অচিরেই চুয়াডাঙ্গায় নির্মাণ করা হবে সুইমিংপুল ও জিমনেসিয়াম
ইসলাম রকিব/আলম আশরাফ/কামরুজ্জামান বেল্টু: বাংলাদেশ সরকারের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার চুয়াডাঙ্গায় ঝটিকা সফরের মাধ্যমে নবনির্মিত চুযাডাঙ্গা স্টেডিয়াম ও যুবপ্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নামফলক উন্মোচন করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ন’টায় বাংলাদেশ বিমানের আভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে প্রতিমন্ত্রী যশোর বিমানবন্দরে অবতরণ করে সড়ক পথে সকাল সাড়ে ১১টায় চুয়াডাঙ্গা সার্কিট হাউজে পৌঁছান।
চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরী কর্তৃক প্রদানকৃত গার্ড অব অনার ও জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসাইনের রিসিপশনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীকে স্বাগত জানানো হয়। সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম গ্রহণ করে দুপুর সাড়ে ১২টায় চুয়াডাঙ্গার জাফরপুরস্থ নবনির্মিত যুবপ্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও চুয়াডাঙ্গা স্টেডিয়ামের নামফলক উন্মোচন করেন। ১৭ কোটি ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন চুয়াডাঙ্গা স্টেডিয়াম এবং প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন যুবপ্রশিক্ষণকেন্দ্র। প্রতিষ্ঠান দুটির নামফলক উন্মোচন শেষে জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মাসুদউজ্জামান লিটুর পরিচালনায় দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
এরপর নবনির্মিত স্টেডিয়ামটি ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ঘুরে দেখেন। এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি। নবনির্মিত এ স্টেডিয়ামে জাতীয় লীগের ক্রিকেট ভেন্যু হিসেবে কার্যক্রম চালানো হবে কি-না? মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার ফাইজার চৌধুরীর এমন প্রশ্নের জবাবে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে চুয়াডাঙ্গাবাসীকে বিভ্রান্তিতে ফেলতে চাই না। অবকাঠামোগত ও আবাসন ব্যবস্থা যথেষ্ট না হওয়ায় জাতীয় লীগের খেলা বিশেষ করে ক্রিকেট লীগের খেলাগুলো চালানো সম্ভব নয়। স্টেডিয়াম নির্মাণের পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গায় আধুনিকমানের সুইমিংপুল ও জিমনেসিয়াম নির্মাণ করা হবে কি-না? দৈনিক মাথাভাঙ্গার স্পোর্টস রিপোর্টার ইসলাম রকিবের এ প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, স্টেডিয়ামের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলেই অচিরেই চুয়াডাঙ্গায় আধুনিকমানের সুইমিংপুল ও জিমনেসিয়াম নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে। কবে নাগাদ স্টেডিয়ামটি পূর্ণাঙ্গ চালু হবে এবং এবং আন্তর্জাতিক মানের কি-না? সাংবাদিক রেজাউল করিম লিটনের এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চুয়াডাঙ্গার এ স্টেডিয়ামটির মাপ ও এরিয়া আন্তর্জাতিকমানের তবে একোমোডেশন ও আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড়দের আবাসিক ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত এটি জাতীয় মানের স্টেডিয়াম হিসেবেই গণ্য হবে। গুণগত মান সম্পর্কে বলেন, নিঃসন্দেহে এ স্টেডিয়ামটি আধুনিকমানের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দিয়ে সুজ্জিত করা হবে।
স্টেডিয়াম মাঠ পরিদর্শন শেষে দোতলার ভিআইপি গ্যালারিতে সংক্ষিপ্ত আলোচনাসভায় প্রধান অতিথীর বক্তব্য রাখেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দারের প্রশংসা করে বলেন, তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে চুয়াডাঙ্গাবাসীর জন্য এ দুটি প্রতিষ্ঠান নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। দিনের পর দিন তিনি ভূমি মন্ত্রণালয়, কখনো যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, কখনো প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পর্যন্ত ছুটেছেন। সেই সাথে এতো অল্প সময়ের মধ্যে এতোবড় দুটি প্রতিষ্ঠান একই সাথে নির্মাণে তিনি সার্বক্ষণিকভাবে খোঁজখবর না নিলে নির্মাণ করা সম্ভব হতো না।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, চুয়াডাঙ্গাসহ আশপাশ এলাকার বেকার যুবসমাজ ও ক্রীড়ামোদী, ক্রিকেটমোদী তরুণ সমাজের জন্য এ দুটি প্রতিষ্ঠান আর্শীবাদ স্বরূপ। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যেমন বেকারত্বের অভিশাপ দূর হবে, তেমনি খেলাধুলা ও শরীরচর্চার মাধ্যমে যুবসমাজ থাকবে সুস্থ ও সবল।
