মাথাভাঙ্গা অনলাইন: ১৮ বছরের কম বয়সী নারীর সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন বে-আইনী নয়। তবে তা হতে হবে ওই নারীর সম্মতিতে। সোমবার দিল্লির এক আদালত এক রায়ে এমনটিই বলেছেন।
‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’ বলেছে, এ ধরনের কাজ যে ভারতের প্রোটেকশন অব চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেনসেস অ্যাক্ট-এর (শিশুদের যৌন নিপীড়ন থেকে রক্ষার আইন) লঙ্ঘন নয়, তা-ও জানিয়েছেন দিল্লির নগর আদালত।
আদালত বলেছেন, যে ক্ষেত্রে শারীরিক সম্পর্ক জোরপূর্বক করা হয়নি এবং কোনো অপ্রাপ্তবয়স্ক নারীর সম্মতি নিয়ে তা করা হয়েছে, সে ক্ষেত্রে তা আইনকে লঙ্ঘন করে না। তাই তাতে কোনো অপরাধ হয়েছে বলে গণ্য হবে না।
এর আগে দিল্লির পুলিশ ও দিল্লি নারী কমিশন দাবি করেছিল, প্রোটেকশন অব চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেনসেস অ্যাক্ট (পিওসিএসও) অনুযায়ী, কোনো অপ্রাপ্তবয়স্ক নারীর সঙ্গে যৌনকর্ম অপরাধ। এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে অতিরিক্ত দায়রা জজ ধর্মেশ শর্মা বলেন, ‘আমি চিন্তিত যে, যদি (আইনটির) এ ধরনের ব্যাখ্যা মেনে নেওয়া হয়, তার অর্থ হবে ১৮ বছরের চেয়ে কম বয়সী প্রতিটি মানবদেহের মালিক রাষ্ট্র এবং নিজের শরীর থেকে আনন্দ নেওয়ার কোনো অধিকার ১৮ বছরের কম বয়সীদের নেই।’
তবে বিচারক ধর্শেম শর্মা অনিরাপদ যৌনকর্ম ও বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য সরকারি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমাদেরও অনেক বড় দায়িত্ব আছে। বাল্যবিবাহের প্রভাব ও অনিরাপদ যৌনকর্মের কুফল সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি ও ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পুলিশসহ সরকারের অন্যান্য বিভাগের ওপর বর্তায়।’
আদালত গতকাল এক তরুণের বিরুদ্ধে করা অপহরণ মামলার রায়ে এসব কথা বলেন। মামলায় অভিযোগ ছিল, ২২ বছর বয়সী এ তরুণ ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীকে অপহরণ ও ধর্ষণ করেছেন, যদিও পরে ওই তরুণ কিশোরীটিকে বিয়ে করেছেন। তরুণটির বাড়ি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। আদালত বলেন, মামলার কার্যক্রম থেকে প্রমাণিত হয়েছে, তরুণটি কিশোরীটিকে অপহরণ করেননি, বরং কিশোরীটি স্বেচ্ছায় তরুণটির সঙ্গে ভেগেছে এবং পরে তাঁকে বিয়ে করেছে। মামলার কারণে তাঁদের সুখী বিবাহিত জীবন বিঘ্নিত হচ্ছিল।
আদালত আরও বলেন, ‘সাক্ষ্য-প্রমাণ বলছে, তাঁরা স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছেন। এ কারণে ফৌজদারি বিধির ৩৬৩ (অপহরণ) ও ৩৬৬ (অপহরণ ও জোরপূর্বক বিয়ে) নম্বর ধারায় তাঁদের অভিযুক্ত করা চলে না।’
বিচারক বলেন, ‘১৮ বছরের কম বয়সীরা সম্মতির ভিত্তিতে সহবাস করার পরও তাদের দোষী সাব্যস্ত করা অনুচিত। আর তাতে শিশু রক্ষা আইনের উদ্দেশ্যও বাস্তবায়িত হয় না।’ এ আইনানুসারে ১৮ বছর বয়সীদের শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়।
গত মার্চের ৫ তারিখে কিশোরীর মা এই মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, ফেব্রুয়ারির ২৬ তারিখ থেকে ওই কিশোরী নিখোঁজ। এ জন্য তরুণটিকে দায়ী করা হয়। ৬ মার্চ অভিযুক্ত তরুণকে আটক করা হয় এবং তাঁর বাসা থেকে কিশোরীটিকে উদ্ধার করা হয়। ম্যাজিস্ট্রেটকে দেওয়া জবানবন্দিতে ওই কিশোরী জানায়, সে স্বেচ্ছায় ওই তরুণের সঙ্গে তাঁর গ্রামে গেছে এবং এক মন্দিরে বিয়ে করেছে। এর পর থেকে তারা একসঙ্গে বাস করছে।
আদালত রায়ে আরও বলেন, মেয়ের মায়ের উচিত বিয়েটি মেনে নেওয়া।