মাথাভাঙ্গা অনলাইন: ঢাকায় চাকরি দেয়ার নামে শতাধিক ভুয়া প্রতারক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে৷ তারা কেউ পোশাক কারখানায়, আবার কেউবা তাদের কথিত স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্পে চাকরি দেয়ার নামে বেকার তরুণ-তরুণীদের কাছ খেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে৷
পুলিশ অভিযান চালালেও কিছুই করা যায়নি৷
বাংলাদেশে পত্রিকার পাতা খুললেই ১০০ ভাগ চাকরির নিশ্চয়তা দিচ্ছে এমন নানা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে৷ বেকার তরুণ-তরুণীরা সেই বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হয়ে যখন চাকরির জন্য যান, তখন হন প্রতারিত৷
এরকম এক প্রতারিত যুবকের নাম নওশাদ আহমেদ৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে জানান, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে মতিঝিলের গ্রামীণ বায়িং হাউজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে যান তিনি৷ যাওয়ার পর, তারা তাকে গার্মেন্টসে ১২ হাজার টাকা বেতনে কোয়ালিটি সুপারভাইজার পদে নিয়োগ করার ব্যাপারে চূড়ান্ত করেন৷ আর তারপরই শুরু হয় প্রতারণা৷ প্রথমে নিয়োগপত্র এবং পরিচয়-পত্রের জন্য দুই হাজার টাকা৷ এরপর প্রশিক্ষণের জন্য তার কাছ থেকে নেয়া হয় আরো ১০ হাজার টাকা৷
আদতে কিন্তু প্রশিক্ষণ বলতে অন্য কিছু না শুধু সাত দিন অফিসে বসিয়ে রাখা হয়৷ আর কাজে যোগদানের দিন তাকে পাঠানো হয় একটি অখ্যাত পোশাক কারখানায় শ্রমিক পদে৷ বেতন মাত্র তিন হাজার টাকা৷
শুধু নওশাদ নয়, এরকম আরো শত শত প্রতারিত তরুণ-তরুণী এখন প্রতিকারের জন্য সংবাদমাধ্যমের শরণাপন্ন হচ্ছেন৷ কেন? জানতে চাইলে রেজাউল করিম নামের আরেক প্রতারিত যুবক জানান, তিনি সুহা ফ্যাসান নামে একটি প্রতিষ্ঠানে প্রতারিত হওয়ার পর পল্টন থানায় মামলা করেন৷ কিন্তু প্রতারকরা উল্টে তার বিরুদ্ধেও মিথ্যা চুরির মামলা করে দেয়৷ তিনি জানান, শুধু পল্টন এবং মতিঝিলেই এরকম ৩০টি প্রতিষ্ঠান আছে যারা চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণা করে৷
আরেক গ্রুপ প্রতারক আছে যারা সারা দেশে তাদের কথিত স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্পে চাকরি দেয়ার নামে বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে৷ চাকরি প্রার্থীরা চাকরির জন্য গেলে তাকে তার উপজেলায় সমন্বয়কারী হিসেবে নিয়োগ দেয় এবং ‘সিকিউরটি মানি’ হিসেবে ১০ হাজার টাকা নেয়৷
এরপর তাকে আবার বলা হয় ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়োগ দিতে৷ তার মাধ্যমেও নেয়া হয় তাদের জামানতের টাকা৷ পরে সারা দেশ থেকে এভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে প্রতিষ্ঠানটি উধাও হয়ে যায়৷
মিরপুর এলাকা থেকে পুলিশ জাহাঙ্গির আলম নামে এ রকম এক প্রতারকে গ্রেপ্তার করেছে, যে গত দুই বছরে ভিন্ন ভিন্ন নামে ১২টি প্রতিষ্ঠান খুলে চাকরির নামে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়েছে৷
মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাউদ্দিন আহমেদ জানান, জাহাঙ্গির আলম সর্বশেষ মিরপুরের শেওড়া পাড়ায় পল্লি বিকাশ লি. নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে আবারো প্রতারণা শুরু করে৷ খবর পেয়ে তাকে আটক করে তার বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে৷
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, তারা এসব প্রতারক চাকরি দাতা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান চালান৷ তবে প্রতারিতরা প্রায়ই অভিযোগ না করায় তারা অনেক সময় কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন না৷ তিনি বলেন, রাজধানীতে এ রকম শতাধিক প্রতিষ্ঠান আছে বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে৷ তাদের গ্রেপ্তার করলেও তারা জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার প্রতারণা শুরু করে৷ তাই তিনি এ জন্য চাকরি প্রার্থীদেরও সতর্ক এবং সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন৷