ভিআইপি গ্যালারিতে বক্তব্য দেয়ার আগে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন, চুয়াডাঙ্গা পুলিশ প্রশাসন, চুয়াডাঙ্গা পৌর পরিষদ, জেলা আওয়ামী লীগ, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ, জেলা ছাত্রলীগ, জেলা যুবলীগ, জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থা, জেলা ক্রীড়া সংস্থা, জেলা মহিলা সংস্থা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ফুলেল শুভেচ্ছা প্রদান করা হয়। এ সময় ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর সাথে উপস্থিত ছিলেন সাবেক আইজিপি যুব-ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব নুর মোহাম্মদ, যুব-ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব আ. রহমান, পরিচালক (উন্নয়ন) জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ রেজাউর রহমান, প্রকল্প প্রকৌশলী নুরুল আমিন তালুকদার, উপসহকারী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসাইন, চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আব্দুর রহিম শাহ্ চৌধুরী, চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান আজাদুল ইসলাম আজাদ, চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মল্লিক সাঈদ মাহবুব, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কবীরুল হাসান, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল আমিন, এনডিসি মোখলেছুর রহমান, স্টেডিয়াম ও যুবপ্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে খুস্তার জামিল, নইম হাসান জোয়ার্দ্দার প্রমুখ।
এদিকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আ. রহমান এ দুটি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ কাজ যখন শুরু হয় তখন আমি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরিচালক (উন্নয়ন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। তখন বরাদ্দ নেয়ার জন্য আমাকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে ধরনা দিতে হতো। বর্তমানে আমি নিজেই সেখানে দায়িত্ব পেয়েছি। আমি সেখান থেকে বরাদ্দ দিই। তাই চুয়াডাঙ্গাবাসীর জন্য সুখবর হলো, আমার হাতে শুরু হওয়া এ প্রতিষ্ঠান দুটির উন্নয়ন ছাড়াও চুয়াডাঙ্গার ক্রীড়াঙ্গনের জন্য আমার আরও কিছু করার ইচ্ছা আছে। আমি যদি বেঁচে থাকি তাহলে অবশ্যই আমার কথা আমি রাখবো।
স্টেডিয়াম ও যুবপ্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আগত সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী গাড়িবহর নিয়ে পুনরায় ফিরে আসেন চুয়াডাঙ্গা সার্কিট হাউজে। সেখানে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সাংবাদিক ও সুধীসমাজের সাথে মধ্যাহ্নভোজে মিলিত হন। দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে আবারও গার্ড অব অনারের মাধ্যমে সালাম গ্রহণ করে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী যশোরে উদ্দেশে চুয়াডাঙ্গা সার্কিট হাউজ ত্যাগ করেন।
উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গার নূরনগর-জাফরপুরের মধ্যববর্তী স্থানে স্টেডিয়াম নির্মাণ কাজের দায়িত্বে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মের্সাস আবুল কালাম আজাদ। পূর্ণাঙ্গতা দিতে সরাসরি দায়িত্ব পালন করে আসছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আবুল কালাম আজাদ, খুস্তার জামিল ও নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার পথে।