দামুড়হুদার উজিরপুর গ্রামে মাসভর ২০ টাকায় আর্সেনিকমুক্ত নিরাপদ খাবার পানি

 

তাছির আহমেদ: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার উজিরপুর গ্রামের সুবিধাভোগী পরিবারগুলো স্থায়ী প্রকল্পের আওতায় মাসিক ২০ টাকায় আর্সেনিক ও আয়রণমুক্ত নিরাপদ খাবার পানি পাচ্ছে। নামমাত্র টাকার বিনিময়ে নিরাপদ খাবার পানি পেয়ে গ্রামবাসী উৎফুল্ল, সেই সাথে অনুনয় জানিয়েছে, পানি সরবরাহের সময় কিছুটা বাড়ানো।

জানা গেছে, দামুড়হুদা উপজেলার এ পল্লীতে প্রায় সাত বছর আগে টিউবওয়েলের পানি পরীক্ষা করে অতিমাত্রায় অর্সেনিক ধরা পড়ে। গ্রামটি সেই থেকে আর্সেনিক কবলিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়। গ্রামের সাধারণ মানুষগুলোকে আর্সেনিকের ভয়াবহ কবল থেকে রক্ষা করতে চুয়াডাঙ্গা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর একটি যুগোপযোগী স্থায়ী প্রকল্প গ্রহণ করেন। ইউনিসেফের অর্থায়নে ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রকল্পের পাইপলাইনের মাধ্যমে আর্সেনিক ও আয়রণমুক্ত খাবার পানি পৌঁছে দেবে মানুষের দোর গোড়ায়। গভীর নলকুপ থেকে পানি উত্তোলন করে পানি ট্যাঙ্কে এনে তা একটি প্লান্টের মাধ্যমে শোধন করে পাইপ লাইনের মাধ্যমে মহল্লার ৩২টি কমিউনিটি ট্যাঙ্কে প্রতিদিন সকাল-বিকেল এক ঘণ্টা করে প্রায় ছয়শটি পরিবারে সরবরাহ করা হচ্ছে। সমিতির মাধ্যমে প্রকল্পটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পরিবার প্রতি মাসিক ২০ টাকা হারে চাঁদা নির্ধারণ করেছে। এ টাকা বিদ্যুত বিল, পাইপ-লাইন মেরামতসহ প্রকল্পের কাজে ব্যয় করা হয়ে থাকে।

উজিরপুর গ্রামের আজিজুল, রেজাউল হক, জুলহাস মণ্ডল, আবুল হাসেম ও ওলি মহম্মদ বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে গ্রামে টিউবওয়েলের পানিতে আর্সেনিক ধরা পড়ার পরও নিরাপদ খাবার পানির অভাবে আমরা জেনেশুনে আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করেছি। প্রকল্পটি থেকে অল্প খরচে আর্সেনিক ও আয়রণ মুক্ত নিরাপদ খাবার পানি পেয়ে এখন তা পান করছি। ৯ নং কমিউনিটি ট্যাঙ্ক থেকে নিরাপদ খাবার পানি নিতে আসা গাংপাড়ার রফিকুল বলেন, নিজ মহল্লার বাইরে এ প্রকল্পটির অবস্থান হওয়ায় প্রতিদিন নিরাপদ খাবার পানি পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ কমিউনিটি ট্যাঙ্ক এলাকার বাসিন্দা ও স্কুল পড়ুয়া পপি ও সালমা বলে, আর্সেনিকের বিষয়ে ক্লাসে শিক্ষকরা বলেছেন, আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করলে রোগ হয়, তাই এখানে এসেছি আর্সেনিকমুক্ত খাবার পানি নিতে। গৃহবধু কনিকা বললেন, এ নিরাপদ পানি ছাড়া আমাদের পরিবারের কেউ অন্য কোনো পানি পান করে না। পাইপ লাইনে পানি আসার সময় হলে সকাল-বিকেলে লাইন দিয়ে আমরা পানি নিয়ে থাকি। পাড়ায় পাড়ায় পাইপ-লাইনের মাধ্যমে নিরাপদ খাবার পানি পেয়ে আমরা সবাই খুব খুশি।

৬ নং কমিউনিটি ট্যাঙ্ক থেকে স্কুলপাড়া এলাকার বাসিন্দা আমেনা বেগম, নুরী বেগম ও গৃহবধূ মর্জিনা জানান, সকালে সাড়ে ছয়টা থেকে সাড়ে সাতটা এবং বিকেল তিনটা থেকে চারটা পযর্ন্ত আমরা এ ট্যাঙ্ক থেকে নিরাপদ খাবার পানি নিতে আসি। প্রায় ৪৫টি ঘর এ ট্যাঙ্কের আওতায়। স্বল্প সময় তাই মিলেমিশে পানি নিতে হয়। আপনারা তো সাংবাদিক ভাই, তাই ওনাদের বলে যদি সকাল দুপুর আর বিকেলে, আরও এক ঘণ্টা সময় বাড়িয়ে পানির ব্যবস্থা করে দিতে পারতেন তাহলে সকলেই আমরা পরিপূর্ণভাবে নিরাপদ খাবার পানি নিতে পারতাম। সকাল বেলার বাসি কাজ ফেলে তাহলে আর লাইনে দাঁড়াতে হতো না। গ্রামের ইউপি সদস্য আ. খালেক বলেন, গাংপাড়া ও মাঠপাড়ায় পাইপ-লাইনের সংযোগ দেয়া হলে, পুরো গ্রামটি এ আর্সেনিকমুক্ত পানি সরবরাহের  প্রকল্পের আওতায় আসবে।

উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সাইদ-উর রহমান বলেন, আর্সেনিক এক প্রকার অদৃশ্য বিষ। যা স্বাদহীন, গন্ধহীন, ভঙ্গুর মৌলিক পদার্থ। ভূগর্ভস্থ আগ্নেয়শিলা আর্সেনিকের মূল উৎস। ভূগর্ভস্থ পানিতে অজৈব আর্সেনিক পাওয়া যায়। আর্সেনিকযুক্ত পানি পরিহার করে নিরাপদ পানি পান করা উচিত। নিয়মিতভাবে কিছুদিন ধরে আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করলে নানা উপসর্গে আর্সেনিকোসিস রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। আর্সেনিক রোগী ক্রমান্বয়ে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়।