাবি করে কোনো ফোন করেনি অপহরণকারী সন্ত্রাসীরা। তার ভাগ্যে কি জুটেছে তার জানা যায়নি। তাকে উদ্ধারে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন অপহৃত স্কুলছাত্রের মা ও স্বজনরা। এদিকে গতকাল বিকেলে নিহত স্কুলশিক্ষকের লাশ গ্রাম্য কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলি ও নিক্ষেপ করা বোমার আঘাতে স্কুলশিক্ষক নিহত হওয়ার ঘটনায় মেহেরপুরে শিক্ষক সমাজে বইছে শোকের ছায়া।

rrrrrrrrrrrr copy

স্থানীয় ও পুলিশসূত্রে জানা গেছে, মেহেরপুর সদর উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসী আলিফ হোসেনের ছেলে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র আতাউর রহমান (১০)। পিতার অনুপস্থিতিতে সে একই ইউনিয়নের শুভরাপুর গ্রামে তার নানা আব্দুস সালামের বাড়িতে মায়ের সাথে বসবাস করে। ঘটনার মধ্যরাতে একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী হামলা চালায় আব্দুস সালামের বাড়িতে। দাবি করা চাঁদার টাকা না পেয়ে সন্ত্রাসীরা মুক্তিপণের দাবিতে আতাউর রহমানকে অপহরণ করে। ওই সময় বাড়ির লোকজনের চিৎকারে আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করতে চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীরা কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ ও তিনটি বোমা নিক্ষেপ করে আতাউরকে নিয়ে পালিয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ ও বোমাঘাতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন আতাউরের নানা আব্দুস সালামের আপন ভাই স্কুলশিক্ষক আব্দুল হালিম (৪৩)। একই সময় আহত হন প্রতিবেশী রইছুদ্দিনের ছেলে একেন আলী (৬৫) নামের এক বৃদ্ধ। ওই রাতেই তাকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীদের মধ্যে বইছে শোকের ছায়া আর এলাকাবাসীর মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। গতকাল বুধবার ভোরে নিহত স্কুলশিক্ষক আব্দুল হালিমের লাশ উদ্ধার করে প্রথমে সদর থানায় নেয় পুলিশ। পরে লাশ মেহেরপুর হাসপাতালমর্গে প্রেরণ করে। ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের লাশ স্বজনদের হাতে তুলে দেয়া হয়। ওই দিন বিকেলে নামাজে জানাজা শেষে লাশ গ্রাম্য কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়। তার দাফন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে এ ঘটনায় নিহতের স্বজন আব্দুল মান্নান বাদী হয়ে অজ্ঞাত ১০/১৫ জনকে আসামি করে হত্যা, অপহরণ ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে তিনটি মামলা দায়ের করেছেন বলে জানিয়েছেন মেহেরপুর সদর থানার ডিউটি অফিসার এসআই আব্দুল হান্নান। অপহরণকারীদের গ্রেফতার ও অপহৃত স্কুলছাত্রকে উদ্ধারে পুলিশের কয়েকটি দলের যৌথ অভিযান চলছে বলে আরও জানালেন মেহেরপুর সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজুল ইসলাম। তবে এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত স্কুলছাত্র আতাউর রহমান উদ্ধার হয়নি। এছাড়া ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।

নিহত আব্দুল হালিম মেহেরপুর সদর উপজেলার শুভরাজপুর গ্রামের শুকুর উদ্দিনের চার ছেলেমেয়ের মধ্যে ছোট সন্তান। তিনি সদর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। সংসার জীবনে তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। অপহৃত আতাউর রহমান (১০) স্থানীয় শুভরাজপুর আশার আলো কিন্ডারগার্টেনের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। এদিকে অপহৃত আতাউর রহমানকে ফিরে পেতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন মা সামেনা ও চাচা এখলাছুর রহমান।

এদিকে অপহরণের নেপথ্যে সঠিক কোনো তথ্য জানা না গেলেও এলাকার অনেকে জানিয়েছেন, চিঠি দিয়ে দু লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে ঘটনার রাতে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসী আলিফ হোসেনের ছেলে আতাউর রহমানকে অপহরণ করেছে। এদিকে সন্ত্রাসী ছোড়া গুলি ও বোমার আঘাতে স্কুলশিক্ষক আব্দুল হালিম নিহত হওয়ার ঘটনায় মেহেরপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। তারা খুনিদের গ্রেফতার দাবি করেছেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি কমর উদ্দিন এক বিবৃতিতে কালোব্যাজ ধারণ করে জেলার শিক্ষক সমাজকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শোক প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছেন।