মাথাভাঙ্গা অনলাইন: মানুষের তৈরি একের পর এক মহাকাশযান মঙ্গলগ্রহে গেছে, সেখানে প্রাণের খোঁজ করছে৷ মানুষের বসতি স্থাপনের কথাও চলছে৷ এবার শোনা যাচ্ছে, মঙ্গলগ্রহ থেকেই নাকি পৃথিবীতে প্রাণের সঞ্চার হয়েছিল৷
কোটি কোটি বছর আগে পৃথিবীতে জীবজগত সৃষ্টির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল, এ কথা আমরা জানি৷ কিন্তু সেই প্রাণের উৎস যে মঙ্গলগ্রহ থেকে এসেছিল, এমন তত্ত্বের কথা শুনেছেন কি?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্যের গেনসভিল-এ ওয়েস্টহাইমার ইন্সটিটিউট ফর সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি-র অধ্যাপক স্টিভেন বেনার এমন এক তত্ত্ব খাড়া করেছেন৷ তার ধারণা, মঙ্গলগ্রহ থেকে একটি উল্কা পৃথিবীর উপর আছড়ে পড়েছিল৷ তাতে যে সব ধাতু ছিল, সেগুলিই পৃথিবীর বুকে প্রাণের সঞ্চার করেছে৷ বিশেষ করে ‘মলিবডেনাম’ নামের উপকরণের অক্সিডাইজড ধাতুর রূপ এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল বলে অধ্যাপক বেনার-এর বিশ্বাস৷ কারণ এই উপকরণই কার্বনের অণুকে নষ্ট হতে দেয় না৷
এই ‘মলিবডেনাম’ যদি সত্যি প্রাণের অস্তিত্বের চাবিকাঠি হয়ে থাকে, সেটি যে মঙ্গলগ্রহ থেকেই এসেছে, এমনটা মনে করার কারণ কী? অধ্যাপক বেনার বলেন, প্রায় ৩০০ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে যখন প্রাণের চিহ্ন দেখা দিয়েছিল, তখনকার পরিবেশ ছিল ভয়াবহ৷ এমনকি বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের মাত্রাও ছিল খুবই কম৷ একই সময়ে মঙ্গলগ্রহের বায়ুমণ্ডলে যথেষ্ট পরিমাণ অক্সিজেনের অস্তিত্ব ছিল৷ তাছাড়া সৌরজগতের সেই বাল্যকালে পৃথিবীর বুকে যখন-তখন আছড়ে পড়তো উল্কা ও ধুমকেতু৷ মঙ্গলগ্রহও সেই আঘাত থেকে রক্ষা পায় নি৷ ফলে সেই গ্রহের অংশও ছিটকে মহাকাশে বেরিয়ে গেছে এবং একটা সময়ে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে ভূ-পৃষ্ঠের উপর এসে পড়েছে৷
এই তত্ত্বের সপক্ষে সম্প্রতি আরো কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে৷ মঙ্গলগ্রহের একটি উল্কাখণ্ড বিশ্লেষণ করে তাতে সত্যি ‘মলিবডেনাম’ পাওয়া গেছে৷ সঙ্গে ছিল ‘বোরন’ নামের আরেক উপকরণ, যা রাইবোনিউক্লেয়িক অ্যাসিড বা আরএনএ-র সুরক্ষায় সহাক হয়ে থাকতে পারে৷ আরএনএ আসলে ডিএনএ-রই একটা অতীত রূপ৷ জলের ক্ষয়শক্তি থেকে আরএনএ-কে বাঁচিয়ে রেখেছিল ‘বোরন’৷
অধ্যাপক স্টিভেন বেনার এমন এক ঘটনার বিশেষ তাৎপর্যের কথাও মনে করিয়ে দিতে ভোলেননি৷ তার মতে, মঙ্গলগ্রহের বদলে পৃথিবীর বুকেই প্রাণের বিকাশ ঘটেছে বলেই মানুষের অস্তিত্ব সম্ভব হয়েছে৷ একই প্রক্রিয়া মঙ্গলগ্রহের মাটিতে ঘটলে প্রাণের বিবর্তন ঘটতে পারতো না৷ কারণ মঙ্গলগ্রহ ও পৃথিবীর মধ্যে তুলনা করলে আমাদের এই গ্রহের পরিবেশই প্রাণের বিকাশের জন্য অনেক বেশি অনুকূল ছিল৷
তবে এটাই একমাত্র তত্ত্ব নয়৷ পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব সম্পর্কে আরো অনেক তত্ত্ব রয়েছে৷ যেমন ধূমকেতুই পৃথিবীতে পানি এনেছিল৷ অথবা মহাকাশের গভীর থেকে উল্কাখণ্ড চেপে প্রথম ব্যাকটেরিয়া নাকি পৃথিবীর সমুদ্রে এসে পড়েছিল৷ সেই ক্ষুদ্র জীবই আমাদের পূর্বপুরুষ!