সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রামবাসীর দেড়শ জনের নামে মামলা : পুরুষ শুন্য গ্রামে পুনঃ হামলার আশঙ্কা
গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলার রাজাপুর গ্রামে দু দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষের পর গ্রামে বিরাজ করছে পুনরায় হামলার আশঙ্কা। প্রভাবাশালী খলিশাকুণ্ডি গ্রামের মানুষের সাথে দ্বন্দ্ব জড়িয়ে এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন রাজাপুর গ্রামবাসী। পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় একদিকে গ্রেফতার আতঙ্ক অন্যদিকে খলিশাকুণ্ডি গ্রামের মানুষের হুমকিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কাপড় তৈরির কারিগর খ্যাত এ গ্রামের মানুষ। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় রাজাপুর গ্রামের কাবাতুল ইসলামকে মারধর করে সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে খলিশাকুণ্ডি গ্রামের কয়েকজন।
মঙ্গলবার বিকেলে রাজাপুর ও পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার খলিশাকুণ্ডি গ্রামের মানুষের সংঘর্ষের সময় কুমারীডাঙ্গা পুলিশ ক্যাম্পের এক পুলিশ কনস্টেবল ও একজন আনছার সদস্য আহত হন। কুমারীডাঙ্গা পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ এএসআই মুক্তাজাব আলী বাদী হয়ে ৪৭ জনের নাম উল্লেখ করে রাজাপুর গ্রামের দেড়শ জনের নামে মামলা দায়ের করেছেন। তাই গ্রেফতার আতঙ্কে রাজাপুর গ্রাম এখন পুরুষ শুন্য। নারীরা ফাঁকা বাড়ি পাহারা দিলেও খলিশাকুণ্ডি গ্রামের মানুষের হামলার আশঙ্কায় চরম আতঙ্কে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসী।
গতকাল বুধবার সরেজমিন রাজাপুর গ্রামে গেলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই জানিয়েছেন, কুমারীডাঙ্গা পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ এএসআই মোস্তাজাব আলী ও কনস্টেবল আরিফুর রহমান প্রায়ই নিরীহ মানুষকে জামায়াত, বিএনপি লিষ্টে নাম আছে হুমকি দিয়ে আটকসহ মারধর ও পরে অর্থের বিনিময়ে মুক্তি দিতো। এছাড়াও ব্যবসায়ীদের নানাভাবে হয়রানি করে তাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতেন। দোকান থেকে জিনিসপত্র নিয়ে দাম না দেয়া ছাড়াও বিভিন্ন বাড়ি থেকে হাঁস-মুরগি এবং জ্বালানি কাঠ বিনা টাকায় নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ অসংখ্য। এর প্রতিবাদ করলে তারা নানা ধরনের হুমকি দেয়া ছাড়াও সন্ত্রাসী অভিযোগ এনে টাকা আদায় করতেন। মহিলাদেরও গাল মন্দ করা হতো।
গ্রামের অশীতিপর বৃদ্ধা জিন্নাতুন্নেছা জানান, পুলিশ যখন তখন গ্রামের লোকজনকে নানা অভিযোগে অত্যাচার করে। রাতে বাড়ির লোকজন ঘুমিয়ে থাকে। গভীররাতে পুলিশরা এসে দোকানে মালামাল নেয়ার কথা বলে ডেকে তোলে। উঠতে দেরী হলে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। মানুষের নিরাপত্তার জন্য গ্রামের পাশে ক্যাম্প হলেও এখন উপকারের বদলে অপকারই হচ্ছে বেশি। গ্রামের মর্জিনা খাতুন জানান, তার ছেলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী অভিযোগ এনে তার কাছ থেকে দেড় হাজার টাকা আদায় করেছে কনস্টেবল আরিফুর রহমান। মঙ্গলবারের ঘটনার সময় কনস্টেবল আরিফের লাঠির আঘাতে আহত মোবারক হোসেনের স্ত্রী শাহানারা খাতুন, রমজান আলীর স্ত্রী মর্জিনা খাতুন ও কাবাতুল্লাহর স্ত্রী লাইলী খাতুন জানান, ঘটনার দিন পুলিশ আমাদের শুধু নির্যাতনই করেনি অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেছে। খলিশাকুণ্ডি গ্রামের মানুষও তাদের মারধর করেছে। তাদের সাথে মিলেই পুলিশ তাদের ওপর এ নির্যাতন চালিয়েছে।
গ্রামের প্রতিবন্ধী শামীমা আখতার জানান, পুলিশ ও খলিসাকুণ্ডি গ্রামের লোকজন যেভাবে মেয়েদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে তা বর্বরতাকে হার মানিয়েছে।
গ্রামবাসীর আরও অভিযোগ, খলিশাকুণ্ডি গ্রামের শহিদুল ইসলাম রাজাপুর মাথাভাঙ্গা নদীতে মাছচাষ করেন। বড় মাছসহ বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে তিনি কুমারীডাঙ্গা পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জসহ পুলিশ সদস্যদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন। এ কারণেই শহিদুল ইসলাম পুলিশ সাথে নিয়ে গ্রামবাসীর ওপর হামলা চালালেও পুলিশ বাধা দেয়নি। উল্টো পুলিশ তাদের সাথে মিশে হামলায় অংশ নিয়েছে। মঙ্গলবার সংঘর্ষের পর কনস্টেবল আরিফুর রহমানকে ক্যাম্প থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে প্রেরণ করা হলেও সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এএসআই মুস্তাজাব আলী।
রাজাপুর ও খলিশাকুণ্ডি গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে মাথাভাঙ্গা নদী। নদী পার হয়ে রাজাপুর গ্রামের মানুষ খলিশাকুণ্ডি গ্রামের ভেতর দিয়ে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেন। এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন খলিশাকুণ্ডি গ্রামের একটি চক্র। তারা নানাভাবে হুমকি-ধামকি এমনকি মারধরও করছেন। গতকাল সন্ধ্যায় খলিশাকুণ্ডি বাজার থেকে রাজাপুর গ্রামে বাড়িতে ফিরছিলেন জমির উদ্দীনের ছেলে কাবাতুল ইসলাম কারিগর। খলিশাকুণ্ডি-রাজাপুর মাঠের মধ্য থেকে তাকে মারধর করে নগদ টাকাসহ কিছু গামছা কেড়ে নেয় খলিশাকুণ্ডি গ্রামের কয়েকজন। এ ঘটনায় গোটা গ্রামের মানুষ এখন ওই পথ দিয়ে যাতায়াত করতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে জানিয়েছেন অনেকেই। গাংনী থানার ওসি মাসুদুল আলম জানান, বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিকেলে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে খলিশাকুণ্ডি গ্রামের শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে রাজাপুর গ্রামের মানুষের ওপর হামলা করে। এক পর্যায়ে পুলিশ ও খলিশাকুণ্ডি গ্রামের মানুষের সাথে রাজাপুর গ্রামবাসীর সংঘর্ষে পুলিশসহ ১০ জন আহত হয়।