স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে তত্পরতা শুরু করেছে জাতিসংঘ। সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে যাতে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য হয় সে লক্ষ্যে সংস্থাটির নানামুখি তত্পরতা চলছে বলে জানা গেছে।
গত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার সাথে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের টেলিফোন আলাপ বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে আবারো ঢাকায় আসছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। গত মে মাসেও তিনি একই উদ্দেশ্যে ঢাকা সফর করেন। তারানকো জাতিসংঘের রাজনীতি বিষয়ক সহকারী মহাসচিব। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল জাতিসংঘের এ ধরনের দৌঁড়-ঝাঁপকে গুরুত্বের সংগে বিবেচনা করছে।
কূটনৈতিক বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে বিবদমান রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে সমঝোতার আভাস না থাকায় জাতিসংঘ উদ্বিগ্ন। নির্বাচন কেন্দিত বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট না হয় সে লক্ষ্যে জাতিসংঘ সমস্যার সমাধানের দিকে জোর দিচ্ছে। এ প্রক্রিয়ারই অংশ হিসেবে আগামী নির্বাচনের বিষয়ে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলকে সমঝোতায় পৌঁছুনোর তাগিদ নিয়ে তারানকো ঢাকায় আসছেন বলে ঢাকায় প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে তারানকো ঢাকায় আসবেন বলে নিউইয়র্ক এবং ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়। প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলীয় নেত্রীর সাথে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের টেলিফোন সংলাপের পর এ সফরকে তাত্পর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারানকোর আসন্ন বাংলাদেশ সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে সফরের বিস্তারিত জানাতে ওই কর্মকর্তা অস্বীকৃতি জানান। নিউইয়র্কের একটি কূটনৈতিক সূত্র গতকাল জানিয়েছে, বান কি মুন দক্ষিণ কোরিয়া সফরে থাকা অবস্থায় ঢাকায় দু নেত্রীকে টেলিফোন করে আগামী নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা করার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গত মে মাসে তারানকো ঢাকা সফর করে যাওয়ার পর বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে মহাসচিবের কাছে একটি রিপোর্ট দিয়েছেন। এ রিপোর্টের ভিত্তিতেই মহাসচিব দু নেত্রীকে ফোন করে রাজনৈতিক সমঝোতার আহ্বান জানান। অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনের উপায় নিয়ে আলোচনা করতে মে মাসে তিনদিন ঢাকা সফর করেছিলেন। সেসময় তিনি প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী, উপদেষ্টা, রাজনীতিবিদ, স্পিকার ও নির্বাচন কমিশনসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করেন। এবারও তিনি তাদের সাথে বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে। তবে দু পক্ষের মধ্যে কোন বিষয়ে মতানৈক্য আর কোন বিষয়ে মতৈক্য হওয়া সম্ভব সে সম্পর্কে কোনো পক্ষ থেকেই এখনো পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে নির্যাতন-নিপীড়নসহ যেসব সংবিধান পরিপন্থি কর্মকাণ্ড চলেছে সে বিষয়টিও জাতিসংঘের আমলে নেয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। এ ধরনের ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি যাতে আর না ঘটে সে লক্ষ্যে জাতিসংঘসহ প্রভাবশালী দেশগুলোর কাছে নিশ্চয়তাও চান অনেকে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন চালু হয় তখনও তা স্থায়ী ব্যবস্থা ছিলো না। সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করতে হলে সংবিধানের মধ্যে তার কাঠামোই বা কি হবে তাও কি ভেবে দেখা উচিত নয়?
গত মে মাসে বাংলাদেশ সফরশেষে তারানকো সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছিলেন, সময় খুব দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। এখনি সমঝোতায় পৌঁছাতে হবে। সেজন্য দ্রুত সংলাপে বসা দরকার। আগামী নির্বাচন সহিংসতা মুক্ত, স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য উপায়ে অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে। নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ থাকতে হবে। এখনি সমঝোতায় উপনীত না হলে এর পরিণতি কি হবে তা সবারই জানা।