চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে হামলা পাল্টা হামলায় পরস্থিতি উত্তপ্ত : হাসপাতালসহ কয়েকটি স্থানে পুলিশি টহল জোরদার

জনিকে তাড়িয়ে ধরে কুপিয়ে জখম : ছাত্রলীগ নেতা রাজুর বাড়ি ভাঙচুর আগুন

 

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগের একাংশের সমর্থক পলাশপাড়ার জনিকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। গতরাত আটটার দিকে চুয়াডাঙ্গা পান্না সিনেমাহলের অদূরবর্তী স্থানে তাড়িয়ে ধরে তাকে ধারালো অস্ত্র দা দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়। এ ঘটনার পরপরই কলেজ ছাত্রলীগের স্কুলবিষয়ক সম্পাদক রাজুর ইমাজেন্সি সড়কের বাড়িতে হামলা চালিয়ে আংশিক ভাঙচুর করা হয়। আগুনও ধরিয়ে দেয়া হলেও তা অবশ্য দ্রুত নিভিয়ে ফেলায় ক্ষতির পরিমাণ কম হয়েছে।

পাল্টাপাল্টি হামলার পর শহরে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। কিছু যুবক মোটরসাইকেলযোগে কবরীরোডস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে কিছুক্ষণ উত্তপ্ত বাক্য আওড়ায়। এমপির বিরুদ্ধে ফাঁকা অভিযোগও উত্থাপন করে। হামলার শিকার জনি চুয়াডাঙ্গা পলাশপাড়ার গোলাম সরোয়ারের ছেলে। তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। অবশ্য গতরাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জনিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রেখেই চিকিৎসা চলছিলো। জনির নিকট থেকে হামলার বর্ণনা শোনার পর অভিযুক্ত রাজু, তারেক ও আতাউলসহ তাদের পক্ষের ছেলেদের খুঁজতে শুরু করেন অপরপক্ষের নেতাকর্মীরা।

বেশ কিছুদিন ধরেই চুয়াডাঙ্গা ছাত্রলীগের মধ্যে মতভেদ ফুঁটে উঠতে শুরু করেছে। এই জনির ওপর কিছু দিন আগেও চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল এলাকায় হামলা চালানো হয়। অবশ্য সে দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়াসহ হালকা আহত হওয়ার মধ্যই সীমাবদ্ধ থেকে যায়। গতরাত আটটার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের সিনেমাহলপাড়ার একটি দোকানের সামনে জনি অবস্থান নেয়। খবর পেয়ে তার প্রতিপক্ষরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। জনি দৌড়ে সরে পড়ার চেষ্টা করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছে, তাড়িয়ে ধরে তাকে ধারালো অস্ত্র দা দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়। মাথায়, কানের পাশে ও হাতে বেশ কয়েকটি স্থানে ক্ষত হয়েছে। তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে তার পক্ষের ছাত্রলীগ নেতাকর্মী সমর্থকদের বিশাল বহর হাসপাতালে হাজির হয়। চিকিৎসার খোঁজখবর নেয়ার পাশাপাশি কারা কেন হামলা চালিয়েছে তারও বর্ণনা শোনেন। এরই এক পর্যায়ে সেখান থেকে একদল যুবক মোটরসাইকেলযোগে চুয়াডাঙ্গা ইমার্জেন্সি সড়কের বাসিন্দা আব্দুল লতিফের ছেলে রাজুর বাড়িতে হামলা চালায়। জানালা ভাঙচুর করে। জানালা দিয়ে ভেতরে দাহ জাতীয় পদার্থ ছুড়ে মেরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়। খবর পেয়ে সদর থানার একদল পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে হাজির হয়। হামলাকারীরা সটকে পড়ে। অপরদিকে হাসপাতাল থেকেই পৃথক একটি দল কবরিরোডস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে রাস্তায় মোটরসাইকেল দাঁড় করিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সম্পর্কে কটুক্তি আওড়ায়। দলীয় কার্যালয় অবশ্য এ সময় বন্ধ ছিলো। কার্যালয় সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যের বাড়িতেও তেমন কেউ ছিলেন কি-না তা নিশ্চিত করে জানা সম্ভব হয়নি।

জনির ওপর হামলা চালানোর অভিযোগে অভিযুক্তদের মধ্যে রাজু অন্যতম। এই রাজুকে গত বছরের ৬ সেপ্টম্বর রাত আটটার দিকে চুয়াডাঙ্গা কেদারগঞ্জ ইম্প্যাক্ট হাসপাতালের অদূরে নৃশংসভাবে কুপিয়ে জখম করা হয়। তার একটি চোখসহ শরীরে অসংখ্য কোপ ছিলো। সেই রাজু সুস্থ হয়ে নিজ এলাকায় ফিরে কয়েকদফা হামলার অভিযোগে অভিযুক্ত হলো। রাজু আহম্মেদ চুয়াডাঙ্গা কলেজ ছাত্রলীগের স্কুল ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক। তবে রাজু বলেছে, ওই হামলার সাথে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। অপরদিকে জনি ছাত্রলীগের একাংশের তথা জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সমর্থিত অংশের সক্রিয়কর্মী। এ অংশের অন্যতম নেতা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মামলার প্রস্তুতি চলছিলো। মামলায় তারেক, রাজু ও আতাউলসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হাসপাতালসহ জেলা শহরের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রাতে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়।