পাম গাছে থোকা থোকা পামফল। যার ভেতর ভরা ভোজ্য তেল। তেল আহরণের পদ্ধতি না জানার কারণে অনেক পামচাষিই তার সুফল নিতে পারছেন না। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। পামচাষ যেহেতু আমাদের দেশে নতুন, সেহেতু এর সুফল পাওয়ার পদ্ধতিই শুধু নয়, চাষে সফলতা পাওয়ার উপায়ও জানাতে হবে। জানানোর দায়িত্ব কার? কে জানাবে? অবশ্যই সরকার। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কৃষিবিদদের এ ক্ষেত্রে দক্ষ করে তাদের কাজে লাগাতে পারলে ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে পরনির্ভরতা হ্রাস পাবে। বৈদেশিক মূদ্রাও খরচ হবে কম। কারণ ভোজ্যতেলের ৯০ ভাগই তো বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় আমাদের।
মালয়েশিয়া একদিনে উন্নত দেশ হয়নি। রাতারাতি শিল্প গড়ে ওঠেনি। তার জন্য দরকার হয়েছে মহাথিরের মতো একজন দক্ষ নেতাকে। যে নেতা উন্নয়নের স্বপ্ন দেখাতে পেরেছেন, নিজেকে বিশ্বাস করাতে সক্ষম হয়েছেন। তাকে বিশ্বাস করে তার কথায় উন্নয়নের পথে এগিয়েছে সে দেশের মানুষ। পামচাষও তাদের ভাগ্য বদলের অন্যতম সহায়ক হয়েছে। দুর্ভাগ্য আমাদের। বিশ্বাস করার মতো নেতা পাইনি, পেলেও হারিয়েছি। সেই অভাব পদে পদে পরিলক্ষিত হয় বলেই তো আমাদের দেশের উৎসুক চাষিদের কেউ কেউ পামচাষ করে নিজেদের ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে চাইলেও অজানা অন্ধকারে হাবুডুবু খাচ্ছেন। আমাদের দেশের মাটি ও আবহাওয়া পামচাষের জন্য উপযোগী। পামগাছে থোকা থোকা ফল। অথচ তেল বের করার পদ্ধতি সম্পর্ক অজান বলেই পামচাষির মুখে হাসি ফুঁটছে না। কীভাবে তেল আহরণ করবে তা জানতে পারলে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের পামচাষির মুখে যেমন হাসি ফুঁটবে, তেমনই তাকে দেখে অন্যরাও আগ্রহী হয়ে ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে। পামগাছ তো আর আফ্রিকান মাগুর বা প্রাণহার মতো দেশি প্রজাতি গ্রাস করছে না? যদিও ওই মাগুর, ও প্রাণহা সরকারি কর্তাদেরই কোনো এক দল আমদানি করেছে। যারা আমদানি করে সর্বনাশ ডেকে এনেছে তাদের শাস্তি হয় না, তাদের বিদেশে প্রমদ খরচ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে না। আবার অতীব প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ পামচাষ, পামতেল আহরণ। এ জন্য মালয়েশিয়ায় যাওয়া-আসা এবং সেখানকার পামবাগান, তেল আহরণ কারখানা দেখে আসার খরচ কি খুব বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে? তা যদি না হয়, তাহলে কালীগঞ্জের পামচাষি কেন অনিশ্চয়তার অন্ধকারে? প্রশ্ন অনেক জবাব মেলে না।
পামচাষ অবশ্যই লাভজনক। আবাদি জমি নষ্ট না করেও আইলে বা বাড়ির পড়ে থাকা জমিতে লাগিয়ে ভোজ্যতেল পেতে পারেন। এ জন্য দরকার ভালো চারা সকলের মাঝে সহজলভ্য করা। বর্ষা মরসুম চলছে। জেলায় জেলায় বৃক্ষমেলার আয়োজন করা হচ্ছে। পরিবেশের ভারসম্য রক্ষার্থে বেশি বেশি গাছ লাগানোর জন্য নানাভাবেই জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। অথচ সৌখিন চাষি পামবাগান করে পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। তার পাশে এগিয়ে যাওয়ার মতো কি একজন কৃষি কর্মকর্তা নেই? যদি নাই-ই থাকে তাহলে দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে অপত্তি কোথায়? কালবিলম্ন না করে দক্ষ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে উৎসুক পামচাষিদের দক্ষ করে তুলতে সরকারের আশু পদক্ষেপ প্রয়োজন।