বিয়ের পর স্বামীর পরবাস : মোবাইলফোনে স্ত্রীর ফিসফিস নিয়ে টানপড়ন!

ফলোআপ: ‍‍‌‌‌‌‌দামুড়হুদার হোগলডাঙ্গায় গৃহবধূ রহিমা বিয়ের ৭ বছর পরও করতে পারেনি স্বামীর সংসার

 

স্টাফ রিপোর্টার: দামুড়হুদা করিমপুরে গৃহবধূ রহিমা খাতুন (২৫) বিয়ের ৭ বছর পরও স্বামীর সংসার করতে পারেননি। কি করে করবে? বিয়ের মাস পার না হতেইতো স্বামী উজির আলী মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। আর স্ত্রী এদিকে এক ব্যক্তির সাথে মোবাইলফোনে ফিস ফিস করে কথা বলতে গিয়ে পরকীয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে পড়েন। এ নিয়েই দাম্পত্যে টানপড়ন। এরই এক পর্যায়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে চুয়াডাঙ্গা জেলা লোকমোর্চার একটি টিম গতকাল সোমবার হোগলডাঙ্গা ও কমিরপুর গ্রাম সরেজমিন পরিদর্শন করে। এ সময় স্পষ্ট হয়ে ওঠে কেন সংসার টিকছে না, কেন বাজচ্ছে বিচ্ছেদের সুর।

স্থানীয়রা জানিয়েছে, চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা উপজেলার নতিপোতা ইউনিয়নের হোগলডাঙ্গা গ্রামের উত্তরপাড়ার আব্দুর রহমানের ৪ মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে রহিমা খাতুন। ৭ বছর আগে রহিমা খাতুনের সাথে তার খালাতোভাই করিমপুরের উজির আলীর বিয়ে হয়। দেনমহর ধার্য কর হয় মাত্র ৫শ টাকা। বিয়ের মাসখানেকের মাথায় উজির আলী মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। রহিমা খাতুনের মা ফজিলা খাতুন জানান, নিজের কোনো ছেলে সন্তান নেই। ৪ মেয়ে। বড় বোন শাহানারা বেগমের ৪ ছেলে ১ মেয়ে। তার বড় ছেলে উজির আলীর সাথে আমার বড় মেয়ে রহিমার বিয়ে দিই। বিয়ের পরই জামাই বিদেশ যায়। সে সময় ২ লাখ দেয়া হয়। বিদেশ যাওয়ার পর উজির আলী আমার মেয়ে সাথে আর যোগাযোগ রাখেনি। ১২/১৩ দিন আগে উজির আলী ছুটিতে বাড়ি ফেরলেও আমাদের সাথে কোনো যোগাযোগ হয়নি। এখন বলছে ৫/৭ লাখ টাকার বিনিময়ে হলেও রহিমাকে ডিভোর্স দিয়ে দেবে। চাপও দিচ্ছে সে। অপরদিকে উজির আলীর বাড়ি পৌঁছুলে শোনা যায় পাল্টা অভিযোগ। উজির আলীর মা অর্থাৎ রহিমার শাশুড়ি মা শাহানারা বেগম বলেছেন, আমার বোনের মেয়ে মানেই আমার মেয়ে। মেয়ের মতোই তাকে দেখে রেখেছি। আমার ছেলে বিয়ের পর বিদেশ গেলেও পুত্রবধূ বাড়িতে থাকতো। মায়ের বাড়িতেও বেড়াতে যেতো। আমাদের এখানে থাকাকালে গভীররাতে মোবাইলফোনে কথা বলতো। মনে করতাম ছেলে উজির বিদেশ থেকে ফোন করেছে। প্রতিরাতেই দীর্ঘ সময় ধরে কথা বলায় সন্দেহ হয়। আমার ছোট ছেলে ইজারুল ইসলাম কৌশল অবলম্বন করে। রাতে কথা বলার সময় রহিমা কার সাথে কথা বলছে তা। বেশ কিছু দিন আগে এক রাতে মোবাইলফোনে কথা বলার সময় ইজারুল মোবাইল কেড়ে নিয়ে জানতে চায় কার সাথে সে কথা বলছে। পরে ওই মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে জানা যায়, কালীবকরী গ্রামের সাইদুরের সাথে প্রতিরাতে রহিমা কথা বলতো। বিষয়টি জানাজানি হলে যেমন সাইদুর তার স্ত্রী সাথে মনোমালিন্য হয়। এক পর্যায়ে উজির আলী বিষয়টি জেনে যায়। সেই থেকে রহিমার সাথে বনাবনি না হওয়ায় বাপের বাড়ি চলে যায়।

সরেজমিনে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা লোকমোর্চার সভাপতি অ্যাড আলমগীর হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক কহিনুর বেগম, নির্বাহী সদস্য লিটু বিশ্বাস, জুলিয়াস আহমেদ মিল্টু, দামুড়হুদা উপজেলা লোকমোর্চার সাধারণ সম্পাদক সহিদুল ইসলাম এবং সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন জেলা লোকমোর্চার সচিব শাহনাজ পারভীন শান্তি। শোনার পর বিষয়টি সমাধানের জন্য জেলা লোকমোর্চার অফিসে উপস্থিত হওয়ার জন্য বলেন।

প্রসঙ্গত, দামুড়হুদা উপজেলার আব্দুর রহমানের মেয়ে রহিমা ৭ বছর আগে একই ইউনিয়নের করিমপুর গ্রামের মসলেম আলীর ছেলে উজির আলীর সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর উজির আলী মালেয়েশিয়া যাওয়ার জন্য ২ লাখ টাকা যৌতুক নিয়ে বিদেশে যান। হোগলডাঙ্গা গ্রামে গৃহবধূ রহিমা খাতুন (২৫) বিয়ের ৭ বছর পার করলেও আজও স্বামীর সংসার করতে পারেননি। ২ লাখ টাকা যৌতুক দিলেও রহিমার পিতা-মাতা মেয়েকে একদিনের জন্যেও স্বামীর বাড়িতে পাঠাতে পারেননি। স্বামী উজির আলী প্রবাস থেকে ফিরে স্বেচ্ছায় তালাক নেয়ার জন্য হুমকি প্রদান করছে বলে অভিযোগযুক্ত প্রতিবেদন গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।