স্টাফ রিপোর্টার: ব্যাংকগুলোকে শিল্পে ঋণ বিতরণ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এক্ষেত্রে মুদ্রানীতির লক্ষ্য অনুযায়ী বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ধরে রাখার জন্য বলা হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। বিশেষ করে বড় শিল্পের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, কৃষি ও হালকা প্রকৌশল শিল্পে ঋণ বিতরণ বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জন্য ১০ টাকা ব্যাংক হিসাব খোলার জন্য ব্যাংকারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ব্যাংকের গভর্নর। গতকাল রোববার ব্যাংকার্স সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে গভর্নর ড. আতিউর রহমান ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের এ পরামর্শ দেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী।
বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় দেশের সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন। এসকে সুর চৌধুরী বলেন, সম্প্রতি বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমেছে। এ ঋণপ্রবাহ যাতে বাড়ে সেজন্য বড় শিল্পের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, কৃষি এবং হালকা প্রকৌশল শিল্পে ঋণ বরাদ্দের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে গ্রিন ব্যাংকিং কার্যক্রমে ঋণ বিতরণ বাড়ানোরও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কি কারণে ঋণপ্রবাহ কম বা কি করলে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়বে সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে পরামর্শ চেয়েছে। ব্যাংকগুলোও কিছু পরামর্শ দিয়েছে। আমরা সে অনুযায়ী কাজ করব। ব্যাংকগুলো বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির জন্য সহায়তা চেয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সব বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগ নেয়ার সুযোগ নেই। তবে কেইস-টু-কেইস ভিত্তিতে আমরা তাদের সহায়তা করবো। ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির চেয়ারম্যান ও এনসিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরূল আমীন বলেন, আগামী ছয় মাসে রাষ্ট্র পরিচালনায় তিন ধরনের সরকার ব্যবস্থা আসতে পারে। এ অবস্থায় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ নেয়ার বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। যে কারণে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কম। আমরা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, কৃষি ও হালকা প্রকৌশল শিল্পে ঋণ বিতরণ বাড়ানোর চেষ্টা করছি। এক কথায় বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমবে না। একই সঙ্গে ঋণ আদায়েও ব্যাংকগুলো এ সময়ে বেশি মনোযোগ দেবে বলে তিনি জানান।
চলতি মেয়াদের (জুলাই-ডিসেম্বর) মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান হিসাব অনুযায়ী বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে।
এসকে সুর চৌধুরী বলেন, জুন মাসে ঋণ ও আমানতের সুদ হারের পার্থক্য (স্প্রেড) ৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছিলো। কিন্তু পরে জুলাই মাসে তা আবার বেড়ে ৫ শতাংশের ওপর চলে গেছে। স্প্রেড বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক খুব বেশি সতর্ক। এটা কমিয়ে আনার বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো আমানতের সুদ হার কমালেও ঋণের সুদ হার না কমানোর জন্য স্প্রেড কমছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। স্প্রেড বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চেয়ে ২৬টি ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। এছাড়া সোনালী ব্যাংক যেসব স্বীকৃত বিলের অর্থ পরিশোধ করছে না তা দ্রুত পরিশোধ করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সুর চৌধুরী বলেন, নানামুখি কারণে এসব স্বীকৃত বিল আটকে রয়েছে। কিছু পরিশোধ হচ্ছে। অর্থ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে আলোচনা করছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিভিন্ন কেলেংকারি ব্যাংকিং খাতে কালিমা লেপন করেছে। আমরা ব্যাংকগুলোকে বলেছি, এসব কেলেংকারি থেকে শিক্ষা নিয়ে আইন অনুযায়ী ব্যাংকিং করার জন্য। ব্যাংকগুলো এ বিষয়ে একমত হয়েছে। খেলাপি ঋণ বিষয়ে ব্যাংকগুলো বলেছে, খেলাপি ঋণের নতুন নিয়মে অনেক গ্রাহক আগে থেকেই খেলাপি হয়ে পড়ছে। যদিও গ্রাহক এর জন্য দায়ী নয়, ব্যাংক দায়ী। এজন্য তারা বিষয়টি আরও নমনীয় করার পরামর্শ দিয়েছেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সার্ভিস চার্জ ও কমিশন কমিয়ে আনতে গভর্নর ব্যাংকারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বলে জানান এসকে চৌধুরী। তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জন্য ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলার জন্য ব্যাংকগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন গভর্নর।