শিশুদের সুপথে রেখে সুহালে বড় করে তোলার দায়িত্ব বড়দেরই। সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব পরিবারের পাশাপাশি রাষ্ট্রেরও। অবশ্যই শিশুকে মানসিকভাবে বড় করে তুলতে তার অভিভাবকদেরই অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হয়। শিশুর মূল শিক্ষালয় কিন্তু তার বাড়ি, পরিবারের বড়রাই মূলত এ শিশুর শিক্ষক, নিরাপদ আশ্রয়ের প্রতীকও। পরিবারেরই কোনো কোনো সদস্যের অতিরিক্ত শাসন অনেক সময়ই শিশুকে বিপথগামী করে তোলে যেমন, তেমনই সুপথে রাখার মতো সুনজরে ঘাটতিসহ অবাধ স্বাধীনতাও তাকে বেয়াড়া করে তুলতে পারে। ফলে শিশুর প্রতি সর্বদা সতর্ক দৃষ্টিই কাম্য। জগতের এমন কোনো মাতা-পিতা নেই যে, তারা তার নিজের সন্তানের সফলতা কামনা করেন না, নিজে না পারার কষ্টটা সন্তানের পারার মধ্য দিয়েই পেতে চান অধিকাংশ পিতা-মাতা। কিন্তু সেই সফলতা অর্জনের জন্য করণীয় সম্পর্কে আমরা অধিকাংইশ তা জানি না, জানার চেষ্টাও করিনা, বুঝি না। জানা বোঝার চেষ্টা করলেও পর্যাপ্ত সুযোগের যে অভাব তা বলাই বাহুল্য। সন্তানকে সুপথে রাখতে দক্ষতা বৃদ্ধি প্রয়োজন বটে।
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত। শিশুকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে না পারলে জাতির উজ্জ্বল ভবিষ্যত আশা করা অবান্তর। শিশুকে সুপথে রাখতে, সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে সর্বপ্রথম প্রয়োজন তার মায়ের শিক্ষা। শিক্ষিত মা-ই পারে তার সন্তানকে সুপথে রাখতে, মানসিকভাবে বড় করতে। অবশ্য এ জন্য তেমন পরিবেশও প্রয়োজন হয়। মা যদি পারিবারিক নির্যাতনে নিপিড়ত হতে থাকে তাহলে তিনি তার সন্তানকে সুহালে বড় করে তুলবেন কীভাবে। আমাদের সমাজে নারী শিক্ষার পথ পূর্বের তুলনায় অনেক সুগম হয়েছে। তবে আরো মসৃণ আরো নিরাপদ যে দরকার তা বলাই বাহুল্য। নারী শিক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি পারিবারিকভাবেও শিশুদের প্রতি যত্নবান এবং শিশুদের মানসিকভাবে বড় করতে তাদেরকে না বলা থেকে বিরত থাকার মতো পরিবেশও খুবই জরুরি। শিশুর সাথে কেমন ব্যবহার কাম্য, কেমন ব্যবহার করে তাকে সুপথে রাখা সম্ভব এ বিষয়ে অভিভাবকদের বিশেষ করে নতুন পিতা-মাতাকে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এ প্রশিক্ষণের জন্য আলাদাভাবে বিদ্যালয় বা প্রশিক্ষণালয়ের প্রয়োজন নেই, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মাঠ পর্যায়ে কর্মরতদের বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নতুন মা বাবাকে সচেতন করার বিশেষ উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এছাড়াও শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মাধ্যমেও সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার কতর্ব্য এবং সন্তানকে সুপথে রাখতে পিতা-মাতার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করার বিশেষ উদ্যোগ নিলে তা ফলপ্রস্যু হতে বাধ্য। তাছাড়া সমাজের সচেতনমহলের দায়িত্বও অনেক। অবশ্যই সকল পিতা-মাতাই তার সন্তানকে সুপথে রাখতে চান। সন্তান হোক আনুগাত্য, বাধ্য সন্তানই কাম্য। কিন্তু এজন্য যা যা করার দরকার তা কি যথাসময়ে করা হয়, হচ্ছে? না, যদি যথা সময়ে সন্তানের প্রতি যথাপোযুক্ত দায়িত্ব পালন করা যায় তাহলে অবশ্যই সন্তান সুপথে থাকতে চলতে বাধ্য।
সন্তানকে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে, পড়তে হবে এমন মানসিকতা লালন করে বাধ্য করতে গেলে বিগড়ে যাওয়ার ঝুঁকিই বেশি। পড় পড় করে নয়, পড়ার পরিবেশ গড়ে তুলতে পরিবারের সকলকেই শিশুর প্রতি যত্নবান হওয়া পয়োজন। সকলেই যদি শাসনের দৃষ্টিতে রাখতে শুরু করে তাহলে সেই শাসনের বেড়া অসহনীয় হয়ে ওঠা স্বাভাবিক। তাই বলে শাসন করতে হবে না? অবশ্যই সেটা সন্তানের মন বুঝে, পরিবেশ বুঝেই করতে হবে। পরিবারের শিশু সদস্যের সাথে সকলেই যদি কড়া ভাসায় কথা বলে তাহলে সে স্বস্তি খুঁজতে বিপথে পা বাড়াতে পারে। তাছাড়া সকল অভিভাবককেই ভাবা দরকার, শিশু এক সময় কিশোর হচ্ছে। এ বয়সে ওরা নিজেদেরকে একটু স্বনির্ভর করতে চায়, বড় হয়েছে ভাবতে চায়, সেই ভাবনা কি ওদের অন্যায়? কটাক্ষের বদলে সতর্ক প্রশংসা আর সুপথের উপদেশে অধিক সুফল মেলে। অন্যায়ে বকাবাকি, মারধরের চেয়ে অন্যায়কে অন্যায় হিসেবে জানিয়ে বা বুঝিয়ে তাকে সুধরে নেয়ার সুযোগ দিতে হবে।