স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে প্রতিবাদ করে পিটুনির শিকার প্রথম স্ত্রী

 

স্টাফ রিপোর্টার: সালিস বিয়েই কবুল বলেই জুলেখা তার সতীন মারুফাকে দেখতে হাসপাতালে ছুটলেন। বিয়েতে আপত্তি তোলার কারণেই মারুফাকে লাঠিপেটা করা হয়। সংজ্ঞাহীন অবস্থায় হাসপাতালে পাঠিয়ে তার স্বামী কলেজছাত্রী জুলেখার সাথে বিয়ের আসনে বসে। ঘটনাটি ঘটে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের শঙ্করচন্দ্র গ্রামে।

বিয়েতে আপত্তি তোলার কারণে জুলেখার ভাইয়েরা দু সন্তানের জননী মারুফা খাতুনকে লাঠিপেটা করে। তাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে তারই স্বামী বিয়ের আসনে বসায় গ্রামে ছি ছি রব ওঠে। অবশ্য গ্রামের কয়েকজন মাতবরের অতি বাড়াবাড়িতেই এ বিয়ে হয়েছে বলে স্থানীয় একাধিকসূত্র জানিয়েছে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের শঙ্করচন্দ্র গ্রামের ফজলুর রহমানের ছেলে মোসা (২৯) তার প্রথম স্ত্রী মারুফার সাথে দীর্ঘদিন ধরেই ঘর সংসার করে আসছেন। মারুফার পিতার বাড়ি যশোরে। তার রয়েছে এক ছেলে এক মেয়ে। এরই মাঝে তার স্বামী মোসা তার প্রতিবেশী আজির আলীর কলেজপড়ুয়া মেয়ে জুলেখার সাথে প্রেমসম্পর্ক গড়ে তোলে বলে গ্রামে গুঞ্জন ওঠে। জুলেখা-মোসার পরকীয়া নিয়ে গ্রামে আপত্তিকর কথা উঠলেও তাদেরকে আপত্তিকর অবস্থায় অবশ্য কখনোই ধরতে পারেনি কেউ। গুঞ্জনের কারণেই গ্রামে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে সালিসের আয়োজন করে। মোসার সাথে জুলেখার বিয়ের পক্ষে মতামত দেন মাতবররা। এ মতামতের আপত্তি জানিয়ে মোসার প্রথম স্ত্রী মারুফা বিয়েতে বাধা হয়ে দাঁড়ান। তিনি বলেন, আমার স্বামীকে কেউ কি কখনো ওই জুলেখার সাথে আপত্তিকর অবস্থায় দেখেছে? তা যখন কেউ দেখেনি, কেউ ধরেনি তাহলে জুলেখার অপবাদ ঘোচাতে আমার স্বামীকে বিয়ে করতে বাধ্য করা হবে কেন? এ প্রশ্নে জবাব মেলে লাঠিতে। জুলেখার এক ভাই ও দু চাচাতো ভাই রুখে ওঠে। তারা লাঠিপেটা করে মারুফা খাতুনকে। সংজ্ঞা হারান তিনি। তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করানো হয়। অপরদিকে বিয়ের আয়োজন অব্যাহত থাকে। দুপুরে জুলেখার সাথে মোসার বিয়ে সম্পন্ন করা হয়। বিকেলে মোসা তার নববধূকে সাথে নিয়ে অসুস্থ প্রথম স্ত্রী মারুফা খাতুনকে দেখতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে হাজির হয়। অসুস্থ মারুফার পাশে তার নতুন সতীন দরদি হাত বাড়ালে হাসপাতালেও ছি! ছি! রব ওঠে।

দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী, যখন প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে দণ্ডনীয় অপরাধ, তখন প্রথম স্ত্রীকে মেরে অজ্ঞান করে হাসপাতালে পাঠিয়ে স্বামীকে বিয়ের আসনে বসতে বাধ্য করা কতোটা বিধিসম্মত? এ প্রশ্নের জবাব অবশ্য গ্রামের অভিযুক্ত মাতবর মান্নান ও জহুরুলের তরফে মেলেনি।