যানবাহনের লাইট বিধি মানা হচ্ছে না : উঠতি বয়সীদের লাইটের অপব্যাহার
তাছির আহমেদ: যানবাহনের হেডলাইটে তীব্র শাদা আলো মানুষের চোখে ক্ষতি বয়ে আনে। সেই সাথে বাড়ায় সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি। এমন ক্ষতির সম্মুখিন হওয়া সত্বেও বিভিন্ন যানবাহনের হেডলাইটে ফগ (শাদার সাথে হালকা হলুদ মিশ্রিত) আলোর পরিবর্তে এখন শোভা পাচ্ছে হ্যালোজিন পাওয়ারের তীব্র শাদা আলোর লাইট। এ লাইট যানবাহনের হেডলাইটে ব্যবহার করার ফলে বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহনের চালকেরা সামনে কী আছে তা দেখতে হিমশিম খান। এমনকি আঁধারে হাঁটা মানুষগুলোকেও তাদের হাত দিয়ে চোখ ঢাকতে হয়। মানুষের চোখকে ক্ষণিকের জন্য ঝাপসা করে দেয়া চীন দেশের তৈরি এ হেডলাইট উঠতি বয়সীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ক্রেতাদের হাতের নাগালে ও সহজলভ্যতার কারণে এর ব্যবহার দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায় প্রশাসন হাত-পা গুঁটিয়ে চুপচাপ বসে আছে। আর সন্ধ্যার পর ট্রাফিক আইল্যান্ডের ওপর আলো প্রতিফলিত রিফ্লেকটিভ বেল্ট পরে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ সিগন্যাল টর্চ জ্বালিয়ে এ সকল তীব্র শাদা আলো ব্যবহৃত যানবাহনগুলোকে চলাচল করতে সাহায্য করছে।
চুয়াডাঙ্গা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) মাহাবুবুল আলম শরিফুল দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলার জনবহুল সড়কগুলোতে দুর্ঘটনা এড়াতে ট্রাফিক পুলিশ দিনরাত তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করছে। জেলার সর্বত্র যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে অদক্ষ চালকের সংখ্যা। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া কারো যানবাহন চালানো ঠিক নয়। এরা জানে না রাতের আঁধারের হেডলাইটের হাই-লোর ব্যবহার। কোনো যানবাহনের হেডলাইটে তীব্র শাদা আলোর ব্যবহার না করাই শ্রেয়। কারণ আপনার হেডলাইটের তীব্র শাদা আলো বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহন চালকের সমস্যা হতে পারে। বিপরীত দিক থেকে আসা কোনো যানবাহন দেখা গেলে দু বাহনকেই হেডলাইটের আলো লো রাখতে হবে। শহরের মধ্যে ছোটবড় সব যানবাহনের হেডলাইটের আলো লো রেখে চালানোর নিয়ম। তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রতেকের উচিত অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্ত ছাড়া কোনো ব্যক্তির নিকট যানবাহন হস্তান্তর না করা।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) চুয়াডাঙ্গা সহকারী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত কুমার দেবনাথ দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে জানান, যানবাহনের হেডলাইটের আলোর গতি আপার (হাই) অবস্থায় ১৫০ মিটারের নিচে থাকবে। তাহলে ডিপার (লো) অবস্থায় আলোর গতি কতো মিটার থাকবে এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, হেডলাইটের আলোর সর্বোচ্চ গতি ১৫০ মিটার সেটআপ করলে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ডিপারের (লো) আলোর গতি সেটআপ হয়ে যাবে। হেডলাইটের আপার ডিপারের তারতম্য বিশ্লেষণ করেই বিআরটিএ যানবাহনের হেডলাইটের সর্বোচ্চ আলোর গতি ১৫০ মিটারের নিচে রাখার সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে।
দামুড়হুদা আব্দুল ওদুদ শাহ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. কামাল উদ্দিন বলেন, যানবাহনের হেডলাইটে তীব্র শাদা আলো চোখ ঝাপসা করে দেয়। ইদানিং বেশ কিছু মোটরসাইকেলের হেডলাইটে এ আলোর ব্যবহার চোখে পড়ছে। এ হেডলাইটের আলো হাই রেখে দ্রুত গতিতে চলা বাইকগুলো সামনে পড়লে আমরা অনেকটাই নিরুপায় হয়ে রাস্তার একধারে অবস্থান নিয়ে থাকি। এরা জানে না হেডলাইটের হাই-লোর ব্যবহার। এ বিষয়ে প্রত্যেকে এগিয়ে এলে সড়ক দুর্ঘটনাসহ এসকল ভোগান্তি অনেকাংশে হ্রাস পাবে।
দামুড়হুদা উপজেলা প.প. স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সাইদ-উর রহমান বলেন, চোখ মানুষের অমূল্য সম্পদ। চোখ ছাড়া পৃথিবীর বুকে চলাচল দুর্বিষহ। তাই চোখের প্রতি যত্ন নেয়া প্রতিটি মানুষের কর্তব্য। দ্রুতগতির আলোক রশ্মি জনস্বার্থে চোখের জন্য ক্ষতিকর। তীব্র আলোকরশ্মি থেকে মূল্যবান চোখ বাঁচাতে সবাইকে সচেতন হতে হবে। তা না হলে নানা ধরনের চক্ষুরোগ দেখা দিতে পারে।
দামুড়হুদা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বোর্ডের সভাপতি মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, রাতের আঁধারে যানবাহন চালনার সময় হেডলাইটের ব্যবহার অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ এ লাইটের আলো তখন চোখ হিসেবে কাজ করে। তীব্র গতি সম্পন্ন শাদা আলো ব্যবহার করে হেডলাইট হাই রেখে বিপরীত দিক থেকে আসা কোনো যানবাহনকে পরোয়া না করে দ্রুত গতিতে চলা বেয়াদপের সামিল। ট্রাফিক আইন তোয়াক্কা না করে অটোবাইকসহ অবৈধযান নসিমন, করিমন, আলমসাধু, পাউয়ারট্রলি ও মিনিট্রাকের আদলে তৈরি লাটাহাম্বারকে দেখা যাছে হেডলাইটে স্বল্প আলো সম্পন্ন ডিমলাইট ব্যবহার করতে। আবার কিছু কিছু সময় হেডলাইটবিহীন এ সকল বাহনকে দেখা যাচ্ছে এক হাতে টর্চলাইট জ্বালিয়ে চালনা করতে। এ সকল বাহন রাতের আঁধারে সড়কের জন্য মহাবিপদজনক। এমনকি মারণ ফাঁদ। তাই আমাদের সকলের উচিত যানবাহনের হেডলাইটে তীব্র গতি সম্পন্ন শাদা আলো পরিহার করা।